অনলাইন ডেক্স   : বাঘের গর্জন শুনেছে বিশ্ব। ছবি: এএফপিএ ম্যাচ এত দূর গড়াবে, সেটা কে কল্পনা করেছিল? ২০ ওভারে ৯০ রান দরকার নিউজিল্যান্ডের। হাতে আছে ৮ উইকেট। এ ম্যাচে বাংলাদেশ তো হারছেই! কীভাবেই না সবাইকে বোকা বানাল বাংলাদেশ। এ বিশ্বকাপের সেরা ম্যাচটা প্রথম সপ্তাহেই দেখে ফেলল সবাই। বিশ্বকাপের ইতিহাসেই এ ম্যাচের নাম লিখে রাখার কথা।

ম্যাচটা এক পেশে বানিয়ে ফেলেছিলেন রস টেলর ও কেন উইলিয়ামসন। ৩২তম ওভারের প্রথম বলে কেন উইলিয়ামসন আউট হলেন। তখনো বাংলাদেশের সমর্থকদের মনে কোনো আশার দুলুনি শুরু হয়নি। কেন হবে? ১১৩ বলে ৮৫ রান দরকার নিউজিল্যান্ডের। এ রান তো টেলর কিছুক্ষণের মধ্যেই তুলে ফেলবেন।

মিরাজের ওই ওভারেই একটু নড়েচড়ে বসতে হলো। টম ল্যাথাম রানের খাতা ছক্কা দিয়ে খুলতে গিয়ে সাইফউদ্দীনের ডাইভিং ক্যাচে অক্কা পেলেন। ৪ উইকেটে ১৬২। আশার পালে তীব্র হাওয়া না লাগুক, মৃদু তো লাগলই। কিন্তু টেলর ও জিমি নিশাম সেদিকে তাকালেন না। দ্রুত রান তুলে নিতে লাগলেন দুজন।

সাকিব আল হাসানের একমাত্র ওভার ধরে রাখতে হবে, ওদিকে সাইফউদ্দিনকে দরকার স্লগ ওভারে। বল তাই উঠল মোসাদ্দেকের হাতে। মোসাদ্দেকের আপাত নিরীহ অফ স্পিনে কিছু হবে বলে মনে হচ্ছিল না। এমন সময় লেগ সাইড দিয়ে একটি বল হলো। আপাতদৃষ্টিতে ওয়াইড মনে হওয়া সে বল গ্লাভসে নিয়েই লাফিয়ে উঠলেন মুশফিক, যোগ দিলেন মোসাদ্দেক। স্মিত মুখে পল রাইফেল মাথা দোলালেন। তবু বাংলাদেশের খেলোয়াড়েরা সন্তুষ্ট না হওয়াতে আঙুলও তুললেন। ৮২ রানে ফিরলেন রস টেলর। ১৯১ রানে পঞ্চম উইকেট হারাল নিউজিল্যান্ড। অতি ক্ষীণ হলেও আশা খুঁজে ফেল বাংলাদেশ।

কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম ও নিশাম চাপ সামলালেন পাল্টা আক্রমণে। ওভার প্রতি ৪ দরকার এমন পরিস্থিতিতে ৭ করে নিয়ে নিচ্ছিলেন। ৪৩তম ওভারে সাইফউদ্দীন আশা বাড়ালেন। তাঁর স্লো বাউন্সারে আপার কাট করতে গিয়ে গ্র্যান্ডহোম বল তুলে দিলেন আকাশে। লাফিয়ে উঠে ইনিংসের প্রথম দিককার দায় কিছুটা মেটালেন মুশফিক। স্কোরকে ২১৮ থেকে নড়তে না দিয়ে নিশামও ফিরলেন পরের ওভারে। মোসাদ্দেককে ছক্কা মেরে চাপ কমাতে গিয়ে উল্টো বাড়িয়ে গেলেন এই অলরাউন্ডার।

এর পরের গল্পটা মিচেল স্যান্টনারের। এই বাঁহাতি স্পিনারে যেন ভর করল তাঁর এক পূর্বসূরির। বাংলাদেশের হাত থেকে বারবার ম্যাচ বের করে নিয়ে বিখ্যাত হয়ে ওঠা ড্যানিয়েল ভেট্টোরির মতোই বাংলাদেশের হতাশা বাড়িয়ে ম্যাট হেনরিকে নিয়ে এনে দিলেন ২০টি মহামূল্যবান রান। ম্যাচ জয়ের আশা ক্রমশ দূরে চলে যাচ্ছিল বাংলাদেশের।

৪৭তম ওভারে সাইফউদ্দীনের একটি নিচু ফুলটস হেনরির স্টাম্প নাড়িয়ে দিল। ২১ বলে ৭ রান দরকার নিউজিল্যান্ডের। ওদিকে বাংলাদেশের দরকার মাত্র ২ উইকেট। মাত্র ২ বলের মামলা! কিন্তু পর পর ২টি ওয়াইড দিলেন সাইফউদ্দীন। তাঁর শেষ বলটিকে খারাপ বলা যাবে না, কিন্তু ব্যাটের ছোঁয়া লেগে সে বল ছুটে গেল সীমানায়। স্কোর সমান।

পরের ওভারে আর যন্ত্রণা বাড়াননি স্যান্টনার। চার মেরেই ম্যাচের মীমাংসা করে দিয়েছেন। ১৭ বল বাকি রেখে ২ উইকেটে ম্যাচ হারল বাংলাদেশ। কিন্তু আজ হারের ঠিক আগ মুহূর্ত পর্যন্ত না হারার যে মানসিকতা দেখাল তাতে এ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ নিয়ে করা পরিকল্পনা গুলো আরেকবার পরখ করে দেখতে চাইবে সবাই। এ বাংলাদেশ এখন সহজে হারে না, গর্জনটা আজ শুনেছে বিশ্ব।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here