মনজুর আলম

বোয়ালখালী উপজেলার একেবারে শেষ সীমানায় অবসিহত একটি ইউনিয়নের নাম আহলা কড়লডেঙ্গা। যোগাযোগ ব্যবস্থা পূর্বে অনেক নাজুক থাকলেও বর্তমানে অনেকটাই ভালো। অভিযোগ রয়েছে বৃহৎ পাহাড়ি এলাকা নিয়ে গঠিত ইউনিয়নের দক্ষিণ ও মধ্য কড়লডেঙ্গা গ্রামের ছেলেমেয়েরা শিক্ষার ক্ষেত্রে এখনো অনেকটাই পিছিয়ে। এর কয়েকটা কারণের মধ্যে অন্যতম একটি কারণ দুগ্রামের কাছাকাছি কোন মাধ্যমিক বিদ্যালয় না থাকাকে দায়ী করেছেন অনেকেই। গ্রামের অনেকের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা তাদের সন্তানদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠ শেষ করে বেশি দূরত্বের কারণে হাই স্কুলে ভর্তি করাতে চান না। আবার যারা একটু সচেতন তারা সন্তানের পড়ালেখার কথা চিন্তা করে শহরে বাসা নিয়ে চলে যান। দক্ষিণ ও মধ্য কড়লডেঙ্গায় দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও কাছাকাছি কোন মাধ্যমিক বিদ্যালয় নেই।
মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অভাবে অনেক শিক্ষার্থী প্রাথমিকের পাঠ চুকিয়ে ঝরে পড়ছে। যারা প্রতিবন্ধকতাকে পাশ কাটিয়ে প্রায় ৪/৫ কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে স্কুলে যাচ্ছে তাদেরকে অনেক কষ্ট স্বীকার করতে হয় প্রতিদিনই। বিশেষ করে মেয়েদের স্কুলে আসা-যাওয়ার ভোগান্তিটাই বেশি। শীত ও গ্রীষ্মে কোনভাবে চললেও বর্ষাকালে অবর্ণনীয় কষ্ট পোহাতে হয় এসব শিক্ষার্থীদের। তবে প্রতিকূলতাকে জয় করতে অনেক অভিভাবক এখন তাদের মেয়েদের ছোটবেলা থেকেই সাইকেল চালানো শেখাচ্ছেন। এতে করে দীর্ঘ পথ পায়ে হেঁটে যাওয়ার কষ্ট থেকে তারা পরিত্রাণ পাচ্ছে।
স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, দক্ষিণ কড়লডেঙ্গার চামপা তালুকদার পাড়ায় বহু বছর আগে এলাকার শিক্ষিত যুবকেরা নিজ উদ্যোগে একটি নিম্ন মাধ্যমিক স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। কিন্তু প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে বিদ্যালয়টি দাঁড় করানো তাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। বর্তমানে প্রায় ৪/৫ কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে গ্রামের ছেলে মেয়েদের উত্তর ভূর্ষি অন্নদা জীবন উচ্চ বিদ্যালয়ে যেতে হয়। তাছাড়া বর্ষাকালে ভোগান্তির শেষ থাকে না। বৃষ্টির পানিতে স্কুলের পোশাক আর বইপত্র ভিজে একাকার হয়ে যায়। এদিকে মধ্য কড়লডেঙ্গার অবস্থাও একই। এখানেও কোন মাধ্যমিক বিদ্যালয় না থাকায় এলাকার ছেলেমেয়েদের ৪/৫ কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে পার্শ্ববর্তী পি সি সেন সারোয়াতলী উচ্চ বিদ্যালয় অথবা এফ.আর নুরুল হক উচ্চ বিদ্যালয়ে যেতে হয়। দূরত্বের ভোগান্তির কারণে অনেকেই মাধ্যমিকের পাঠ শেষ করার আগেই পড়ালেখার ইতি টানে। তবে এতো প্রতিকূলতার মাঝেও আশার খবর হলো দিন দিন শিক্ষার হার বৃদ্ধি পাচ্ছে এসব এলাকায়। এখানকার অভিভাবকেরা আগেকার চেয়ে অনেক বেশি সচেতন হওয়ায় যাতায়াতের ঝামেলা কমাতে সন্তানদের বাই-সাইকেল কিনে দিচ্ছেন। আর যাদের বাই-সাইকেল কেনার সামর্থ নেই তাদের পায়ে হেঁটে অনেক দূর পাড়ি দিয়ে স্কুলে যেতে হচ্ছে। তাই এলাকাগুলোতে একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা এখন সময়ের দাবি। কর্তৃপক্ষ যদি এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেন তাহলে দক্ষিণ ও মধ্য কড়লডেঙ্গার ছেলেমেয়েরা আরো বেশি শিক্ষিত হয়ে দেশ গঠনে নিজেদের আত্মনিয়োগের সুযোগ পাবে বলে অনেকের ধারণা।
এ ব্যাপারে এলাকায় একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপনের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হামিদুর রহমান মান্নান বলেন, দুগ্রামের মাঝামাঝি স্থানে একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় গড়তে পারলে শিক্ষা ও অজ্ঞতা থেকে গ্রাম দুটি আরো অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারতো বলে দাবি তাঁর।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here