বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় এক কোটির মতো প্রবীণ রয়েছেন। প্রবীণরা সমাজের সম্পদ। আর তাই তাঁদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব।

যেহেতু প্রবীণ বয়সে বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা হয়, তাই এই সময় নানা রকম রোগ শরীরে বাসা বাঁধে। প্রবীণদের প্রচলিত রোগের বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক চিকিৎসক গুলজার হোসেন উজ্জ্বল বলেন, ‘প্রবীণ বয়সের প্রচলিত রোগের মধ্যে রয়েছে বাতজনিত রোগ; রিউমাটয়েড আরথ্রাইটিস, অস্টিওআরথ্রাইটিস, অস্টিওপরোসিস। মস্তিষ্কের নানা ধরনের অসুখ, যেমন স্ট্রোক, ডিমেনসিয়া, আলঝাইমার। হার্টের রোগের মধ্যে প্রেসার বেড়ে যাওয়া, কোলেস্টেরল বেড়ে যাওয়া। ফুসফুসের মধ্যে সিওপিডি (শ্বাসতন্ত্রের জটিল সমস্যা)। কিডনির সমস্যা (চল্লিশের পর থেকে হতে পারে), ক্যানসার। এ ছাড়া আরেকটি বড় সমস্যা হলো বিষণ্ণতা। যেহেতু এখন গড় আয়ু বেড়ে গেছে তাই অনেকগুলো রোগও এখন হচ্ছে।’

প্রবীণরা যেভাবে ভালো থাকবেন

প্রবীণদের সুস্বাস্থ্যের জন্য কিছু পরামর্শ দিয়েছেন ডা. গুলজার হোসেন উজ্জ্বল। তাঁর পরামর্শ মতে,

  • প্রবীণদের সবচেয়ে বেশি যেই জিনিসটি দরকার সেটি হলো যত্ন। নবীন যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের প্রবীণদের প্রতি আরো যত্নবান হতে হবে। প্রবীণদের সঙ্গ দিতে হবে, যত্ন দিতে হবে। আন্তরিকভাবে কাজগুলো করতে হবে।
  • রোগ অনুযায়ী চিকিৎসা দিতে হবে।
  • মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য বিনোদনের বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে হবে। প্রবীণদের সবচেয়ে বড় বিনোদন হলো পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো। এ ক্ষেত্রে পরিবারের সবাই মিলে মাঝে মাঝে বেড়াতে যাওয়া যেতে পারে বা আড্ডা দেওয়া যেতে পারে।
  • প্রবীণদের জন্য বিনোদনের জায়গা করতে হবে। সেখানে মস্তিষ্কের বুদ্ধিবৃত্তিক সৃজনশীল কর্মকাণ্ডের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
  • আমাদের দেশে প্রবীণদের তেমন হাসপাতাল নেই। প্রবীণদের জন্য আরো হাসপাতাল তৈরি করা প্রয়োজন। এ ছাড়া প্রবীণদের জন্য প্রত্যেকটি হাসপাতালে আলাদা বিভাগ থাকা প্রয়োজন।
  • প্রবীণদের অনেক বেশি সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সংক্রমণ থেকে যেন সুরক্ষিত থাকেন এই বিষয়ে নজর দিতে হবে।
  • প্রবীণদের খাবারের বিষয়ে সচেতন হতে হবে। সুষম খাবার খেতে হবে। ব্য়স হওয়ার পর পরিপাকতন্ত্রে বিভিন্ন সমস্যা হয়। তাই গুরুপাক খাবার খওয়া যাবে না। ফল, শাকসবজি ও আঁশজাতীয় খাবার বেশি খেতে হবে। পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে। লাল মাংস (খাসি, গরু ইত্যাদি) এড়িয়ে যেতে হবে। দুধ ও দুগ্ধজাতীয় খাবার বেশি খেতে হবে।
  • যাদের ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও কিডনির সমস্যা রয়েছে তাদের চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত খাবার খেতে হবে।
  • প্রবীণদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য কিছু নিয়মনীতি বা গাইডলাইন রয়েছে। সেটি মেনে চলতে হবে। বছরে দুবার হার্ট পরীক্ষা, কিডনির কার্যক্রম পরীক্ষা করতে হবে। এ ছাড়া নিয়মিত চিকিৎসকের চেকআপে থাকতে হবে। এগুলো করলে ভালো থাকা সম্ভব।
Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here