সোমবার বিকাল। বোয়ালখালীর বিভিন্ন এলাকায় গলি কিংবা বড় রাস্তার মোড়, ফুটপাত, কাঁচা বাজার, মার্কেট আর বাসস্ট্যান্ডে প্রায় একই রকম দৃশ্য। ছোট ছোট ভাগা দিয়ে মাংস বিক্রি করছেন নিম্ন আয়ের মানুষ, মৌসুমি কসাই, টোকাই আর ভিক্ষুকরা। মূলত সারাদিন সংগ্রহ করা টুকরো টুকরো কোরবানির মাংসের একটা অংশ বিক্রি করতে ছোট ছোট এসব হাট বসিয়েছেন তারা।
বলতে গেলে ঈদ উল আজহায় বোয়ালখালীর বিভিন্ন এলাকায় প্রতিবছর এমনই দৃশ্য দেখা যায়। এবছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। বোয়ালখালীর বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন স্থানে বসে কোরবানির মাংস বিক্রি করছেন তারা। নতুন কেউ দেখলে মনে করবেন, এ যেন মাংস বিক্রির হাট ।
ভ্রাম্যমাণ এসব হাটে ক্রেতাও আছে বেশ। পাড়া-মহল্লা, ফুটপাত কিংবা রেললাইন যে যেখানে সুযোগ পেয়েছেন, সেখানেই বসে গেছেন এসব মাংস বিক্রি করতে। ভ্রাম্যমাণ এই হাটে মাংসের দামও বেশ কম। প্রতিকেজি মাংস বিক্রি হচ্ছে ৪শ টাকার মধ্যে।
বোয়ালখালী উপজেলা সদর, পৌর এলাকা, গোমদন্ডি ফুলতল, শাকপুরা, কালুরঘাট, অলি বেকারী, মিলিটারী পুল, দাসের দিঘীর পাড় বিভিন্ন স্থানে বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মৌসুমি কসাই হিসেবে অনেকে গরু কেটে ভাগে কিছু মাংস পেয়েছেন, কেউ আবার ভিক্ষা করে মাংস যোগাড় করেছেন। সেসব মাংস বিক্রি করেছেন। এছাড়াও অনেকেই তাদের স্বচ্ছল আত্মীয়-স্বজনদের কাছে থেকে পাওয়া মাংস টাকার প্রয়োজনে বিক্রি করছেন এই হাটে।
ভ্রাম্যমাণ এই হাটের ক্রেতাও নিম্ন আয়ের মানু্ষেরাই। যারা অন্য সময়ের চেয়ে তুলনামূলক কম দামে মাংস পেয়ে সন্তুষ্ট। তবে রাজধানীর বিভিন্ন মেসে ব্যাচেলর হিসেবে যারা থাকেন তারাও ছিলেন এই দলে।
কম দামে মাংস কিনতে পেরে সন্তুষ্ট শাহেদ আলী। তিনি বলেন, ‘ভাই আমরা নিম্ন আয়ের মানুষ। কোরবানি দেয়ার শক্তি (সামার্থ) নাই। কিন্তু পোলাপাইন (ছেলেমেয়ে) তো বুঝে না। তাদের জন্য মাংসের ব্যবস্থা করা লাগে। তাই এখানে কিনতে এসেছি।’
‘দাম মোটামুটি কম। ৪শ টাকার মধ্যেই কিনেছি। এখন বাচ্ছাদের বুঝানো যাবে।’’
একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন কামাল আহমেদ। তার তিন ছেলে-মেয়ে। তিনি বলেন, ‘ভাই আজ কোরবানির দিন। এইভাবে মাংস কিনতে খুবই লজ্জা লাগছে। তবু কিনতে হয়। কোরবানি দেয়ার মত ক্ষমতা নাই। কিন্তু ছেলে-মেয়েদের মন খারাপ। ওদের খুশি করতে ৫ কেজি মাংস কিনেছি ১৭শ টাকা দিয়ে।
মাংস বিক্রি করতে এসেছেন মৌসুমি কসাই হোসেন মিয়া। প্রায় ১০ থেকে ১২ কেজি মাংস ছিল তার কাছে।
তিনি বলেন, সকাল থেকে ৫টা গরু কেটেছি। সেখান থেকে ভাগে এই মাংস পেয়েছি। বাড়তি কিছু টাকার আশায় এখানে বিক্রি করতে এনেছি।
নিজের পাওয়া ৩ কেজি মাংস বিক্রি করতে এসেছেন রেহানা আক্তার। তিনি বলেন, বিভিন্ন বাসা-বাড়ি থেকে ভিক্ষা করে এই মাংস যোগাড় করেছি।
‘‘কিছু মাংস খাওয়ার জন্য রেখেছি। বাকিগুলো নিয়ে এসেছি বিক্রি জন্য। এতে কিছু টাকা নগদ পাওয়া যাবে। আমি প্রতি বছর এইভাবে বিক্রি করি।’’