আলোকিত ডেস্ক: হরহামেশাই বেড়েছে প্রকৃতির হেঁয়ালি আচরণ। পৃথিবীর সব অঞ্চলই বলি হচ্ছে কোনো না কোনো দুর্যোগের। আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন বিগত কয়েক দশকের চেয়ে সাম্প্রতিক সময়ে প্রকৃতির আগ্রাসন অনেক বেশি। এসবের জন্য নির্দ্বিধায় দায়ী করা যায় মনুষ্যসৃষ্ট কারণে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ও জলবায়ু পরিবর্তনকে।

ভূমিকম্প ও অগ্ন্যুৎপাত

চলতি বছরের জুলাইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া ৬.৪ মাত্রার ভূকম্পনের শিকার হয়। এর একদিন পরেই আঘাত হানে ৭.১ মাত্রার আরও একটি ভূমিকম্প। যেটি ছিল বিগত ২০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী। এছাড়া অনুভূত হয়েছে অন্তত ১৬টি আফটার শক। গবেষকরা বলছেন, ওই অঞ্চলের ফল্ট লাইন আগের চেয়ে বড় হচ্ছে। আগামী দিনে ভূমিকম্পের সম্ভাবনা তাই বাড়বে বৈকি কমবে না

এবার ধরুন ইতালির কথা। সেখানের স্ট্রমবলি দ্বীপের আগ্নেয়গিরি অগ্ন্যুৎপাত ঘটিয়েছে। আশেপাশের দুই কিলোমিটার আকাশ ধোঁয়ায় ছেয়ে গেছে। প্রচণ্ড বিস্ফোরণে ছুড়ে পড়ছে পাথর। স্থানীয়রা পুরো বিষয়টি নরক বলে অভিহিত করেছেন।

তাপমাত্রা বৃদ্ধি

এ বছর তাপমাত্রার রেকর্ড ছাড়িয়েছে পৃথিবীর অনেক দেশেই। গত ৮ জুন কুয়েতে পৃথিবীর সর্বোচ্চ ৬৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, ইউরোপ জুড়েও বয়েছে তীব্র তাপদাহ। গত ২৮ জুন ফ্রান্সের দক্ষিণাঞ্চলের শহর গ্যালারগস-লি-মনটাক্সে রেকর্ড করা হয়েছে সর্বোচ্চ ৪৫.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা। এছাড়া, তাপমাত্রা বৃদ্ধি অব্যাহত আছে নর্ডিক রাষ্ট্রগুলোতেও।

এবার ধরুন গ্রিনল্যান্ডের কথা। গত ১৩ জুন একদিনেই সেখানে ২ বিলিয়ন টনেরও বেশি বরফ গলেছে। যা আগে কখনো ঘটেনি। আবহাওয়াবিদদের মতে যা অস্বাভাবিক ও হুমকির।

বন্যা বা সুনামি

তাপমাত্রা যেমন অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে, তেমনি ঘটছে বন্যা ও বৃষ্টির ক্ষেত্রেও। মুম্বাই এবার এক যুগে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতে ভেসেছে। বন্যায় মারা গেছে অন্তত ১৯ জন। দক্ষিণ এশিয়াজুড়ে বন্যায় মারা গেছে ২৫০ জনের বেশি। এছাড়া চীন, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইনে হয়েছে ভূমিধস।

এর পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি জাপানের কিয়োশু দ্বীপে বন্যা ও ভূমিধস থেকে বাঁচতে ১০ লাখেরও বেশি মানুষকে নিরাপদে থাকতে সতর্ক করা হয়েছে। এছাড়া আলোচনায় রয়েছে আকস্মিক বন্যায় ওয়াশিংটন ডিসি ভেসে যাওয়া ও সাইবেরিয়ায় বন্যায় ১৮ জনের মৃত্যু।

গত বছরে ইন্দোনেশিয়ায় প্রলয়ঙ্করী সুনামির কথা মনে আছে নিশ্চয়ই। প্রায় ১ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটে সেসময়।

আকাশে নতুন অস্থিরতা

হ্যারিকেন, সাইক্লোন, টাইফুন বা টর্নেডোর মতো বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগে ভয়াবহ ক্ষতি হয়নি এবছর। তবে আকাশে অস্থিরতা স্পষ্ট হচ্ছে। যেমন শুধুমাত্র ডেনেভার বিমানবন্দরে ১৩ শ’র বেশি ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে।

চলতি বছর সাইক্লোন কিনিথের আঘাতে লণ্ডভণ্ড হয়েছে মোজাম্বিক। সাইক্লোন বায়ু ও ফণী আঘাত হেনেছে ভারত-বাংলাদেশে। যথেষ্ট শক্তিশালী ঘুর্ণিঝড় হওয়া সত্ত্বেও শুধুমাত্র সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ায় প্রাণহানি হয়েছে অনেক কম।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here