দ্রব্যের দাম বাড়লে মুদ্রাস্ফীতিও বাড়ে সমানতালে। গেল দুই অর্থবছরে মুদ্রাস্ফীতি ৫ দশমিক ৫২ শতাংশ বেড়ে ধাপে ধাপে তা ৫ দশমিক ৬২ শতাংশ হয়েছে। নভেম্বর মাসে আরও বাড়ে মুদ্রাস্ফীতি। এ সবকিছুর দায় বিশ্ববাজারে দ্রব্যমূল্যের ওঠা-নামার ওপর দিলেই হবে না কেবল; মধ্যস্বত্বভোগী ও ফড়িয়া ব্যবসায়ীদের একটি দুষ্টচক্র হরহামেশাই সারা বছর দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির জন্য সমান দায়ী। অথচ ন্যূনতম মানবিকতাবোধের চর্চা যদি মানুষের থাকত, তাহলে আমাদের কাছে এই অশনিসংকেত মরণফাঁদ হয়ে সামনে দাঁড়াত না।

আমার পরিচিত বেলাল সাহেব পেশায় বেসরকারি চাকুরে। বেতন সর্বসাকল্যে পান ৫০ হাজার। এর ভেতর দুই বেডের বাসাভাড়া, গ্যাস, ইলেকট্রনিক বিলসহ ২২ হাজার চলে যায়। বাকি টাকা দিয়ে ৬ জনের একটি পরিবারের ৩০ দিনের আহার্য, সন্তানের লেখাপড়ার খরচ, বৃদ্ধ মা-বাবার চিকিৎসা খরচ, সাংসারিক অন্যান্য খরচ, নিয়মিত হাতখরচ, প্রতিদিনের যাতায়াতভাড়া—এসব মেটাতে মাস শেষে ধারদেনা করে চলতে হয়। নিজের জীবন রঙিন করে দেখার স্বপ্ন উবে গেছে বেলাল সাহেবের সেই কবে। আর এই সামান্য টাকায় কি মাথা গোঁজার জন্য জায়গা বা ফ্ল্যাট কিনবেন, ব্যাংকে কিছু সঞ্চয় রাখবেন, বুঝতে উঠতে পারেন না তিনি।

মানুষের আয় যতটা না বেড়েছে, তার চেয়ে খরচের পরিমাণ তিন গুণ বেড়ে চলেছে দিনকে দিন। বাংলাদেশ ব্যুরো খানা আয়-ব্যয় জরিপে ২০১৫ সালের জরিপে দেখা যায়, নিম্ন আয়ের মানুষের মাসিক গড় আয় ৪ হাজার ৬১০ টাকা, যা এর আগের তুলনায় ৫৩৯ টাকা কম। বিপরীতে সবচেয়ে উচ্চ আয়ের মানুষের মাসিক গড় আয় বেড়েছে ৪৫ হাজার ১৭২ টাকা। তবে এ বিষয়ে প্রকৃত তথ্য পাওয়া দুষ্কর।

একটি রাষ্ট্রের সুখ-শান্তি নির্ভর করে সরকারের যুগোপযোগী জনগণের কল্যাণে গৃহীত সফল পরিকল্পনা এবং তার যথাযথভাবে বাস্তবায়ন। সরকারের ক্লিন ইমেজ তৈরিতেও এটি বিরাট ভূমিকা পালন করে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগামিতা রোধকল্পে সরকারের উচিত ব্যবসায়ী, আড়তদারদের সঙ্গে বসে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা করা। প্রয়োজনে মাঠপর্যায়ে এখনই সাঁড়াশি অভিযান চালানো হোক, বাড়ানো হোক কড়া নজরদারি।

পেঁয়াজ পচে। সাগরে ফেলে দেওয়া হয়। অথচ সাধারণ জনগণ খেতে পায় না। এ কেমন কথা? যেভাবে সবকিছুর দাম বাড়ানো হচ্ছে, সেভাবে তো কখনোই বেতন বাড়ানো হয় না! তাহলে মানুষ কীভাবে খেয়ে-পরে নিরাপদ বাসস্থানে বেঁচে থাকবে? সরকারের উচিত এখনই দ্রব্যমূল্যের নাগাল টেনে ধরার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের অন্তরায় চলতি কোনো ফাঁকফোকর থাকলে তা এখনই বন্ধ করা প্রয়োজন। সাধারণ মানুষকে স্বস্তিতে বাঁচতে দিন এবং জনজীবন সচল ও চলনসই রাখতে এখনই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির লাগাম টানা সময়ের দাবি।

পারভীন আকতার
শিক্ষক
রাঙ্গুনিয়া, চট্টগ্রাম

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here