May be an image of outdoors and treeমাহফুজুর রহমান

এক.

কেউ কেউ দাবি করছেন সিআরবি এলাকায় ইউনাইটেড হাসপাতাল করার অনুমতি দিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। হ্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দিয়েছেন। কিন্তু তাকে কি জানানো হয়েছে যে এখানে নির্ধারিত স্থানেও হাসপাতাল হলে শ পাচেকের মতো গাছ কাটা পড়বে? তাকে কি জানানো হয়েছে যে নির্ধারিত স্থানে হাসপাতাল হলে হাসপাতালের সামনে শিরিস তলায় যে সাংষ্কৃতিক অনুষ্ঠান হয় তা বন্ধ হয়ে যাবে?
শিরিস তলায় হাসপাতাল হবে না সত্য কিন্তু শিরিস তলার সামনে হাসপাতালে রোগী থাকলে সাংষ্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে কি করে?
May be an image of outdoors and monumentমাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে কি জানানো হয়েছে যে এখানে হাসপাতাল করলে চাকসু জিএস শহীদ আবদুর রবসহ সাতজন শহীদের কবর হাসপাতালের নীচে চলে যাবে? শহীদদের স্মরণে নির্মিত একটি শহীদ মিনার ভাঙ্গতে হবে? গোয়ালপাড়া যে হাসপাতাল নির্মাণের প্রস্তাবিত স্থান নয় সেটা কি প্রধানমন্ত্রী জানেন?
চাকসু জিএস শহীদ আবদুর রব
চাকসু জিএস শহীদ আবদুর রব

আমার দৃঢ় বিশ্বাস প্রধানমন্ত্রী সব সত্য জানার পর তার সিদ্ধান্ত পালটাবেন। তাই আন্দোলন জোরদার করতে হবে যাতে অবশেসে সব সত্য প্রধানমন্ত্রীর দফতরে জানাতে বাধ্য হয় যথাযথ কর্তৃপক্ষ। এরআগে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজকে মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ছিলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। কিছু জাদরেল আওয়ামী লীগ নেতা, মন্ত্রী, সংসদ সদস্যও তাই চাইছিলেন। বিএমএও তাই চেয়েছিল। আমরা কিছু লোক আন্দোলন শুরু করেছিলাম চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় করা যাবে না। মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়কে ভিন্ন স্থানে ভিন্ন প্রশাসনের অধীনে নিতে হবে। আমাদের যুক্তি ছিল মেডিক্যাল কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় করা হলে সাধারণ জনগণের বিনা মুল্যে উচ্চতর চিকিৎসার সুযোগ থাকবে না।

আমরা আমাদের বক্তব্যের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় আইনের বিভিন্ন ধারা উপধারার ব্যাখ্যা দিয়ে, সরকারি মেডিক্যাল কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় করা হলে রোগীদের ব্যায় কত পড়বে তার একটি হিসেবও দিয়েছিলাম। অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত স্মরকলিপি আকারে দেয়া আমাদের বক্তব্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌছে দিয়েছিলেন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সব সত্য জানার পর তার সকল নেতাদের মতামত আমলে না নিয়ে জনগণের কল্যানের পক্ষে অবস্থান নেন।তিনি যে সকল মেডিক্যাল কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তা বাতিল করে ভিন্ন স্থাপনায় ভিন্ন প্রশাসনের অধীনে মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। ফৌজদারহাটে নির্মিতব্য চট্টগ্রাম মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় তারই ফসল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপর আমার বিশ্বাসের ভিত এটাই।
দুই.
সিআরবি এলাকার চার পাচ শত গাছ কেটে, একটি বড় মসজিদ ভেঙ্গে, মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চাকসু জিএস আবদুর রবসহ ৮/৯ জন শহীদের কবরের উপর স্থাপিত হতে যাচ্ছে একটি বেসরকারি হাসপাতাল। এই হাসপাতালের সামনেই থাকবে সাত রাস্তামোড়ের শিরিসতলা যেখানে বাঙালি সংষ্কৃতির চর্চা হয়। বর্ষবরণসহ বিভিন্ন জাতীয় দিবসে, রবীন্দ্র, নজরুল স্মরণে এখানে বড় ধরনের অনুষ্ঠান হয়। হাসপাতালে থাকা রোগীদের সামনে আর এইসব অনুষ্ঠান করা যাবে না। হাসপাতালটির প্রয়োজনে আশে পাশে গড়ে উঠবে বিভিন্ন স্থাপনা। সিআরবি তার ঐতিহাসিক প্রাকৃতিক সৌন্দর্য হারাবে। সাংষ্কৃতিক কর্মীরা হারাবে তাদের সংষ্কৃতি চর্চার একটি উম্মুক্ত স্থান। মুক্তিযোদ্ধারা আতঙ্কে থাকবে এই ভেবে যে শহীদ আবদুর রবের মতো বড়মাপের ছাত্রনেতা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধার কবর ভেঙ্গে যদি কোন স্থাপনা হতে পারে তো তাদের কবরের উপর যে কেউ যে কোন স্থাপনা গড়ে তুলতে পারে। তাই রবভাইয়ের সাথে যারা ৬৬ সাল থেকে ৭১ সাল পর্যন্ত আন্দোলনে ছিলেন তাদের এবং দলমত নির্বিশেষে সকল মুক্তিযোদ্ধাদের এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান রক্ষা করা তাদের নৈতিক দায়িত্ব। দলমত নির্বিশেষে সকল সাংষ্কৃতিক সংগঠনগুলোকে এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। পরিবেশ রক্ষার জন্য সকল পরিবেশবাদী সংগঠনসহ জনগণকে এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর কাজতো জনগণের স্বার্থে আন্দোলন করা ও কথা বলা। তাই সকল রাজনৈতিকদলগুলোকে এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও তো জনগণের স্বার্থে রাজনীতি করেন। তিনি নিশ্চয়ই চান না শহীদের কবর ভেঙ্গে, পরিবেশ ধ্বংস করে, সাংষ্কৃতিক কর্মকান্ড বন্ধ করে দিয়ে একটি হাসাপাতাল বা অন্য কোন স্থাপনা গড়ে উঠুক। আমরা হাসপাতালটির অনুমোদন বাতিলের পক্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত আশা করছি।
May be an image of textতিন.
আমরা ক্ষমাপ্রার্থী শহীদ আবদুর রব ভাই
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ-চাকসুর প্রথম নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক আবদুর রব ভাই আমরা ক্ষমাপ্রার্থী।আপনি চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন।৬দফা,১১ দফা আন্দোলনের নেতা ছিলেন। তারো পূর্বে ৬২ ছাত্র আন্দোলনের কর্মী ছিলেন্ সর্বশেষ চাকসু জিএস ছিলেন। আপনার বক্তৃতা আমরা শুনেছি। ৬ দফাকে জনপ্রিয় করতে অনন্য ভুমিকা রেখেছেন।৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বর্তমান চুয়েটের অদুরে আপনি শহীদ হন। সেখানেই আপনাকে কবর দেয়া হয়েছিল।বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর আপনি যেখানে বেড়ে উঠেছেন সেই রেলওয়ে হাসপাতাল কলোনীর দুই মুক্তিযোদ্ধা মরহুম রবিউল হোসেন কচি ও মোহাম্মদ ইউনুস সহ অনেকে মিলে আপনার লাশ রাঙ্গুনিয়া থেকে এনে হাসপাতাল কলোনী মসজিদের কবরস্থানে কবর দেয়। আপনার নাম ফলকসহ জরাজীর্ন কবরটি এখনো আছে।বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা সরকারের আমলেই আপনার কবর ও মসজিদটি গুড়িয়ে, আপনিসহ আরো ৭জন শহীদের স্মৃতিফলক ভেঙ্গে, আপনার নামে দেয়া শহীদ আবদুর রব কলোনী ভেঙ্গে দিয়ে বড়লোকদের জন্য বিশাল হাসপাতাল তৈরী হবে। এটা আমাদের জন্য লজ্জার, আমরা তাই ক্ষমা প্রার্থী । আমরা অবশ্য আন্দোলন করছি, চট্টগ্রামের মানুষ এর বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে। ফলাফল নিশ্চিত করতে পারছি না। তাই আমরা ক্ষমা প্রার্থী।
Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here