২২ জানুয়ারি থেকে চালু হয়েছে ইলেকট্রনিক পাসপোর্ট বা ই-পাসপোর্ট। তবে, ই-পাসপোর্ট চালু হলেও বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য আগের মতই তিন রঙ এর পাসপোর্ট চালু থাকবে।
চলুন জেনে নেই কোন রঙ এর পাসপোর্ট কাদের জন্য-
পাসপোর্টের তিন রং
বিবিসি বাংলার খবরে বলা হয়েছে দেশের ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের হিসেব অনুযায়ী ২০১৯ সালে এপ্রিল মাস পর্যন্ত প্রায় আড়াই কোটি মানুষের পাসপোর্ট রয়েছে। স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৭৩ সালে পূর্ণাঙ্গ রূপে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতর প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন থেকে বাংলাদেশে মূলত তিন রঙ এর পাসপোর্ট চালু আছে, যা মূলত তিনটি ভিন্ন ধরণ ও ব্যবহার নির্দেশকারী প্রতীক হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে।
বাংলাদেশ ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের একজন পরিচালক মোহাম্মদ আবু সাঈদ বলেছেন, শুরুতে পাসপোর্ট ছিল তিন রকম, অর্ডিনারি বা সাধারণ পাসপোর্ট, স্পেশাল বা বিশেষ পাসপোর্ট এবং ডিপ্লোম্যাটিক বা কূটনৈতিক পাসপোর্ট।
বিশেষ পাসপোর্ট কেবল মাত্র ভারতে যাবার জন্য ইস্যু করা হতো বলে সেটি ইন্ডিয়ান পাসপোর্ট নামেও পরিচিত ছিল।
২০১০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশি সাধারণ পাসপোর্টের রং ছিল সবুজ, আর কূটনৈতিক পাসপোর্ট ছিল লাল রং এর। এছাড়া ইন্ডিয়ান পাসপোর্টের রংও ছিল লাল, তবে সেটি কূটনৈতিক পাসপোর্টের চেয়ে কিছুটা আলাদা রং এর।
২০১০ সালের আগ পর্যন্ত বাংলাদেশের সব পাসপোর্ট হাতে লেখা ছিল। কিন্তু ২০১০ সালে ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশন আইকাও এর নির্দেশনা অনুযায়ী মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট বা এমআরপি চালু করা হলে বিশেষ পাসপোর্ট বা কেবল ভারতে যাওয়ার পাসপোর্ট বিলুপ্ত করা হয়।
কোন পাসপোর্ট কার জন্য?
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পাসপোর্টের রং ভিন্ন ভিন্ন হয়। কিন্তু যে দেশ যে রং এরই পাসপোর্ট দিক না কেন, সেটা অবশ্যই ইন্টারন্যাশনাল সিভিল অ্যাভিয়েশন অর্গানাইজেশন আইকাও এর কাছ থেকে পাসপোর্ট এর রং আর নকশার ছাড়পত্র নিতে হয়।
তবে সাধারণভাবে পৃথিবীতে লাল, নীল, সবুজ ও কালো এই চারটি রং এর ভিন্ন ভিন্ন শেড এর হয়।
বাংলাদেশে সাধারণভাবে সবার জন্য সবুজ রং এর পাসপোর্ট চালু থাকলেও, দেশে আরো দুটি রং অর্থাৎ নীল এবং লাল পাসপোর্ট চালু রয়েছে।
কাদের জন্য কোন রঙ এর পাসপোর্ট?
সবুজ পাসপোর্ট
ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের পরিচালক সাঈদ বলেন, সবুজ পাসপোর্টকে বলা হয় অর্ডিনারি পাসপোর্ট। এই পাসপোর্ট হচ্ছে বাংলাদেশের সব সাধারণ নাগরিক এবং সরকারি চাকরিজীবীর জন্য। এক্ষেত্রে জন্মসূত্রে এবং বৈবাহিক উভয় সূত্রে বাংলাদেশের সব নাগরিকের জন্য এই সবুজ পাসপোর্ট। সবুজ পাসপোর্টে বিদেশে গমনের জন্য সংশ্লিষ্ট দেশের ভিসার প্রয়োজন হয়।
নীল পাসপোর্ট
নীল রং এর পাসপোর্টকে বলা হয় অফিসিয়াল পাসপোর্ট। সরকারি কাজে কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী দেশের বাইরে ভ্রমণ করতে হলে এই অফিসিয়াল পাসপোর্ট ব্যবহার করা হয়। এই পাসপোর্ট করার জন্য সংশ্লিষ্ট সরকারি অফিসের অনুমোদন বা গভর্নমেন্ট অর্ডার (জিও) প্রয়োজন হয়। এই নীল পাসপোর্টধারী ব্যক্তিরা অন্তত ২৭টি দেশে বিনা ভিসায় ভ্রমণ করতে পারবেন।
সাঈদ বলেন, ২০১০ সালের আগে এই নীল পাসপোর্ট ছিল না, ওই বছর পর্যন্ত সবুজ পাসপোর্টের মধ্যেই হাতে লিখে সরকারি অনুমোদন দেয়া হতো। তবে, সরকারি কাজ ছাড়া সরকারি চাকরিজীবীরা যদি বিদেশ গমন করতে চান তাহলে তারা নীল পাসপোর্ট ব্যবহার করতে পারবেন না।
লাল পাসপোর্ট
লাল পাসপোর্টকে বলা হয় ডিপ্লোম্যাটিক বা কূটনৈতিক পাসপোর্ট। এই পাসপোর্ট পাবেন রাষ্ট্রপ্রধান, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রীসভার সদস্যরা, সংসদ সদস্য এবং তাদের স্পাউস অর্থাৎ স্বামী বা স্ত্রী। সেই সঙ্গে উচ্চতর আদালতের বিচারপতি, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, পাবলিক সার্ভিস কমিশনের প্রধান, মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং বিদেশে বাংলাদেশি মিশনের কর্মকর্তারা লাল পাসপোর্ট পান।
লাল পাসপোর্ট যাদের আছে, তাদের বিদেশ ভ্রমণের জন্য কোন ভিসা প্রয়োজন হয় না। তারা সংশ্লিষ্ট দেশে অবতরণের পর অন-অ্যারাইভাল ভিসা পান। ডিপ্লোম্যাটিক বা কূটনৈতিক পাসপোর্ট সব দেশেই লাল রং এর হয়ে থাকে।