অনলাইন ডেক্স : এখান থেকে ওখান থেকে সাজেশন জোগাড় করে টিক চিহ্ন দেওয়া প্রশ্নগুলো সারারাত মুখস্থ করতে গিয়ে মাথায় হাত পড়েছে শ্রীলংকা আর পাকিস্তানের! এক দল ১৩৫, আরেক দল টেনেটুনে ১০৫! বিশ্বকাপের ম্যাচ, বড় স্কোর হবে- তিনশ’ তুলতে হবেই- হেয়াটসঅ্যাপে ভাইরাল হওয়া কোয়েশ্চেন পেপার যে ফেক ছিল, এতক্ষণে তা বুঝে গেছে দুটি দলই। তাই সাজেশন পেপার কিংবা কারও দেওয়া গাইড লাইন নয়- বছরজুড়ে যতটুকু পড়া হয়েছে, সেটাই আজকের ম্যাচে রিভাইস দিয়ে নামতে চাচ্ছে বাংলাদেশ।
সংবাদ সম্মেলনে এসে মাশরাফি তাই পরিস্কার জানিয়ে দিয়েছেন- শুরুতেই চার্জ করে উইকেট খোয়ানোর ফাঁদে আমরা পা দেব না। আমরা এতদিন যা করে আসছি- সেই উইকেট ধরে রেখে নিজেদের সামর্থ্যের সর্বোচ্চটুকু দিয়েই খেলতে নামব। শুরুতেই ধুমধাড়াক্কা চলবে না… খাঁটি বাংলায় বলা মাশরাফির এই কথাগুলো বুঝতে পারছিলেন না পাশে বসা ডারবান থেকে আসা এক প্রোটিয়া সাংবাদিক। সংবাদ সম্মেলন শেষ হওয়ার পর তাকে যতটা অনুবাদ করে দেওয়া হয় তাতে তিনি বুঝতে পেরেছেন যে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই মাথা গরম না করে কৌশলী এক বাংলাদেশ নামছে আজ ওভালে।
আসলে আজ যে পিচে খেলা হচ্ছে সেখানে একবারে রোলখোলা নতুন কোনো টিস্যু নয়, এখানে আগের ম্যাচেই প্রোটিয়ারা ইংল্যান্ডের সঙ্গে খেলেছিল। মাশরাফির ধারণা, এই ইউজড পিচে স্পিনাররা বাড়তি সুবিধা পেতে পারে। তবে এটা তিনি ধরেই নিয়েছেন যে, তিনশ’র ওপর রান উঠবেই, ‘জানি না, এমন ইউজড উইকেটে কতটা স্পিন করবে, কিংবা পেসাররা কতটা সুবিধা পাবে। তবে আমার ধারণা, পাটা উইকেটে বড় স্কোর হবেই। তবে এটা ধরে নিয়েই শুরুতে চার্জ করা আমাদের ঠিক হবে না। এই বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত যা দেখা গেছে, তাতে শুরুতেই চার্জ করতে গিয়ে বিপদে পড়েছে দলগুলো।’ কিন্তু ধরেই নেওয়া হয় তিনশ’ উঠবে এবং কৌশল যদি হয় পাওয়ার প্লেতে ধুমধাড়াক্কা চার-ছক্কা থেকে বিরত থাকার- তাহলে ম্যাচটিতে জয় আসবে কীভাবে?
ঠিক এখানেই গত বছর থেকে বলে আসা তামিমদের ‘ব্র্যান্ড অব বাংলাদেশি’ ক্রিকেট মডেলের কথা মনে করিয়ে দিলেন মাশরাফি, ‘বিশ্বকাপ ম্যাচ বলে বাড়তি কিছু করার কোনো দরকার নেই আমাদের। আমরা যেভাবে কয়েক বছর ধরে খেলে আসছি, সেভাবে খেললেই চলবে। যেমন শুরুতে একজনকে ধরে রাখতে হবে। সে যদি ত্রিশ-চল্লিশ ওভার পর্যন্ত টিকে থাকে, পরে রান আসবে। আর যে শুরু থেকেই শট খেলায় স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবে তাকে সেটা চালিয়ে দিতে হবে। এখানে মাশরাফি নামটি উচ্চারণ না করলেও সামনে বসে থাকা ঢাকার সব সাংবাদিকই বুঝে যান, তামিমকে ধরে খেলতে হবে আর সৌম্যকে চালিয়ে যেতে হবে। প্রথম দশ ওভারে কোনো উইকেট না হারানোর সংকল্প থেকে নড়চড় হবে না মাশরাফির এই ব্রিগেডের।
আর এভাবেই যদি শুরুটা হয়, তাহলে মাশরাফির বিশ্বাস- ওভালে আজ জয়োধ্বনি উঠতেই পারে। তবে নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই মাশরাফির একটি অনুরোধ সমর্থকদের কাছে- আবেগটা একটু নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে, ‘এই ম্যাচে নিশ্চিতভাবেই দক্ষিণ আফ্রিকা ফেভারিট। তারা আমাদের পরীক্ষায় ফেলার চেষ্টা করবে, আমরাও তাদের চ্যালেঞ্জ জানোব। তবে এই নিয়ে অযথা চাপ নেওয়ার কোনো মানে হয় না। এটা আমাদের কাছে দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সিরিজের মতোই একটি ম্যাচ। যেখানে আমরা প্রত্যেকে বিশ্বাস করি, নিজেদের মতো খেলতে পারলেই সেটা কাজে দেবে। অযথা বাড়তি কিছু করতে যাওয়া ঠিক হবে না।’
লন্ডন থেকেই দেশের পালস মেপে সমর্থকদের অপেক্ষা করতে বলেছেন এবং নিজে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, আজ বাংলাদেশ অনেক বেশি কৌশলী হয়েই তার এবারের বিশ্বকাপ যাত্রা শুরু করবে।