অধ্যাপক তৈয়্যব খান পাকিস্তানের করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের একমাত্র শিক্ষক। বর্তমানে তার একক প্রচেষ্টায়ই ছয়জন শিক্ষার্থী নিয়ে চলছে বিভাগটি।

নিজের কার্যালয়কক্ষের সামনে দরজার পাশে কিছু মাটির পাত্রে ছোট ছোট সবুজ গাছ রেখেছেন অধ্যাপক তৈয়্যব, যেন বাইরে থেকে দেখলে এখানটাকে জীবন্ত মনে হয়।

তার কামরার ঠিক পাশেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ। বিভাগ বলতে শুধু একটি ছোট শ্রেণিকক্ষ আর একটা গ্রন্থাগার, যেখানে রয়েছে কয়েকশ’ বই। বইগুলোর বেশিরভাগই বাংলা সাহিত্যের। বইগুলোর ওপর পড়ে থাকা ধুলো দেখেই ধারণা করা যায় বহুদিন ধরেই সেগুলোতে কারো হাত পড়েনি।

গ্রন্থাগারে ঢুকলে একজন গ্রন্থাগারিকের সহায়তার প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু বিগত কয়েক বছর এ গ্রন্থাগারের জন্য কোনো গ্রন্থাগারিক নিয়োগ দেয়নি বিশ্ববিদ্যালয়।

১৯৫১ সালে স্থাপিত এ বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগ চালু হয় ১৯৫৩ সালে। তবে বর্তমানে এ বিভাগই বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে ছোট বিভাগ। বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হলেও এ বিভাগটিকে টিকিয়ে রেখেছেন তৈয়্যব খান। এ বিভাগ থেকে স্নাতক, স্নাতোকত্তরসহ পিএইচডি ডিগ্রি পর্যন্ত নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।

যদিও সব বিভাগকেই সমান গুরুত্ব দিয়ে প্রচারণা চালানো হয়- এমনটাই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি। তবে বাংলা বিভাগের বর্তমান অবস্থা দেখে সে দাবির সত্যাসত্য সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।

বর্তমানে এ বিভাগে অর্ধয়নরত ছয় শিক্ষার্থীর মধ্যে স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী দুইজন। তারা হলেন- হাসান মুহাম্মাদ উমার এবং ইয়াসমিন সিরাজ। এছাড়া বাকি চারজনের মধ্যে সেজাদ সিরাজ, জামিল আহমেদ ও আরিব আহমেদ স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। আর এ বছরই স্নাতক প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়েছেন মুহাম্মাদ ফুরকান। এদের মধ্যে ইয়াসমিন ও সেজাদ ভাই-বোন। তারা বাঙালি এবং বাংলাতেই কথা বলেন। বাকি চারজনের মধ্যে একজন সিন্ধি আর অপর তিনজন উর্দুতেই কথা বলেন।

প্রতি সেশনে এই বিভাগে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে ৮০ জন শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ থাকে। পাশাপাশি পিএইচডি ডিগ্রির আওতায় বরাদ্দ থাকে পাঁচটি আসন। এছাড়া পিএইচডি ডিগ্রিতে অধ্যয়নরতদের তত্ত্বাবধানে একজন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার অনুমোদনও দিয়েছে দেশটির উচ্চ শিক্ষা কমিশন। এত সুবিধা থাকার পরও বিভাগটিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমছেই।

এ ব্যাপারে অধ্যাপক তৈয়্যব খান জানান, বাংলায় পড়লে চাকরি পাওয়া যাবে না- এমন একটা ধারণা এখানকার মানুষের মধ্যে রয়েছে। এখন সবাই যে বিষয়ে পড়লে চাকরি পাওয়া যাবে, এমন বিষয়ে পড়তে চায়। অন্য কোনো ভাষা পড়ায় তাদের আগ্রহও কম। এছাড়া অন্য ভাষার লোকেরা বাংলা পড়তে আসবে- এমনটাও আশা করা যায় না।

তবে এখানে অনেক বাঙালিও থাকে, এমনটা উল্লেখ করে অধ্যাপক তৈয়্যব খান বলেন, এখানে যে বাঙালিরা থাকে তারা সুবিধাবঞ্চিত। তাদের অনেকের এখানে থাকার অনুমোদন পর্যন্তও নেই। ফলে তারা প্রাথমিক শিক্ষাও পায় না। আর বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠতো দূরের কথা।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here