বর্ণমালার মান রক্ষা ও একাত্তরের মুক্তির চেতনায়
জাতির পিতার সোনার বাংলা গড়ার সুদৃঢ় প্রত্যয় আহ্বান
একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে সন্দীপনা কেন্দ্রীয় সংসদের উদ্যোগে প্রতি বছরের ন্যায় ৫ দিনের কর্মসূচী ব্যাপক অনুষ্ঠানমালার মধ্য দিয়ে একুশে ফেব্রুয়ারি দিনভর কর্মসূচী পালনের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে। একুশের প্রত্যুষে প্রভাতফেরীর মাধ্যমে মুক্তমঞ্চে একুশের গান দিয়ে দিনের কর্মসূচীর শুভ সূচনা করা হয়। সকাল সাড়ে ৯টায় “বায়ান্ন আর একাত্তরের চেতনা ধারণ করে সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদ রুখে দিয়ে গণতন্ত্র সুসংহত করার এখনই সময়” শীর্ষক আলোচনা পর্বে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য্য, আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন সমাজ বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. অনুপম সেন।
প্রথম আলোচনা পর্বে সম্মানিত অতিথিবৃন্দের মাঝে ছিলেন- ডা. প্রভাত চন্দ্র বড়–য়া, চবি’র সিনেট সদস্য প্রফেসর ড. মনজুরুল আমিন চৌধুরী, জাপানের অনারারি কনস্যুলার বীর মুক্তিযোদ্ধা মুহম্মদ নুরুল ইসলাম, আচার্য দীনেশ চন্দ্র সেন রিসার্চ সোসাইটি ভারত এর সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক দেবকন্যা সেন, বিশিষ্ট সংগঠক এড. তপন কান্তি দাশ, সাংবাদিক বেলায়েত হোসেন, খ্যাতিমান বস্ত্র নকশা শিল্পী মিসেস রওশন আরা চৌধুরী, সংগীত পরিচালক ও গীতিকার শিল্পী এম.এ. হাশেম, আবুল কালাম আজাদ চৌধুরী, ওস্তাদ প্রমুখ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সন্দীপনা প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ও চ.বি গবেষক ভাষ্কর ডি.কে. দাশ (মামুন) ও সংগঠক জসীম উদ্দিন চৌধুরী।
সকাল সাড়ে ১১টায় প্রধান অতিথি ও অতিথিবৃন্দ সন্দীপনা ঘোষিত একুশে স্মারক সম্মাননা- ২০২০তুলে দেন-বিজ্ঞানী ড. অরূপ মিত্র, ভারত, (বিজ্ঞান চর্চা ও গবেষণা), অধ্যাপক ড. দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান বড়–য়া (শিক্ষা ও গবেষণায় অবদান), বীরমুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ নাছির (মুক্তিযুদ্ধে অবদান), আলহাজ্ব জাবেদ নজরুল ইসলাম (সমাজ, সংস্কৃতি ও ক্রীড়া উন্নয়ন), আলহাজ্ব জাবেদ নজরুল ইসলাম (সমাজ, সংস্কৃতি ও ক্রীড়া উন্নয়ন), ডাঃ আশীষ কুমার চৌধুরী (গ্রামীন চিকিৎসা শাস্ত্রে অবদান), মোহাম্মদ ইউনুছ (প্রশাসন ও সমাজ সেবায় অবদান), মোহাম্মদ বেলাল হোসেন (তৃণমূল সমাজ উন্নয়ন), অধ্যক্ষ শেখ এ রাজ্জাক রাজু (শিক্ষায় অবদান), ভানু রঞ্জুন চক্রবর্ত্তী (রাজনীতি ও সামাজিক উন্নয়নে অবদান), মোহাম্মদ হোসেন ( সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রণোদনায়), রিফাত মোস্তফা ( চলচ্চিত্র অবদান), লায়ন শেখ সামসুউদ্দিন আহমদ সিদ্দিকী পিএমজিএফ (সমাজসেবা, স্বাস্থ্য ও শিক্ষায় অবদান), এডভোকেট মোহাম্মদ ছুরত জামান (আনি পেশায় অবদান), উজ্জ্বল কান্তি বড়–য়া (সামাজ সেবায় অবদান), এন.পি সাগর (লেখালেখি ও সাহিত্যে অবদান)।
এতে রয়েছে বোয়ালখালীর তিন কৃতি জন ১) ডাঃ আশীষ কুমার চৌধুরী (গ্রামীন চিকিৎসা শাস্ত্রে অবদান), মোহাম্মদ ইউনুছ (প্রশাসন ও সমাজ সেবায় অবদান), মোহাম্মদ বেলাল হোসেন (তৃণমূল সমাজ উন্নয়ন)।
দুপুর ১২টায় সন্দীপনার একুশ মঞ্চে কবি মোঃ মনিরুজ্জামান এর কাব্য গ্রন্থ “ অনন্ত কালের নীরব দর্শক’’ গ্রন্থটির মোড়ক উন্মোচন করা হয়। এরপর দলীয় সংগীত পরিবেশন করেন- সন্দীপনা সংগীত বিভাগ, জয় বাংলা শিল্পী গোষ্ঠী । দুপুর ১টা ৩০ মিনিটে কবিতা পাঠের আসরে চট্টগ্রামের বিশিষ্ট বাচিক শিল্পীদের মাঝে অংশ নেন- সর্ব আবৃত্তিকার হাসান জাহাঙ্গীর, ইমরান ফারুকী, অনির্বাণ চৌধুরী জিকু, দেবাশীষ রুদ্র, ফারুক তাহের, বিজয় চক্রবর্ত্তী, মো: মোজাহেদুল ইসলাম, কবি তরণী কুমার সেন, কবি তাহেরা খাতুন, কবি স্বপন বড়–য়া প্রমুখ।
বিকেল ৩টায় “সর্বস্তরে বাংলাভাষার প্রচলন অনিবার্য করার গুরুত্ব” শীর্ষক সমাপনী আলোচনা ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চ.বি উপ-উপাচার্য বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক ড. শিরীণ আখতার। সন্দীপনার কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা চ.বি অধ্যাপক ড. বিকিরণ প্রসাদ বড়–য়া’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় সম্মানিত আলোচকবৃন্দের মাঝে উপস্থিত ছিলেন- সংগঠক মো: হাবিব উল্লাহ, বিশিষ্ট সংগঠক ও সমাজসেবী এম.এ. সালাম, প্রধান শিক্ষক বাবুল কান্তি দাশ, রাজনীতিবিদ আবুল কালাম আজাদ চৌধুরী, কবিয়াল আবদুল লতিফ, মো: মোশাররফ হোসেন খান রুনু, নাট্যজন এমরান হোসেন মিঠু, প্রকৌশলী অনিত কুমার নাথ, ওস্তাদ স্বপন কুমার দাশ, সংগঠক প্রণব রাজ বড়–য়া, সংগঠক সজল দাশ, সালাউদ্দিন লিটন, মো: হারুন অর রশিদ, নাট্যকর্মী জাহানারা পারুল, ওস্তাদ রতন কুমার রাহা, কবিয়াল সন্তোষ কুমার দে প্রমুখ। বিকেল সাড়ে ৪টায় বেতার টেলিভিশন শিল্পীদের পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সংগীতানুষ্ঠান “একুশের পদাবলিতে” অংশ নেন- শিল্পী এম.এ হাশেম, শিল্পী এস.এম ফরিদুল হক, শিল্পী রূপম মুৎসুদ্দী, শিল্পী বৃষ্টি দাশ, শিল্পী উজ্জ্বল সিংহ, শিল্পী হানিফুল ইসলাম, শিল্পী জামাল উদ্দিন, শিল্পী মৈত্রী আচার্য, শিল্পী ঊর্মি দাশ প্রমুখ। সন্ধ্যা ৬টায় পরিবেশিত হয় একুশের রক্তঝরা ত্যাগের মহিমায় রচিত মুনির চৌধুরী’র বিখ্যাত নাটক ‘কবর’ এর মুক প্রযোজনা। স্ক্রীপ্ট লিখন ও নির্দেশনায় যথাক্রমে- রিজোয়ান রাজন ও মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী। নাটকটি প্রযোজনায় সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন- ভাষ্কর ডি.কে. দাশ (মামুন)। সর্বশেষ পরিবেশনায় কবি গানের আসরে অংশ নেন- সর্বকবিয়াল আবদুল লতিফ, সন্তোষ কুমার দে, জয়ন্ত নাথ। সন্দীপনার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদ্যাপন পরিষদ-২০১৯ এর আহ্বায়ক মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী’র সঞ্চালনায় বক্তব্যে বক্তারা বলেন- বায়ান্নে বাঙালির অন্তরে যে মুক্তির বীজ বপন করা হয়েছিল তা মহীরুহে পরিণত হয় একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে। বিশ্বে এমন জাতি বিরল যারা মায়ের ভাষার জন্য অকাতরে প্রাণ দিয়ে নজির স্থাপন করতে জানে। সন্দীপনা ত্রিশটি বছর ধরে বাঙালির সেই শৌর্য গাঁথাকে ধারণ ও প্রাণে প্রাণে জাগরণ তুলে চলেছে। নতুন প্রজন্ম এ আদর্শে জেগে না উঠলে বায়ান্ন আর একাত্তরের এত ত্যাগ বিফলে যাবে। শুধু তা নয় এ মাটিতে ঘাপটি মেরে থাকা একাত্তরের প্রেতাত্মারা যে কোন সময়ে আবার এই স্বাধীন বাংলায় নরক গুলজার সৃষ্টি করতে পারে। তা থেকে দেশ, গণতন্ত্র, মা-মাটি-মানুষকে রক্ষার জন্য নবপ্রজন্মকে একাত্তরের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে নতুন শপথে সোনালী দিনের প্রত্যাশার আন্দোলনে রাজপথে অঙ্গিকারাবদ্ধ হতে হবে।
সর্বশেষে ৪ দিনব্যাপী কর্মসূচীর সফল অনুষ্ঠানের জন্য কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানিয়ে একুশের কর্মসূচী’র সমাপনী ঘোষণা করেন সন্দীপনার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ভাস্কর ডি.কে দাশ মামুন।
সন্দীপনার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ভাস্কর ডি.কে.দাশ (মামুন)’র সঞ্চালনায় আলোচনায় বক্তারা বলেন বাংলা ভাষার ত্যাগের মহিমা আছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার সম্মান এনেছে। এই জনপদে বৈচিত্রময় ভাষার ব্যবহার দেখা যায়। প্রমীত বাংলার বাইরেও অঞ্চল ভিত্তিক বাংলা ভাষার ব্যবহার বেশ উপভোগ্য। বহতা নদীর মত বাংলাভাষায় বেতার-টিভিতে এমন কি সংবাদ মাধ্যমে ও অনুষ্ঠান সম্প্রচার করেছে। একটি একটি ভাল উদ্যোগী, তবে আঞ্চলিক ভাষা সমূহ সংরক্ষণ, চর্চায় সংবেদনশীল হওয়া দরকার, এক্ষেত্রে নৃগোষ্টীর ভাষা সংরক্ষণের মতো আঞ্চলিক ভাষা সমূহের স্থায়ী সংরক্ষণে সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে। আঞ্চলিক বাংলা ভাষার অভিধান সৃষ্টি করতে হবে।
আলোচনায় চ.বি উপাচার্য কথা সাহিত্যিক শিরীণ আখতার বলেন- বাঙালীর বাংলা ভাষা আজ আন্তর্জাতিক একটি ভাষা। বিশ্বে বাংলা ভাষার মতো কোমল প্রাণসাথী, মধুর ভাষা মিলবে না। পাখির কুঞ্জন, নদীর কলতান, বৃষ্টির ছন্দ, এই যেন এই বাংলা ভাষার প্রবহমান ধারাকে এগিয়ে নিয়ে যায়। এই ভাষার রচিত সাহিত্য সম্ভার বাঙালীর গোলা ভরা ধান আর পুকুর ভরা মাছের ন্যায় টইটম্বুর। যারা এই ভাষার জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের স্বার্থক চিরকাল তারা বাংলা ভাষাবাসী মানুষের নিকট কিংবদন্তীতুল্য উদ্ধার পত্র হয়ে থাকবেন।