বিশেষ প্রতিনিধি

দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গ্রন্থাগারে ‘বঙ্গবন্ধু কর্ণার’ স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। গ্রন্থাগারে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা বই ও প্রামাণ্যচিত্রগুলো স্থান পাবে।

এ ছাড়াও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা বিভিন্ন লেখকের প্রবন্ধ, বক্তৃতা, বিবৃতি, বাণী, নির্দেশ, সাক্ষাৎকার ও ছবিও স্থান পাবে এখানে। কোন বইগুলো গ্রন্থাগারে স্থান পাবে, তা নির্ধারণ করে দেওয়া হবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে। নির্ধারিত বইয়ের তালিকা সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠানোর পর তা গ্রন্থগারে রাখতে হবে।

তবে বঙ্গবন্ধুর ওপর কতগুলো বই লেখা হয়েছে, তা নিয়ে সঠিক তথ্য সংগ্রহ করবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে সরকারের অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের সহযোগিতা চাওয়া হবে।

এ লক্ষ্যে মঙ্গলবার সকালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব জাবেদ আহমেদ।

এ ছাড়াও সভায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের প্রতিনিধি, বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) মহাপরিচালক, ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান উপস্থিত থাকবেন।

বিষয়টি স্বীকার করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের উপ-সচিব কামরুল হাসান সমকালকে বলেন, বিষয়টি একবারে প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। মঙ্গলবার আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠক ডাকা হয়েছে। সেখানে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্মের ওপর এ পর্যন্ত দেশ-বিদেশে ১৩ শতাধিক মৌলিক গ্রন্থ প্রকাশ পেয়েছে। পৃথিবীর আর কোনো দেশে একজন নেতার ওপর লেখা এতো বই প্রকাশ পায়নি বলে লেখক-প্রকাশকরা জানিয়েছেন। এ বইগুলো বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত। এ ছাড়াও বঙ্গবন্ধুর ওপর বেশ কিছুসংখ্যক বই চীনা, জাপানি, ইতালি, জার্মানি, সুইডিশসহ কয়েকটি বিদেশি ভাষায় প্রকাশিত হয়েছে। এসব বই সংগ্রহ করে গ্রন্থাগারে সংগ্রহ করার ব্যবস্থা করা হবে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানা গেছে, সম্প্রতি দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সিলেবাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাচিত ১০০ ভাষণের সংকলন সহায়ক পুস্তক হিসেবে তালিকাভুক্ত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এরই আলোকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর ওপর লেখা বই সরকারিভাবে দেওয়া হবে, নাকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিজে সংগ্রহ করবে, সে বিষয়ে আলোচনা হবে আজকের বৈঠকে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ বইটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সিলেবাসের অন্তর্ভূক্ত করার দাবি জানিয়ে আসছেন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠন ও বুদ্ধিজীবীরা। ২০০৪ সালে এ বইটি প্রকাশিত হয়। বইটিতে বঙ্গবন্ধুর শৈশব, শিক্ষা জীবনের সংগ্রাম, সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকান্ড, ভাষা আন্দোলন, ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা, যুক্তফ্রন্ট গঠন ও নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন, পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকারের বৈষম্যমূলক শাসন ও প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের বিস্তৃত বিবরণ এবং এসব বিষয়ে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার বর্ণনা রয়েছে। এ ছাড়াও বঙ্গবন্ধুর জেল জীবনের দৈনন্দিন বিবরণ বা ডায়েরির ওপর নির্ভর করে দ্বিতীয় একটি বইয়ের নাম ‘কারাগারের রোজনামচা’। শুধু বাংলায় নয়, ইংরেজিতেও বইটি প্রকাশ পেতে যাচ্ছে। দুটি সংস্করণই প্রকাশ করবে বাংলা একাডেমি। ২০১৭ সালে অমর একুশে গ্রন্থমেলায় বাংলা সংস্করণটি প্রকাশ করেছে বাংলা একাডেমি। আর ‘এই দেশ এই মাটি’ নামে আরেকটি বই রয়েছে। এ বইয়ে বঙ্গবন্ধুর লেখা পাঁচটি প্রবন্ধ, ৫২৭টি বক্তৃতা-বিবৃতি, ৩২টি বাণী, ১৭ টি নির্দেশ, ৩টি সাক্ষাৎকার, বহু উপাধিতে ভূষিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে ১২টি বিষয়, ১৭টি ঐতিহাসিক দলিলপত্র এবং ২২১টি দুর্লভ ছবি রয়েছে। এ দুটি বই গ্রন্থাগারে বাধ্যতামূলক করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে বলে জানা গেছে।

সম্প্রতি শিক্ষার্থীদের রেফারেন্স বই হিসেবে ব্যবহারের জন্য ‘শেখ হাসিনার নির্বাচিত ১০০ ভাষণ’ সংকলনটি সংগ্রহের নির্দেশ দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর। ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের উল্লেখযোগ্য ভাষণগুলো নেওয়া হয়েছে এ সংকলনে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশে গত ২৬ জুন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) সহকারী পরিচালক সাখায়েত হোসেন বিশ্বাস স্বাক্ষরিত এক চিঠির মাধ্যমে এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা জারি করা হয়।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here