অনলাইন ডেক্স : ধূমকেতুর মতো ঔজ্জ্বল্য নিয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটে আগমন তার। পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি ম্যাচ দিয়ে হয়েছিল আন্তর্জাতিক অভিষেক। সেই ম্যাচেই করেছিলেন নজরকাড়া বোলিং। তবে ওয়ানডে ক্রিকেটে আবির্ভাবটা ছিল রীতিমতো রাজকীয়। প্রথম ম্যাচে পাঁচ উইকেট, পরের ম্যাচ ছয় উইকেট- ভারতের বিপক্ষে তিন ম্যাচ সিরিজ জয়ে ১৩ উইকেট নিয়ে রীতিমতো সোরগোল ফেলে দিয়েছিলেন। কিন্তু ধূমকেতুর মতোই যেন একটা সময় আস্তে আস্তে কমেছে মুস্তাফিজের বোলিং-শৌর্য।

৪৬ ওয়ানডেতে ৮৩ উইকেট, এই পরিসংখ্যান শুরুর সেই মুস্তাফিজের জন্য একেবারেই বেমানান। তাতে অবশ্য চোট-আঘাতের দায় অনেকখানি। তবে নিজের প্রথম বিশ্বকাপে নামার আগে আবারও ছন্দে ফেরার আভাস দিয়েছেন মুস্তাফিজ। ক্রিকেটের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ আসরে এবার নিজেকে চেনানোর পালা এই বাঁহাতি পেসারের।

মুস্তাফিজের বলে আগের সেই ধার আছে কি-না, এখনও মুস্তাফিজ শুরুর দিনগুলোর মতো সমান কার্যকর কি-না- এই প্রশ্নটা বাংলাদেশের ক্রিকেটে ঘুরপাক খাচ্ছে বেশ কিছু সময় ধরেই। তার কাটার, স্লোয়ারে প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানরা যে এখন আর ঠিক আগের মতো খাবি খান না, সেটাও খালি চোখেই ধরা পড়ে। মাঝে লম্বা সময় চোটের কারণে বোলিংয়ে ধার কমেছিল স্বাভাবিকভাবেই, গতিও নেমে এসেছিল অনেকখানি। এরপর মাঝে মধ্যে দারুণ কিছু পারফরম্যান্স দিলেও ধারাবাহিকতাটা যেন হারিয়ে ফেলেছিলেন এই পেসার। এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে নিউজিল্যান্ড সফরে ডানেডিনের ম্যাচে তো ক্যারিয়ারের সবচেয়ে খরুচে বোলিংও করে ফেলেছিলেন। দশ ওভারে রান দিয়েছিলেন ৯৩।

তবে সর্বশেষ কয়েকদিনের পারফরম্যান্সে আবারও আশা জাগাচ্ছেন তিনি। আয়ারল্যান্ডের ত্রিদেশীয় সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এক ম্যাচে পেয়েছেন ৪ উইকেট। আর কার্ডিফে ভারতের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে যেন অনেকদিন পর দেখা দিয়েছিলেন সেই পুরনো মুস্তাফিজ। ১৪০-এর আশপাশে গতিতে বল করেছেন নিয়মিত, লাইন-লেন্থ ধরে রেখে বোলিংটাও করেছেন আগ্রাসী। যা দেখে দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা ফেলেছেন স্বস্তির নিঃশ্বাস। ম্যাচটা বাংলাদেশ ৯৫ রানের বড় ব্যবধানে হারলেও মুস্তাফিজের ওই বোলিংটা মাশরাফিকে দিয়েছে অনেকখানি স্বস্তি। ম্যাচশেষে তিনি বলেন, ‘মুস্তাফিজ এমনভাবে বোলিং করে যেতে পারলে আমাদের পেস আক্রমণের চেহারাটাই পাল্টে যায়।’

বিশ্বকাপে মুস্তাফিজ নিজের এই ছন্দ ধরে রাখতে পারবেন বলে আশাবাদী দলের বোলিং কোচ কোর্টনি ওয়ালশও। কিংবদন্তি এই পেসার মুস্তাফিজকে দেখছেন বেশ কয়েক বছর ধরে। চোটের কারণে যে মাঝের সময়টায় মুস্তাফিজ নিজের সেরাটা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন, সেটা তার অভিজ্ঞ চোখে ঠিকই ধরা দিয়েছে। আর এবার তার চোখে ধরা দিচ্ছে মুস্তাফিজের আস্তে আস্তে ফিরে আসাটা। সাংবাদিকদের সামনে তো তিনি একরকম বলেই ফেললেন, ‘এই বিশ্বকাপেই মুস্তাফিজ নিজের সেরাটা ফিরে পাবে।’

সেই সেরাটা যদি ফিরে পান, যদি ফিরে আসে তার সেই সেরা সময়টা- তাহলে সবচেয়ে বেশি খুশি হবেন মুস্তাফিজ নিজেই। আর সেটা হলে- ধূমকেতু নয়, বরং এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় তারার নাম হতে পারে মুস্তাফিজ

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here