সারা বাংলার সৌজন্যে:
দেশজুড়ে খ্যাত বিনয়বাঁশী শিল্পীগোষ্ঠীর শিল্পীদের ঢোল আর বাঁশির সুর, সঙ্গে সুবিশাল মিছিলে মুহুর্মুহু স্লোগান, মাথায় সবুজ পাতার মালা জড়ানো, হাতে লাল-সবুজের পতাকা নিয়ে ‘সবুজ প্রকৃতির আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী জাগরণ যাত্রা’ হয়েছে চট্টগ্রামের সিআরবি’তে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন ব্যতিক্রমী এই কর্মসূচির আয়োজন করেন।
সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে খোরশেদ আলম সুজন বলেন, ‘আমরা চট্টগ্রামবাসী হাসপাতালের পক্ষে। চট্টগ্রামে হাসপাতাল দরকার। বিশেষ করে বন্দর-পতেঙ্গা এলাকায় একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল খুবই প্রয়োজন। কিন্তু প্রাইভেট হাসপাতাল করে চট্টগ্রামের আপামর মানুষের কোনো লাভ হবে না। হাসপাতালের নামে সিআরবি’তে ভূমি বরাদ্দ দেওয়া এবং সবুজ প্রকৃতি ধ্বংস করা আমরা মেনে নিতে পারি না। চট্টগ্রামের মানুষ আজ এই দাবিতে দলমত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ। সুতরাং সিআরবি’তে হাসপাতাল নির্মাণের প্রকল্প বাদ দিন, চট্টগ্রামবাসীই জায়গা খুঁজে দেবে হাসপাতাল করার জন্য।’
‘আমরা রাজনীতি করি জনগনের জন্য। দলের কাজ হচ্ছে জনগণের মনের কথাটি সরকারের কাছে উপস্থাপন করা। তাই সরকারকে চট্টগ্রামের মানুষের হৃদয়ের কথা জানাতে এখানে উপস্থিত হয়েছি। আমরা অবশ্যই আশা করি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রকৃতি ধ্বংস করতে দেবেন না। প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামের জনগণের পক্ষেই সিদ্ধান্ত দেবেন। আর চট্টগ্রামবাসীর কাছে আবেদন, যারা ইনিয়ে-বিনিয়ে সিআরবি’র সবুজ প্রকৃতি ধ্বংস করে হাসপাতালের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন, সেই অর্থপিশাচদের বিরুদ্ধে আপনারা রুখে দাঁড়ান’— বলেন খোরশেদ আলম সুজন
নাগরিক সমাজ
সোমবার সন্ধ্যায় প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের আগে আলোচনা সভায় অনুপম সেন বলেন, ‘সিআরবি’তে কোনোভাবেই হাসপাতাল হতে দেওয়া হবে না। এ দাবি পুরো চট্টগ্রামের। সঠিক বার্তা প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌঁছানো গেলে তিনি অবশ্যই আমাদের কথা শুনবেন। এই সিআরবি’তে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের জিএস আব্দুর রব শহিদ হয়েছিলেন। এমন একটি জায়গায় কখনোই শুধু মুনাফার জন্য একটি হাসপাতাল তৈরি হতে দিতে আমরা পারি না। আমরা প্রতিজ্ঞা করছি, এখানে এই হাসপাতাল হতে দেব না। প্রয়োজনে অনশন থেকে শুরু করে যা কিছু করার সবকিছু আমরা করব।’
প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের সময় সঙ্গীত পরিবেশন করেন উদীচী চট্টগ্রামের শিল্পীরা। এরপর প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়েছে।
সিপিবি
হাসপাতালের নামে চট্টগ্রামের সিআরবি’র প্রাণ-প্রকৃতি ধ্বংসের অপচেষ্টার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সমাবেশে করেছে জেলা কমিউনিস্ট পার্টি। সোমবার বিকেলে নগরীর সিআরবি সাত রাস্তার মাথায় এ সমাবেশ হয়।
সমাবেশে সিপিবির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমন্বয়ক মৃণাল চৌধুরী বলেন, ‘সিআরবি বৃটিশ বিরোধী সংগ্রাম আর একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বহন করে। পাহাড় ও বৃক্ষঘেরা সিআরবি চট্টগ্রামের মানুষের শান্তির নিঃশ্বাস নেওয়ার জায়গা। এই সিআরবি’কে ধ্বংসের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সিআরবি’তে পহেলা বৈশাখের আয়োজন হয়। বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড হয়। এখানে হাসপাতাল হলে সব ধরনের সাংস্কৃতিক আয়োজন চিরতরে বন্ধ হয়ে যাবে। সিআরবি’কে বাণিজ্যিক এলাকা বানানোর চক্রান্ত রুখে দিতে হবে।’
সিপিবি, চট্টগ্রাম জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অশোক সাহা বলেন, ‘রেলওয়ের নিজস্ব একটি হাসপাতাল আছে। সেটি জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে। সেই হাসপাতালকে আধুনিকায়ন না করে সরকার পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের আওতায় একটি বড়লোকের হাসপাতাল গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে রেলের জমিতে। মানুষের এত প্রতিবাদ, আপত্তি সরকার কিছুই আমলে নিচ্ছে না। আমরা সরকারকে অবিলম্বে ইউনাইটেড গ্রুপের সঙ্গে করা চুক্তি বাতিলের দাবি জানাচ্ছি। সিআরবি’র বাইরে যে কোনো জায়গায় গরীবের জন্য একটি হাসপাতাল করার দাবি জানাচ্ছি।’
সিপিবি নেতা নুরু্চ্ছফা ভূঁইয়ার পরিচালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন অমৃত বড়ুয়া, প্রমোদ বড়ুয়া, নারী নেত্রী রেখা চৌধুরী, রাহাতউল্লাহ্ জাহিদ। সংহতি জানান শিক্ষক নেতা মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, রেল শ্রমিক নেতা সাদেক আহমদ চৌধুরী, কৃষক নেতা ফরিদুল ইসলাম, সাংস্কৃতিক সংগঠক শীলা দাশগুপ্তা ও জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি অ্যানি সেন।