বাজার থেকেও ক্রয় কিছু ওটস খাওয়ার আগে আপনাকে অবশ্যই ওটস খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জেনে নিতে হবে। নিয়মিত ওটস খেলে শরীরে নানা ধরনের পরিবর্তন পরিলক্ষিত করবেন।
তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল: দীর্ঘক্ষণ খুদা না লাগা, কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি, হার্টের দীর্ঘমেয়াদি সুস্থতা, নিয়ন্ত্রিত ওজন, স্তন ও কোলন ক্যান্সার থেকে মুক্তি, নিয়ন্ত্রিত রক্তচাপ এবং কোলেস্টেরল, ইমিউনিটি বৃদ্ধির পাশাপাশি নিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস ইত্যাদি।
পুষ্টিকর খাবার হিসেবে ওটস অনেকেই ডায়েটে পছন্দ করে থাকেন। তবে ওটস থেকে পরিপূর্ণ পুষ্টি পেতে হলে ওটস নির্দিষ্ট নিয়ম অনুসরণ করে খেতে হবে। আজকের এই পোস্টে আমরা ওটস খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। চলুন তাহলে শুরু করা যাক:
Table of Contents
ওটস কি
ওটস হলো পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ একটি খাদ্যশস্য। প্রায় চার হাজার বছর আগে ওটস এর চাষ শুরু হয়েছিল পশু খাদ্যের যোগান দেওয়ার জন্য। এই খাদ্য শস্যে অধিক পরিমাণে দ্রবীভূত আঁশ থাকায়
এবং তুলনামূলক ধীরে হজম হওয়ায় বর্তমানে এটি মানুষের জন্য অধিক পুষ্টিকর একটি খাবার। ইংরেজিতে এই খাদ্যশস্যকে Avena sativa বলা হয়ে থাকে।
ওটস এ প্রচুর পরিমাণে বেটা গ্লুকোন থাকার কারণে এটি কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। আমেরিকার প্রধান খাবার হিসেবে ব্যবহৃত ওটস থেকে কেক, বিস্কুট, পাউরুটি তৈরি করা যায়। বর্তমানে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ যেমন: পোল্যান্ড, রাশিয়া, কানাডায় ওটস প্রচুর পরিমাণে চাষ করা হয়ে থাকে। ওটসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট, ফাইবার, প্রোটিন এবং ফ্যাট রয়েছে।
ওটস খাওয়ার নিয়ম
সকলের জলখাবারে ওটস খাওয়ার প্রচলন থাকলেও বিভিন্ন সময়ে নাস্তা অথবা ভারী খাবার হিসেবে ওটস খাওয়া যেতে পারে। চলুন এক নজরে ওটস খাওয়ার নিয়ম দেখে নেওয়া যাক:
- কলা এবং দুধের সাথে মিশিয়ে স্মুদি তৈরি করে খেতে পারেন,
- আগের দিন রাতে ওটস ভিজিয়ে রেখে পরের দিন সকালে বিভিন্ন ফলের সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন,
- ওটস দিয়ে পায়েস তৈরি করে খেতে পারেন,
- ওটস দিয়ে ইডলি, রুটি, কেক এবং বিস্কুট তৈরি করে খেতে পারেন,
- ওটস এর সাথে বিভিন্ন সবজি রান্না করে খাওয়া যেতে পারে,
- ভেজানো ওটস এর সাথে সামান্য পরিমাণ লবণ এবং ভেজে রাখা ডিমের সাদা অংশ মিশিয়ে খেতে পারেন,
- ওটস এর সাথে ছোলার ডাল, বিউলি, কালো মসুর ডাল মিশিয়ে খিচুড়ি তৈরি করে খেতে পারেন,
- ওটস এর সাথে পরিমাণ মতো দই এবং মধু মিশিয়ে খেলে দ্রুত ওজন কমে,
- ওটস এর সাথে কলা এবং দুধ মিশিয়ে স্মুদি তৈরি করে খেতে পারেন।
ওটস এর উপকারিতা
ওটস এর রয়েছে নানাবিদ উপকারিতা। চলুন ওটস এর উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক:
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে
ওটস এ প্রচুর পরিমাণে বেটা-গ্লুকোন থাকায় এটি টয়লেট নরম করতে সাহায্য করে। ফলে নিয়মিত ওটস খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
ক্ষুধা কম অনুভূত হওয়া
ওটস এ প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট থাকায় এটি হজম হতে বেশি সময় লাগে। ফলে যারা ডায়েটে আছেন তারা দীর্ঘ মেয়াদি খুদার হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ওটস খাবার তালিকায় রাখতে পারেন।
হার্ট সুস্থ থাকে
ওটস রক্তে খারাপ কলেস্টেরল এর মাত্রা কমিয়ে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। ফলে হৃৎপিণ্ডের স্বাভাবিক কার্যক্রম বজায় থাকে।
মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকে
নিয়মিত সকালে ওটস খেলে মস্তিষ্কে সেরোটোনিনের মাত্রা বৃদ্ধি পায় ফলের রাগ এবং ঘুম দুটোই নিয়ন্ত্রণে থাকে।
ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে
ওটস পাকস্থলীকে সুস্থ রাখে এবং পেপটাইড ওয়াইওয়াই হরমোন নিঃসৃত করে। ফলে প্রাকৃতিক ভাবে খাবার গ্রহণের প্রবণতা কমে যায়। এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে আসে।
উপকারী ব্যাকটেরিয়ার যোগান দেয়
ওটস একটি প্রিবায়েটিক খাবার যা অন্ত্রের উপকারী ব্যাকটেরিয়ার যাবতীয় পুষ্টি সরবরাহ করে থাকে। ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকে।
স্তন ও কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধ করে
ওটসে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফাইটো নিউট্রিয়েন্ট রয়েছে যা ৪১ শতাংশ পর্যন্ত স্তন ও কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে কার্যকর।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রিত থাকে
নিয়মিত ওটস খেলে রক্তচাপ এবং হাইপারটেনশন এর প্রবণতা অনেকাংশে কমে আসে। তাই উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের জন্য ওটস খুবই উপযোগী।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে
ওটস পুরোপুরিভাবে লো ক্যালোরি ও সুগার ফ্রি হওয়ায় ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে এটি পুরোপুরি ভাবে স্বাস্থ্যকর।
বাচ্চাদের জন্য কোন ওটস ভালো
ওটস শিশুদের শরীরে পরিপূর্ণ পুষ্টির যোগান দেয়। এটি শিশুদের শরীরে খনিজ এবং ভিটামিনের ভালো উৎস হিসেবে কাজ করে। ওটস শিশুদের শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর যোগান দেয় এবং দ্রুত হজম হতে সাহায্য করে। তাছাড়া প্রতি ১০০ গ্রাম ওটসে ৬৯.৬৫ গ্রাম শর্করা এবং ৯ গ্রাম ফাইবার থাকে। প্রতি ১০০ গ্রাম ওটসে প্রোটিনের পরিমাণ ১৩.০৭ গ্রাম এবং ফ্যাটের পরিমাণ ৮ গ্রাম। বাচ্চাদের জন্য সবথেকে ভালো ওটস এর নাম হল:
- Organic baby oats,
- Cow head organic rolled oats,
- Quaker White oats,
উপরিউক্ত ওটসগুলো বিভিন্ন ফল এবং সবজির সাথে মিশিয়ে বাচ্চাদেরকে খাওয়ানো যেতে পারে।
বাচ্চাদের ওটস খাওয়ার উপকারিতা
বাচ্চাদের ওটস খাওয়ার উপকারিতা গুলো হল:
- শিশুদের ৬ মাস বয়সের পর থেকে ওটস দিলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়,
- কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থেকে বাচ্চারা মুক্তি পায়,
- শিশুদের হাড় এবং দাঁতের স্বাস্থ্য ভালো থাকে,
- শিশুদের শরীরে আইরন, জিঙ্ক, ফসফরাস এর যোগান দেয় ওটস,
- ওটস খেলে শিশুদের হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়,
- শিশুদের বিকাশ নিশ্চিত হয়।
বড়দের জন্য কোন ওটস ভালো
মনুষ্য খাদ্য হিসেবে যে ওটস বাজারে পাওয়া যায় তা প্রায় ২০ ধরনের হয়ে থাকে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রকারের ওটসগুলো হলো:
ওট গ্রোটস
বাজারে প্রাপ্ত ওট গ্রোটস ধান গাছ মাড়াই করে তৈরি করা হয়ে থাকে। বিভিন্ন ওটস এর মধ্যে এটিই সবথেকে বেশি স্বাস্থ্যকর। তবে এটি রান্না করতে প্রায় এক ঘন্টা সময় লাগে বলে মানুষের কাছে তেমন জনপ্রিয়তা পাইনি।
স্টিল কাট ওটস
ওট গ্রোটস কে ছোট করে কেটে যে ওটস তৈরি করা হয় তাকে স্টিল কাট ওটস বলা হয়ে থাকে। এই ওটসে শর্করার পরিমাণ কম থাকে বলে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি খুবই স্বাস্থ্যকর। এবং রান্না করতে ২০ থেকে ২৫ মিনিট সময় লাগে বলে মানুষের কাছে বেশ জনপ্রিয়।
রোলড ওটস
রান্না করতে সব থেকে কম সময় লাগে রোলড ওটস। এটি খুবই নরম এবং হজমে সহায়তা করার কারণে সব শ্রেণীর মানুষের কাছেই এই ওটস টি খুবই জনপ্রিয়।
উপসংহার
প্রিয় পাঠক বৃন্দ, আজকের এই পোস্টে আমরা ওটস খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। এছাড়া বড়দের জন্য কোন ওটস সবচেয়ে ভালো, বাচ্চাদের ওটস খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কেও বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে আমাদের কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না।
সর্বাধিক জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী
১) প্রতিদিন কতটুকু ওটস খাওয়া উচিত?
উঃ প্রতিদিন এক কাপ ওরস রান্না করে খাওয়া যেতে পারে। ওটস সাধারণত সকালের নাস্তায় এবং সন্ধ্যায় খাওয়ার চেষ্টা করবেন।
২)ওটস কাদের খাওয়া উচিত নয়?
উঃ যাদের গ্লুটেন থেকে সৃষ্ট এলার্জির সমস্যা রয়েছে তাদের ওটস থেকে দূরে থাকা ভালো।
৩) ওটস খেলে কি এলার্জি হয়?
উঃ সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের ওটস থেকে এলার্জি হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম থাকে। তবে যারা বিভিন্ন ধরনের এলার্জির সমস্যায় ভুগছেন তারা ওটস খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে ভুলবেন না।
৪) ওটস খেলে কি ওজন বাড়ে না কমে?
উঃ ওটস খেলে প্রাকৃতিকভাবে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে। কারণ ওটস খেলে অনেক সময় পেট ভরা থাকে এবং খাবারের চাহিদা অনেকাংশে কমে আসে। ফলে ওজন ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রিত হয়।