কভিড-১৯ সংক্রমণের ভয়ে বলতে গেলে এখন প্রায় সবাই মাস্ক ব্যবহার করছেন। বাজারেও মিলছে হরেক রকমের মাস্ক। এরই মধ্যে মাস্ক ব্যবহারে সরকারি বিধি-নিষেধও আরোপ করা হয়েছে। এসব ভালো উদ্যোগ হলেও অনেকেই সঠিকভাবে মাস্ক ব্যবহার করছেন না। এতে ব্রণ, অ্যালার্জি, র‌্যাশের মতো নানা জটিলতা হচ্ছে।

ব্রণ প্রতিরোধ

চাপা মাস্ক দিয়ে একটানা নাক-মুখ ঢেকে রাখার ফলে ওই অংশে খুব ঘাম হয়। যাঁদের ব্রণের সমস্যা রয়েছে তাঁদের ঘামের সমস্যা বেশি হতে পারে। মুখের ওই অংশে ব্রণ বেশি থাকে, ব্যথাও হয়। এ ক্ষেত্রে স্পট ট্রিটমেন্ট সবচেয়ে ভালো কাজে দেয়। এর জন্য করণীয় হলো :

► বাইরে থেকে ঘরে ফিরেই মুখ অয়েল-ফ্রি ফেসওয়াশ দিয়ে ধুয়ে নিন।

► এবার হালকা ময়েশ্চারাইজার লাগান।

► ব্রণ নিরাময়ের যেসব ক্রিম ওষুধের দোকানে পাওয়া যায়, তা ব্যবহার করে দেখুন।

► চন্দন বেটে ব্রণের ওপর লাগালেও আরাম পাবেন।

লালচে ভাব দূর করা

বর্তমানে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যসেবীরা দীর্ঘক্ষণ হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করছেন। আবার অনেকে দীর্ঘ সময় অফিস করছেন। এই দীর্ঘ সময় একটানা মাস্ক পরার কারণে ত্বক লাল হয়ে যেতে পারে বা র‌্যাশ দেখা দিতে পারে। অনেক সময় জায়গাটা চুলকায়, আঁশের মতো চামড়া উঠতে থাকে। মাস্কের উপাদানের সঙ্গে ত্বকের বিক্রিয়ায় এমন হতে পারে। এ ক্ষেত্রে ঘরে ফিরেই মাস্ক খুলে ফেলুন। ঠাণ্ডা পানিতে মুখ ধুয়ে নিন কিছুক্ষণ। এরপর আলুর রস অথবা শসার রস মুখে লাগিয়ে কিছুক্ষণ রেখে নিন। দেখবেন ধীরে ধীরে লালচে ভাব কেটে যাবে।

ঘাম হলে করণীয়

এখন সময়টা প্রচণ্ড গরমের। তার ওপর মাস্ক পরায় নাক-মুখ ঢাকা থাকায় ঘাম একটু বেশিই হয়। কারো সর্দি-কাশির মতো কোনো উপসর্গ না থাকলে বাড়ির ভেতরে মাস্ক পরে থাকার খুব একটা প্রয়োজন নেই। বাইরে যাওয়ার সময় ব্যাগে বা পকেটে ওয়েট টিস্যু রাখুন। মুখ ঘেমে গেলে টিস্যু দিয়ে মুছে নিন। নরমাল স্যালাইন সাদা তুলায় ভিজিয়ে মুখ মুছতে পারেন। এতে মুখের ময়লা পরিষ্কার হয় ভালোভাবে।

অ্যালার্জি প্রতিরোধ

মাস্ক পরলেই অনেকের মুখে জ্বালা করে, চুলকায়, দানার মতো কিছু বেরোয়। যাঁদের অ্যালার্জির সমস্যা রয়েছে, তাঁদের এসব সমস্যা বেশি হয়। এমন সমস্যায় পড়লে মুখ সব সময় পরিষ্কার রাখুন। মুখে অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করুন। একই সঙ্গে ভালো মানের মাস্ক পরুন। প্রয়োজনে অ্যালার্জির ওষুধ খান। সমস্যা বেশি মনে হলে কোনো স্কিন চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

ত্বকের রঙে পার্থক্য

কোনো জায়গা একটানা চাপা থাকলে সে অংশে রঙের তফাত হয়। একটানা মাস্ক পরার অভ্যাস করে ফেললে মুখেও একই অবস্থা হবে। অর্থাৎ মাস্কের ঠিক নিচের অংশটুকুর রং মুখের বাকি অংশের চেয়ে কিছুটা হালকা দেখাবে। সে ক্ষেত্রে সানগ্লাস পরতে পারেন। একটা সানব্লক ব্যবহার করতে পারেন। ঘরে ফিরে মুখে ময়দা অথবা শসার রস কিছুক্ষণ রেখে ধুয়ে ফেলুন।

আরো কিছু পরামর্শ

► সব সময় পরিষ্কার ও শুকনো মাস্ক পরুন। বাইরে বেরোলে সঙ্গে দুই-তিনটি বাড়তি মাস্ক রাখুন।

► পরার আগে মুখে সানব্লক ক্রিম বা সানব্লক পাউডার মেখে নিন। এবার এর ওপর হালকা করে পাউডার লাগিয়ে নিন। এতে মুখ কম ঘামবে।

► মুখ নিয়মিত পরিষ্কার করে টোনার আর ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে রাখুন। বাইরে গেলে সানব্লক ব্যবহার করুন।

► বাসায় এসে ভালো করে মুখ ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত লেবু, মালটা, কমলা, সবুজ শাকসবজি খান।

► প্রতিদিন আট ঘণ্টার মতো ঘুমানোর চেষ্টা করুন। রাত জাগা থেকে বিরত থাকুন। ত্বক ভালো রাখতে ভালো ঘুম দরকার।

► ত্বক খুব জ্বালা করলে বা লাল হয়ে গেলে বরফের কমপ্রেস নিতে পারেন। পাতলা কাপড়ে বরফ মুড়ে লাল হয়ে যাওয়া অংশে ধীরে ধীরে লাগালে আরাম পাবেন।

-ডা. সৈয়দা সামিনা মাহজাবিন চর্ম ও যৌন বিভাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতাল, রাজারবাগ, ঢাকা

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here