গত কয়েক সপ্তাহে ঢাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার্থীদের মধ্যে একের পর এক সংঘাত এবং তার জেরে শিক্ষা কার্যক্রম বিঘ্নিত হওয়ার ঘটনায় আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন না হয়ে পারি না। এ সময় এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যেভাবে সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছে এবং পাল্টাপাল্টি হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও সম্পদ বিনষ্ট করেছে, তা এককথায় অর্থহীন।

৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার দীর্ঘ স্বৈরাচারী শাসনের অবসান ঘটানোর ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের ভূমিকা ছিল কেন্দ্রীয়। এই অভ্যুত্থান সর্বত্রই নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন–আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে। বিগত সরকার শিক্ষাঙ্গনকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করায় সামগ্রিকভাবে শিক্ষা খাতকে এমনিতেই বিস্তর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীদের অযথা হানাহানিতে শিক্ষার পরিবেশ যদি বিনষ্ট হয়, সেটি কারও জন্যই মঙ্গলজনক হতে পারে না।

দ্য ডেইলি স্টার–এর খবর জানাচ্ছে, গত সপ্তাহে ঢাকার কলেজগুলোতে সংঘাতের কারণে প্রায় ৪০ হাজার শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাল্টাপাল্টি হামলার জেরে পাঁচটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে। কলেজগুলো হলো সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল কলেজ, মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজ, ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ এবং সেন্ট গ্রেগরী উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্লাস ও নিয়মিত পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। এ ছাড়া সরকারি সোহরাওয়ার্দী কলেজ, সরকারি কবি নজরুল কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হওয়ায় আরও পাঁচটি কলেজের প্রথম ও চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীদের কয়েকটি পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।

প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটে ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের (ডিএমআরসি) ৫০ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে। ন্যাশনাল মেডিকেল ইনস্টিটিউট হাসপাতালের ক্ষতি হয়েছে ১০ কোটি টাকার। সোহরাওয়ার্দী কলেজে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১০ কোটি টাকার সম্পদ। সম্পদের ক্ষতি ছাড়াও এসব সংঘাতে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।

১৮ নভেম্বর ন্যাশনাল মেডিকেল ইনস্টিটিউট হাসপাতালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় সংঘাতের সূত্রপাত। চিকিৎসার অবহেলার অভিযোগে মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের (ডিএমআরসি) শিক্ষার্থীরা হাসপাতালটি ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেন। একপর্যায়ে শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজসহ আশপাশের কয়েকটি কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থী ডিএমআরসি কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থীকে মারধর করেন। এর জেরে ২৪ নভেম্বর ডিএমআরসি কলেজের শিক্ষার্থীরা একজোট হয়ে ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও সোহরাওয়ার্দী কলেজে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও জিনিসপত্র লুটপাট করেন। এর পরের দিন পুরান ঢাকার কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা একজোট হয়ে যাত্রাবাড়ীতে গিয়ে ডিএমআরসি কলেজে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট করেন।

সবচেয়ে হতাশাজনক বিষয় হচ্ছে, এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েই অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হামলা করেছেন। ফলে শিক্ষার্থীদের নিবৃত্ত করতে কর্তৃপক্ষ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যথেষ্ট সময় পেয়েছে; কিন্তু না কলেজ কর্তৃপক্ষ না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী—কেউই যে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে পারেনি, সেটি পরিষ্কার। এ ধরনের ঘটনায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়েরও যে রকম উদ্যোগী ভূমিকা রাখার কথা, সেটি রাখতে তারা ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। এর আগে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘাত কিংবা তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের সড়ক ও রেলপথ অবরোধের সময়ও মন্ত্রণালয়কে কার্যকর ও সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে আমরা দেখিনি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার্থীদের মধ্যকার এই সংঘাতকে শুধু আইনশৃঙ্খলাজনিত সমস্যা হিসেবে দেখলে ভুল হবে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সক্রিয় ভূমিকা নিলে পরিস্থিতি এত দূর গড়াত না বলেই আমরা মনে করি। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে দেশের মানুষ সংযত আচরণ প্রত্যাশা করে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here