মক্কা মোকাররমা 

১। জান্নাতুল মুআল্লা : এটি মক্কার কবরস্থান। এ কবরস্থান যিয়ারত করা মোস্তাহাব। এখানে সাহাবী, তাবেয়ী ও বুযুর্গদের কবর রয়েছে। হযরত খাদীজা (রা:), হযরত আব্দুল্লাহ বিন যুবায়ের (রা:) এর কবরও এখানে রয়েছে। ২। রাসূল (সা:)-এর জন্মস্থান : এটি হারাম শরীফের পূর্ব দিকের চত্বরের পূর্বে অবস্থিত। বর্তমানে এটিকে একটি পাঠাগার বানিয়ে রাখা হয়েছে। ৩। জাবালে ছওর : এটি মক্কা শরীফ থেকে তিন মাইল দক্ষিণ পূর্বে অবস্থিত একটি পাহাড়। হিজরতের সময় নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রা:) কে সহ তিন রাত এ পাহাড়ের চূড়ায় একটি গুহায় অবস্থান করেছিলেন। যে গুহাকে ‘গারে ছওর’ বলা হয়। ৪। জাবালে নুর ও গারে হেরা : মক্কা শরীফ থেকে তিন মাইল উত্তর-পূর্ব দিকে অবস্থিত একটি পাহাড়ের নাম জাবালে নূর। এই পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত একটি গুহাকে বলা হয় ‘গারে হেরা’ বা হেরা গুহা। নবুওয়াত লাভের পূর্বে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই গুহায় ইবাদতে মগ্ন থাকতেন। এখানেই সর্বপ্রথম ওহী নাযেল হয়েছিল। ৫। মুযদালিফার ময়দান : এটি একটি ময়দান। এর এক প্রান্তে মসজিদে মাশআরুল হারাম রয়েছে। যাকে মুযদালিফার মসজিদ বলা হয়। মুয্দালিফা শব্দের অর্থ নিকটবর্তী বা রাতের অংশ। ৬। আরাফাত ময়দান : এখানে মসজিদে নামিরা রয়েছে। আরাফাত শব্দের অর্থ পরিচিতি। এক বর্ণনা মতে হযরত আদম ও হাওয়া (আ:) এর জান্নাত থেকে পৃথিবীতে ভিন্ন ভিন্ন স্থানে অবতরণের পর এ ময়দানে দুজনের মধ্যে সাক্ষাত ও পরিচিতি ঘটেছিল বলে এ ময়দানকে আরাফার ময়দান বলা হয়। আর এক বর্ণনা মতে হযরত জিব্রাঈল (আ:) হযরত ইব্রাহীম (আ:) কে হজ্জের যাবতীয় বিষয় শিক্ষা দেয়ার পর এখানে এসে জিজ্ঞাসা করেছিলেন হজ্জ সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয়ের পরিচিতি লাভ করেছেন কি? এ থেকেই এখানের নাম হয় আরাফাত। ৭। মিনা : এখানে মসজিদে খায়েফ রয়েছে, যাতে বহু নবী ইবাদত বন্দেগী করেছেন। বর্ণিত আছে এখানে ৭০ জন নবীর কবর রয়েছে। ৮। মসজিদে জিন : এখানে জিনগণ হাজির হয়ে কুরআন তিলাওয়াত শুনেছিল। আর এক বর্ণনা মতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিনদের প্রতিনিধি দলের সাথে সাক্ষাত করতে যাওয়ার সময় হযরত ইবনে মাসঊদ (রা:) কে এখানে রেখে যান। ৯। মসজিদে তানঈম/মসজিদে আয়েশা : হযরত আয়েশা (রা:) এখান থেকে উমরার ইহরাম বেধে উমরা করেছিলন। হাজীগণ সাধারণত : এখানে গিয়ে ইহরাম বেধে এসে উমরা করে থাকেন। ১০। মসজিদুর রায়াহ : রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কা বিজয়ের সময় এখানে ঝান্ডা স্থাপন করেছিলেন। ১১। মুআবাদা : রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিদায় হজ্জে মিনা থেকে মক্কায় ফেরার পথে এখানে অবস্থান করেছিলেন। ১২। জাবলে আবী কুবায়ছ : পাহাড়টি মসজিদে হারামের দক্ষিণ পূর্ব পাশে অবস্থিত, যার কিছু অংশ কেটে পূর্বের চত্বরের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, আর অবশিষ্ট অংশের উপর রাজপ্রাসাদ রয়েছে। হযরত নূহ (আ:) এর তুফানের সময় থেকে হাজরে আসওয়াদ এ পাহাড়ে উপর রাখা ছিল। প্রসিদ্ধ তাবিয়ী ‘মুজাহিদ’ এর বর্ণনা মতে আল্লাহ তাআলা পৃথিবীতে পাহাড়ের মধ্যে সর্ব প্রথম এ পাহাড়টি সৃষ্টি করেন।

মদিনা মুনাওয়ারা
(যাতে সাওয়াব লাভ করা যায় রাসূল (সা:) -এর পদ্ধতিতে হলে)।

১। মাসজিদে নববী ২। রিয়াযুল জান্নাহ ৩। মসজিদে নববীতে সাতটি উস্তুওয়ানা বা স্তম্ভ – উস্তুওয়ানা হান্নানাহ, উস্তুওয়ানা ছারীর, উস্তুওয়ানা উফূদ, উস্তুওয়ানা হারেচ, উস্তুওয়ানা আয়েশা, উস্তুওয়ানা আবূ লুবাবা (রা:), উস্তুওয়ানা জিব্রীল (আ:) ৪। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আবু বকর ও উমর(রা:)-এর রওজা। ৫। কুবা মাসজিদ- রাসূলুল্লাহ (সা:) মক্কা থেকে মদীনায় হিজরতের পর সর্বপ্রথম এই মাসজিদটি নির্মাণ করেন যা মাসজিদে নববী হতে ৩ কি:মি: দক্ষিণে অবস্থিত। বাসা (নিজ নিজ অবস্থানস্থল) থেকে ওযু করে এসে এখানে ২ রাক’আত সালাত আদায় করলে একটি উমরা করার সমপরিমাণ সাওয়াব পাওয়া যায়। রাসুলুল্লাহ (সা:) প্রতি শনিবার পাঁয়ে হেঁটে ও আরোহণ করে কুবায় আসতেন এবং দু’রাকআত সালাত আদায় করতেন। (বু: ১১৯৪,মু: ৩৩৭৬)। ৬। জান্নাতুল বাকী : মদীনা শরীফের কবরস্থানের নাম ‘জান্নাতুল বাকী’। মসজিদে নববীর সন্নিকটে পূর্ব দিকে অবস্থিত। সাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈন, আহ্লে বায়ত (নবী [সা:] এর পরিবার), আযওয়াজে মুতাহ্হারাত (নবী [সা:] এর স্ত্রীগণ খাদীজা ও মায়মূনা ব্যতীত), শোহাদা, আইম্মায়ে কেরাম ও আওলিয়ায়ে কেরাম এই কবরস্থানে সমাধিস্থ রয়েছেন। এখানে হযরত উসমান (রা:) এর মাযার থেকে যিয়ারত শুরু করুন। অনেকের মত হল হযরত আব্বাস (রা:) এর মাযার থেকে যিয়ারত শুরু করা। ৭। উহুদ যুদ্ধে শাহাদাতবরণকারী সাহাবাগণের কবরসমূহ, (৩য় হিজরী সনে উহুদ পাহাড়ে পাদদেশে এই যুদ্ধ সংঘটিত হয় যাতে রাসূলুল্লাহ (দ:) -এর দন্ত মুবারক ভেঙ্গে যায় ও মাথায় লৌহবর্মের কিয়দংশ ঢুকে যায় এবং ৭০ জন মুসলমান শাহাদত বরণ করেন। এই পাহাড়টি মাসজিদে নববী হতে ৫ কি:মি: উত্তরে অবস্থিত যার উচ্চতা ১২১ মিটার। (বি: দ্র: কোন কবরস্থানে গিয়ে মৃতব্যক্তির নিকট কোন কিছু চাওয়া শিরক যা মারাত্মক গুনাহ। তবে পরকালকে স্মরণ, উপদেশ গ্রহণ ও মৃত ব্যক্তির জন্য আল্লাহর নিকট দু’আ করার উদ্দেশ্য কবর যিয়ারত করা সুন্নাত যা রাসুলুল্লাহ (সা:) -হাদীস দ্বারা প্রমানিত)।
মদীনার ঐতিহাসিক মাসজিদ ও স্থান সমূহের কয়েকটি (যা সাওয়াব লাভের জন্য নয় শুধু ঐতিহাসিক জ্ঞানলাভের উদ্দেশ্যে পরিদর্শন করা যায়)।
১। মাসজিদে ফাত্হ। (খন্দক যুদ্ধের বিজয়ের প্রতি ইঙ্গিতস্বরূপ এর নাম। এখানে সাতটি মাসজিদ ছিল। বর্তমানে সবগুলোকে ভেঙ্গে একটি করা হয়েছে। উক্ত স্থানে রাসূল (সা:), সালামান আল ফারেসী (রা:)-এর পরামর্শ অনুযায়ী সাহাবায়ে কিরামগণকে নিয়ে বিশাল এক পরিখা খনন করেন। (এ সময় রাসূল (সা:) অধিক ক্ষুধার কারণে পেটে পাথর বেঁধে ছিলেন)। এটি ৫০০০ গজ দৈর্ঘ্য, ৯ গজ প্রস্থ আর ৭ গজ গভীর ছিল। ২। মাসজিদে ক্বিবলাতাইন। যেখানে সালাত আদায়রত অবস্থায় বাইতুল মুকাদ্দাস হতে কাবা শরীফের দিকে ক্বিবলা পরিবর্তন হয়। এজন্য এর নামকরণ করা। এটি মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অতি নিকটে। ৩। মাসজিদে মীকাত। এটি মক্কা যাওয়ার পথে মাসজিদে নববী হতে ১৪ কি:মি: দূরে অবস্থিত যা মদীনাবাসী বা এদিক দিয়ে মক্কায় আগমনকারীদের হজ্জ বা উমরা করার জন্য ইহরাম বাঁধার স্থান। ৪। মাসজিদে জুম’আ, ৫। মাসজিদে গামামাহ, ৬। মাসজিদে আবু বকর, ৭। মাসজিদে আবু যার, ৮। মাসজিদে বেলাল, ৯। মাসজিদে ইজাবাহ, ১০। মদীনা ইসলামী বিশ্ব বিদ্যালয়। এছাড়াও রয়েছে আরও অনেক দর্শনীয় স্থান।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here