ঢাকার পর চট্টগ্রামেও প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুত করোনাকালীন সহায়তার চেক পেলেন সাংবাদিকরা। শুক্রবার বিকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে ১৩৬ জন সাংবাদিককে করোনাকালীন সহায়তার চেক তুলে দেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। এর বাইরেও এসময় চট্টগ্রামের ২৫ জন সাংবাদিককে বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের নিয়মিত সহায়তার চেক তুলে দেয়া হয়েছে।

চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের আয়োজিত চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, করোনায় সারা বিশ্ব যখন পর্যদুস্থ তখন শুরু থেকেই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জনগণের শারীরিক সুরক্ষার পাশাপাশি খেটে খাওয়া ২০ শতাংশ দরিদ্র মানুষের জন্য ত্রাণ তৎপরতা শুরু করেছেন। অনেক বিশেষজ্ঞ এসময় করোনা নিয়ে নানা মতামত দিয়েছেন। কিন্তু সকলের মতামত ভুল প্রমাণিত হয়েছে। বাংলাদেশে গেল সাড়ে তিনমাসে একজন মানুষও না খেয়ে মৃত্যুবরণ করেনি। অনেকে আশা করেনি এরকম সরকারি সাহায্য দেয়া হবে। বাংলাদেশে ৭ কোটি মানুষ সরাসরি ত্রাণ সহায়তা পেয়েছে।

হাছান মাহমুদ বলেন, কেবল সরকার নয় রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও ১ কোটি ২৫ লাখ মানুষকে ত্রাণ দেয়া হয়েছে। অনেক মন্ত্রী-এমপি আক্রান্ত, দলের কেন্দ্রীয় তিন নেতা মৃত্যুবরণ করেছেন যারা ত্রাণ তৎপরতায় যুক্ত ছিলেন।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, করোনা মোকাবেলায় পৃথিবীর সমৃদ্ধশালী রাষ্ট্রগুলো তাদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আর সামরিক শক্তির কোন কিছুই কাজে লাগাতে পারছে না। একে অপরের সঙ্গে যুদ্ধ করার জন্য বিপূল অর্থ যারা ব্যয় করেছে ক্ষুদ্র ভাইরাস তাদের অসহায় করে দিয়েছে। আমাদের গভীরভাবে ভাবা দরকার আমরা সামরিক ব্যয় বাড়াবো নাকি মানুষের সুরক্ষা ব্যয় বাড়াবো।

প্রধান অতিথির বক্তব্য ইউরোপ আমেরিকার পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশগুলো থেকেও বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতি ভালো বলে মন্তব্য করেন তথ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, অনেকে অনেক কথা বলেন। পৃথিবীর কোন দেশ করোনা মোকাবেলায় প্রস্তুত ছিলো না। চীন তো প্রথমে স্বীকারই করেনি। আমরা সীমিত সামর্থ্য নিয়ে মোকাবেলা করছি। আমাদের মৃত্যুর হার ভারত পাকিস্থানের চেয়ে কম। ইউরোপের চেয়ে তো অনেক কম। যারে দেখতে নারি, তার চলন বাঁকা সেই মনোবৃত্তি থেকে সমালোচনা উচিত নয়।

সাংবাদিকদের সহায়তা প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, শুরুতে করোনাকালীন সহায়তার জন্য কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে ২ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিলো। পরে আরও ২ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সবমিলিয়ে এখন ৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা সাংবাদিকদের সহায়তার জন্য বরাদ্দ। প্রথম ধাপে দেড় কোটি টাকার মতো বিতরণ করা হচ্ছে। পরে বাকি অর্থ বিতরণ করা হবে।

করোনাকালীন কঠিন সময়ে সাংবাদিকদের চাকুরিচ্যুতিকে অমানবিক উল্লেখ করেন তথ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, অনেক চ্যালেঞ্জের মধ্যে আমরা নবম ওয়েজ বোর্ড ঘোষণা করেছি। কিন্তু সম্পাদকরা তা বাস্থবায়নে এগিয়ে আসেনি যা দু:খজনক। করোনা আসার পর আমরা অনুরোধ করে আসছিলাম পাওনা পরিশোধ করা আর চাকুরিচ্যুতি না করার ব্যাপারে। মালিকরা বলছেন নিজেদের অসুবিধার কথা। কিন্তু মালিকদের শুধু অসুবিধা না করোনা পরিস্থিতিতে সুবিধাও আছে। কারণ আগের চেয়ে অনেক কম পত্রিকা ছাপাতে হচ্ছে। যার কারণে ছাপা না হওয়া পত্রিকার প্রতি কপিতে ১৫ থেকে ২০ টাকা বাড়তি ভর্তুকি দিতে হচ্ছে না। এতকিছুর পরও মানবিকতা না দেখানো দু:খজনক। মানবিকভাবে বিবেচনা করলেই সব সমস্যা সমাধান হয়ে যেতো।

চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মোহাম্মদ আলীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক ম. শামসুল ইসলামের সঞ্চালনায় চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজে’র সহসভাপতি রিয়াজ হায়দার চৌধুরী, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব সভাপতি আলহাজ্ব আলী আব্বাস, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ, বিএফইউজে’র যুগ্ম মহাসচিব মহসীন কাজী প্রমুখ।

করোনাকালীন সহায়তার চেকে প্রতিজনকে দশ হাজার টাকা করে অর্থ সহায়তা দেয়া হয়েছে। আর বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট্রের চেকে চট্টগ্রামের ২৫ জন সাংবাদিক ৫০ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা পর্যন্ত পেয়েছেন।

#সিইউজের প্রেস বিজ্ঞপ্তি

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here