‘নয়ন বন্ড আর রিফাত ফরাজী চাপাতি দিয়ে আমার স্বামী রিফাত শরীফকে কোপাতে থাকে। আর কয়েকজন পাশে দাঁড়িয়ে দেখতে থাকে। আমি প্রাণপণ চেষ্টা করেও রিফাতকে বাঁচাতে পারিনি,’ এভাবেই বরগুনায় ঘটে যাওয়া রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিচ্ছিলেন তার স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি। স্ত্রীকে কলেজে পৌঁছে দিতে গিয়ে প্রকাশ্য দিবালোকে দুর্বৃত্তের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে মৃত্যু হয় রিফাতের। স্ত্রীকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় এই হত্যাকাণ্ড ঘটলো দেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় জেলা শহরটিতে।

ঘটনার একদিন পর বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলেন মিন্নি।

তিনি জানান, বুধবার (২৬ জুন) সকালে তাকে সঙ্গে নিয়েই বের হন রিফাত। দু’জন বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে পৌঁছালে তাদের ওপর হামলা করে দুর্বৃত্তরা।

হামলাকারীদের মধ্যে নয়ন বন্ড ও রিফাত ফরাজী নামের দুজন সরাসরি হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয় বলে জানান এই নারী।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আমার চোখের সামনেই আমার স্বামীকে কুপিয়ে হত্যা করেছে তারা। অনেক চেষ্টা করেও স্বামীকে বাঁচাতে পারিনি আমি।’

মিন্নি জানান, সকাল ৯টার দিকে বরগুনা কলেজে পৌঁছান তারা। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কলেজ থেকে বের হয়ে আসেন। বরগুনার কলেজ সড়কের ক্যালিক্স কিন্ডার গার্টেনের সামনে পৌঁছালে বেশ কয়েকজন যুবক তাদের পথ আটকায়। এদের মধ্যে রিফাত ফরাজীর ছোটভাই রিশান ফরাজীও ছিলো। কোনও কথা না বলে তারা রিফাত শরীফকে মারধর শুরু করে। আর ঠিক তখনই চাপাতি নিয়ে সেখানে পৌঁছায় নয়ন বন্ড ও রিফাত ফরাজী। এসময় রিশান ফরাজী রিফাত শরীফকে জাপটে ধরে। আর রিফাত ফরাজী ও নয়ন বন্ড তাকে চাপাতি দিয়ে কোপাতে শুরু করে।
‘আমি তাদের থামানোর অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু কিছুতেই থামাতে পারিনি। রিফাতকে উপর্যুপরি কুপিয়ে রক্তাক্ত করে চলে যায় তারা,’ বলেন আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি।

ওই ঘটনার সময় আশেপাশে কেউ এগিয়ে না এলেও হামলাকারীরা চলে যাওয়ার পর স্থানীয় লোকজন রিফাত শরীফকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে। প্রথকে তাকে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানেই রিফাত শরীফের মৃত্যু হয়।

সামাজিক মাধ্যমে এই হত্যাকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পরে। মূলধারার সংবাদমাধ্যমেও তা উঠে আসে। বৃহস্পতিবার উচ্চ আদালত এ ঘটনায় বিষ্ময় প্রকাশ করে বলেছেন, এতগুলো মানুষ দেখলেন, কেউ প্রতিবাদ করলেন না, সমাজ কোন দিকে যাচ্ছে?

সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবী বরগুনার ঘটনাটি হাইকোর্টের নজরে আনলে আদালত এ মন্তব্য করেন। এ বিষয়ে বরগুনার ডিসি ও এসপি কী পদক্ষেপ নিয়েছেন তা বৃহস্পতিবার দুপুর ২টার মধ্যে জানতেও চান বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ। প্রকাশ্যে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যায় জড়িতরা যাতে পালাতে না পারে সেজন্য সীমান্ত এলাকায় রেড অ্যালার্ট জারিরও নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিষয়টিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি জানিয়েছেন, বরগুনায় প্রকাশ্যে রিফাত নামের এক যুবককে তার স্ত্রীর সামনে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশনার কথা জানান সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ।

অন্যদিকে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, বরগুনায় রিফাত নামে এক যুবককে কুপিয়ে হত্যার ঘটনাকে তিনি সার্বিকভাবে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি বলে মনে করেন না। বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) চট্টগ্রাম বাংলাদেশ পুলিশ উইমেন নেটওয়ার্ক আয়োজিত অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here