মুসল্লির কণ্ঠে ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক। ইন্নাল হামদা ওয়ান নিয়মাতা লাকা ওয়াল মুলক। লা শারিকা লাক্’ (আমি হাজির, হে আল্লাহ আমি হাজির, তোমার কোনো শরিক নেই, সব প্রশংসা ও নিয়ামত শুধু তোমারই, সব সাম্রাজ্যও তোমার) ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠেছে সৌদি আরবের মক্কার আরাফাতের ময়দান। এই ধ্বনিই ঘোষণা দিচ্ছে মহান আল্লাহতায়ালার একত্ববাদ ও শ্রেষ্ঠত্ববাদের কথা।

শনিবার (১০ আগস্ট) সূর্যোদয় থেকে আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করে হজের মূল এ আনুষ্ঠানিকতা সারতে শুরু করেছেন সারাবিশ্বের প্রায় ১৮০টি দেশের ২০ লাখেরও বেশি ধর্মপ্রাণ মুসলমান। কাফনের কাপড়ের মতো সাদা দু’টুকরো ইহরামের কাপড় পরে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি ও সান্নিধ্য লাভের জন্য ব্যাকুল হৃদয়ের এ প্রার্থনা চলবে সূর্যাস্ত পর্যন্ত।

ইসলামের মূল পাঁচটি স্তম্ভের একটি হজ। আর্থিক ও শারীরিকভাবে সমর্থ পুরুষ ও নারীর জন্য জীবনে অন্তত একবার হজ পালন ফরজ। বাংলাদেশ থেকে এবার হজে গেছেন ১ লাখ ২৭ হাজারের বেশি মুসল্লি।

অবশ্য শুক্রবার (৯ আগস্ট) থেকেই শুরু হয়েছে হজের আনুষ্ঠানিকতা। সেদিন মিনায় অবস্থান করে রাতেই আরাফাতের ময়দানের দিকে যাত্রা করেন মুসল্লিরা। মূলত জিলহজের ৯ তারিখে আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করাই হজ। আরাফাতের ময়দানে হাজিরা জড়ো হয়ে কেউ পাহাড়ের কিনারে, কেউ অন্য কোনো সুবিধাজনক জায়গায় বসে ইবাদত শুরু করেছেন। মসজিদে নামিরা থেকে লাখ লাখ মুসল্লির সামনে হজের খুতবা পড়বেন শায়খ মুহাম্মদ বিন হাসান আলে আশ-শায়খ। খুতবা শোনা হজের অন্যতম বিধানও।

খুতবা শেষে এক আজানে দুই ইকামতে জোহর ও আসরের নামাজ আদায় করবেন হাজিরা। সূর্যাস্তের পর আরাফাত থেকে মুজদালিফার ময়দানে যাবেন তারা। সেখানে হাজিরা মাগরিব ও এশার নামাজ আদায় করবেন। মুজদালিফায় খোলা আকাশের নিচে সারারাত অবস্থানের পর রোববার (১১ আগস্ট) শয়তানের স্তম্ভে নিক্ষেপের জন্য পাথর সংগ্রহ করবেন মুসল্লিরা। ফজরের নামাজ শেষে বড় জামারায় (প্রতীকী বড় শয়তান) পাথর নিক্ষেপ করতে মিনায় যাবেন তারা।

শয়তানকে সাতটি পাথর মারার পর হাজিরা সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টি অর্জনে পশু কোরবানি দিয়ে মাথা মুণ্ডাবেন। সেলাইবিহীন দুই টুকরো কাপড় বদল করবেন। এরপর স্বাভাবিক পোশাক পরে মিনা থেকে মক্কায় গিয়ে পবিত্র কাবা শরিফ বিদায়ী তাওয়াফ করবেন। অবশ্য মক্কায় গিয়েই হজযাত্রীরা প্রথমে একবার পবিত্র কাবা ঘর তাওয়াফ করেন। বিদায়ী তাওয়াফের পর ইহরাম ত্যাগ করার কাজ সম্পন্ন করবেন হাজিরা। কাবার সামনের দুই পাহাড় সাফা ও মারওয়ায় সাঈ (সাতবার দৌড়াবেন) করবেন তারা। সেখান থেকে তারা আবার মিনায় যাবেন। মিনায় যতদিন থাকবেন, ততদিন তিনটি (বড়, মধ্যম, ছোট) শয়তানকে ২১টি পাথর মারবেন।

বছরের নির্দিষ্ট সময়ে আল্লাহর ঘর পবিত্র কাবা শরিফকে কেন্দ্র করে বিশ্বের মুসলমানরা হজ পালন করে থাকেন। ভাষা-বর্ণ, জাতি-গোষ্ঠীসহ অন্যান্য বাহ্যিক বৈচিত্র্য ও পার্থক্য থাকলেও আকিদা-বিশ্বাস ও ধর্মের ক্ষেত্রে সব মুসলমান এক ও অভিন্ন। সবার কণ্ঠে দৃপ্তস্বরে ধ্বনিত হয় তাওহিদের অমিয় বাণী। মানবেতিহাসের সূচনালগ্ন থেকে পবিত্র কাবাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে আল্লাহবিশ্বাসী জনগোষ্ঠীর বৃহত্তর ঐক্য ও সংহতি। এখান থেকেই বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে হিদায়াতের আলো ও দাওয়াতের পয়গাম।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here