আতীয়া নওশীন
নগরের হালিশহর এলাকার বাসিন্দা হালিমা আক্তার। গেল মাসের শেষ দিকে জ্বরে আক্রান্ত হন তিনি। করোনার নমুনা পরীক্ষায় তাঁর ফলাফল নেগেটিভ আসে। চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ গ্রহণের পর সুস্থও হয়ে ওঠেন। তবে বেসরকারি চাকুরিজীবি এ নারীর জ¦রে কাবু করে ফেলে তার মাত্র ৫ বছর বয়সী শিশু আরাফাতকে। চিকিৎসকের পরামর্শানুযায়ী গত রোববার নমুনা পরীক্ষা করানো হয় এ শিশুর। এরমধ্যে মঙ্গলবার সকালে হালিমার কাছে ক্ষুদে বার্তা আসে তার একমাত্র শিশুটি করোনায় আক্রান্ত!
হালিমা আক্তার বলেন, ‘জ¦র হওয়ার পর চিকিৎসক তাকে প্রাথমিক কিছু ওষুধ দেয়। কিন্তু জ¦র বাড়তে থাকে। শুরু হয় গলা ব্যাথাও। শিশুর শরীরে করোনার খবর শুনে আমি খুবই দুশ্চিন্তায় পড়েছি। সেতো বাসার বাইরেই যায় নি। তবুও কিভাবে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হলো। বুঝতে পারছি না।’
শুধু শিশু আরাফাত নয়। স্বাস্থ্য বিভাগের হিসেবে দেখা যায়, গত বছর করোনায় শিশুদের আক্রান্তের সংখ্যা কম হলেও এবারে তা বেড়েছে কয়েকগুণ। অন্য বয়সীদের মতো হাসপাতালেও বেড়েছে করোনায় আক্রান্ত শিশু রোগীর সংখ্যা। এরমধ্যে শুধুমাত্র চলতি মাসের গেল ১৩ দিনেই প্রায় তিনশর কাছাকাছি শিশুর শরীরে করোনার সংক্রমণ পাওয়া গেছে। তবে স্বস্তির খবর হচ্ছে, এ ১৩ দিনে এখন পর্যন্ত কোন শিশুর মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের প্রাপ্ত তথ্য বলছে, চট্টগ্রামে এখন পর্যন্ত সর্বমোট ১ হাজার ৮৪৭ জন শিশু (শূন্য থেকে ১০ বছর পর্যন্ত) করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এরমধ্যে শুধুমাত্র চলতি মাসের পহেলা জুলাই থেকে ১৩ জুলাই পর্যন্ত আক্রান্ত শিশু শনাক্ত হয় ২৮৫ জন। যাদের মধ্যে ১৩৬ জন মেয়ে শিশু আর ১৪৯ জন ছেলে শিশু রয়েছে। সর্বশেষ গতকাল মঙ্গলবারে ১ হাজার ৩ জন আক্রান্তের মধ্যে ৩৮ জন শিশু রয়েছে বলে জানা গেছে।
চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, ‘আগে শিশুদের আক্রান্তের সংখ্যা খুবই কম ছিল। কিন্তু এখন তাদের শরীরেও সংক্রমণ পাওয়া যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে অবশ্যই এ বয়সীদের বাড়তি সর্তক থাকতে হবে। পুষ্টিকর খাওয়ারের পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে।’
শিশুদের করোনা আক্রান্তে জন্য মূলত অভিভাবকদের উদাসীনতাকেই দুষছেন চিকিৎসকরা। এ অবস্থায় করোনা থেকে শিশুদের রক্ষায় অভিভাবকদের সতর্ক থাকার পরামর্শ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের।
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা.আবদুর রব বলেন, ‘অভিভাবক বা বড় যারা আছেন, তারা বাইরে থেকে এসেই কোনভাবে শিশুকে আদর বা কোলে নেয়া যাবে না। আগে নিজে ভালোভাবে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিতে হবে এবং গোসল করে তারপর শিশুকে কাজে টেনে নিন। না হয় দেখা যাবে, একটু ভুলের জন্য আপনার শিশুরই ক্ষতি হবে।’
শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসির উদ্দিন মাহমুদ সিভয়েসকে বলেন, ‘এ সময়ে শিশুদের বাড়তি যতেœর পাশাপাশি ডায়েটে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, ভিটামিন সি, ডি,ক্যালসিয়াম এবং পুষ্টিকর খাবার খাওয়াতে হবে শিশুদের। বেশি করে পানি পান করা এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের অভ্যাস গড়ে তোলাও অভিভাবকের দায়িত্ব।’
বাংলাদেশে শিশুদের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রয়েছে কিনা সেটি বোঝাটাই অনেক কঠিন বলে মনে করেন শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. হেলেনা বেগম। তিনি বলেন, ‘অনেক পরিবারের মানুষেরা বুঝতেই পারে না যে তাদের বাচ্চা কোভিড আক্রান্ত কিনা। কারণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাদের কোন উপসর্গ থাকে না। যাদের জ্বর নাই, কাশি নাই, ছোট বাচ্চা হলে তো বলতেই পারে না যে গলাব্যথা হয়েছে, সে কারণে বোঝাটাই কঠিন।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে শিশুরা যেসব রোগে আক্রান্ত হয় তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে শ্বাসতন্ত্রে সংক্রমণ। আর এর উপসর্গ হচ্ছে নাক দিয়ে পানি পরা, কাশি দেয়া, ঘড়-ঘড় করে শব্দ করা, কোন কোন ক্ষেত্রে গলাব্যথা অথবা কানে ব্যথা। করোনার উপসর্গগুলোও অনেকটা একই রকম। সে কারণে সাধারণ সর্দি-কাশি নাকি শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহ নাকি করোনা তা বোঝা যায় না ‘
সৌজন্যে- সিভয়েস