নিজস্ব প্রতিবেদক : কর্ণফুলী নদীর মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করতে প্রতিদিন বিকেলে ভিড় জমে বোয়ালখালী উপজেলার কধুরখীল মুক্তিযোদ্ধা রিভার ভিউতে। এবার ঈদ উপলক্ষে এ ভিড় বেড়েছে নদীর তীরে গড়ে ওঠা এ পর্যটন স্পটে।

বোয়ালখালী অংশের উত্তর দক্ষিণে বয়ে চলা কর্ণফুলি নদী। নদীর পাড়ে বসে সাম্পান, নৌকা, ও ডিঙিতে করে জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য যে কারোরই মন কাড়ে। পড়ন্ত বেলায় সূর্যের অস্ত যাওয়া- এ যেন এক ছবির দেশ।

‘মুক্তিযোদ্ধা রিভার ভিউ’ পশ্চিম কধুরখীল পৌর ১নং ওর্য়াডে কর্ণফুলীর পাড়ে গড়ে উঠেছে। অবসরে মানুষজন প্রকৃতির কাছে সময় কাটাতে এ স্পটটি ভিড় করেন।

ঈদের ছুটিতে শহরের মানুষ গ্রামের টানে বাড়িতে চলে আসেন। রমজানে গরমের তাপমাত্রা বেশী থাকলেও ঈদের আগের দিন থেকে স্বস্তিতে ছিল আবহাওয়া। তবে ঈদের দিন সকালে বৃষ্টি বাঁধা হয়ে দাঁড়ালেও বিকেলে খোলামেলা পরিবেশে ঈদ উদযাপন করতে বেরিয়ে পড়েন।

সব বয়সের মানুষের পদচারণায় মুখরিত মুক্তিযোদ্ধা রিভার ভিউ মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে এবারের ঈদের দিনগুলোতে। কর্ণফুলী নদীতে ভ্রমণ পিপাসুুরা ইঞ্জিনচালিত নৌকায় চড়ছে।

ঈদের তৃতীয় দিনে গতকাল শুক্রবার পরিবার পরিজন নিয়ে এসেছেন মুক্তিযোদ্ধা রিভার ভিউতে। বন্ধু বান্ধব মিলে নদীর পাড়ে বসে গরম চা নাস্তায় ও আড্ডায় মাতোয়ারা ছিলেন বিকেল থেকে রাত অবধি। পাশাপাশি চলছে পরিচিত জনদের ঈদের কোলাকুলি।

জানা গেছে, কর্ণফুলি পাড়ের পশ্চিম কধুরখীল এ এলাকাটি ছিল নদী ভাঙ্গণ এলাকা। নদীর পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া প্রায় ২৩ কিলোমিটার দীর্ঘ কালুরঘাট-ভান্ডালজুরি সড়কটিও ছিল বিপদসংকুলের মধ্যে। নদীর ভাঙন ধরেছিলো এ সড়কটিকেও। ২০১৩ সালের ২২ অক্টোবর তৎকালীন পানি সম্পদ মন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন ও স্থানীয় সাংসদ মঈন উদ্দীন খান বাদল কর্ণফুলির মোট ৩টি পয়েন্টে ভাঙনরোধে ব্লক নির্মাণ কাজের উদ্ধোধন করেন। নদীর ভাঙনরোধে ব্লক দেওয়ার পর এ এলাকা নান্দনিক রূপ নেয়। স্থানীয়রা নদী তীরে বসার স্থান, চায়ের দোকান, নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা করে ভ্রমণ পিপাসুদের একটু বিনোদনের জন্য তৈরি করে পর্যটন স্পট।

ক্যাফে একাত্তরের স্বত্ত্বাধিকারী মো. ঈসমাইল জানান, চট্টগ্রামের নগর ও বিভিন্ন উপজেলা থেকে পরিবার পরিজন নিয়ে অনেকেই আসেন। বেশিভাগই বিকেলে এ ভিড় বাড়ে রাত অবধি। নদীতে নৌকা নিয়েও তারা ঘোরাফেরা করেন মনের আনন্দে। রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, পটিয়া, নগরীর মুরাদপুর আগ্রবাদ থেকেও লোকজন বেড়াতে আসেন।

স্থানীরা জানায়, পশ্চিম কধুরখীল বঙ্গবন্ধু জনকল্যাণ সমিতি, বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংসদ নিজস্ব উদ্যোগে প্রথমে বিনোদন স্পট করার জন্য জোড় পদক্ষেপ নেয়। এতে সকলে স্বতঃস্ফুর্ত সাড়া দেন। স্থানীয় কাউন্সিলর শাহজাদা এস. এম মিজানুর রহমানের সহযোগীতায় ক্লাবের পক্ষ থেকে নদীতীরে ব্লক দিয়ে সাজানো-ঘোচানো এলাকায় বসার ব্যবস্থা করা হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে এটির নামকরণ করা হয় ‘মুক্তিযোদ্ধা রিভার ভিউ’।

সরেজমিনে দেখা যায়, পিচঢালা মসৃণ প্রশস্থ সড়কের দু’পাশের সবকিছুই পরিচ্ছন্ন-শিল্পীর ক্যানভাসে আঁকা যেন ছবি। বিনোদনপ্রেমীরা যে যার মতো বসে উপভোগ করছে নদীর কলতান। বয়ে চলা কলকল ধ্বনি। বিকেল হতেই বেড়ে গেলো অবকাশে পছন্দ করে এমন মানুষের ভীড়। স্থানে স্থানে ফেস্টুনে লেখা ‘ধুমপান ও মাদকমুক্ত এলাকা।

নান্দনিক এ স্থানকে ঘিরে গড়ে উঠেছে কফি, চা, ঝাল, চটপটি, আইসক্রীম বিক্রির দোকান। দাম সচরাচর। বাড়তি ইনকামের কোনো ইচ্ছা নেই বলে জানান দোকানদার মো. বাদশা। তিনি জানান, দোকানদাররা নিজস্ব অর্থায়নে একজন পরিছন্ন কর্মী নিয়োগ দিয়েছে এ স্পটটিতে। পর্যটন স্পটে কোনো চাঁদা কিংবা টিকেট নেয়া হয়না।

বোয়ালখালী পৌরসভা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি মো. রিয়াদ হোসেন জানান, ব্লকের কিনার থেকে বয়ে চলা নদীর সৌন্দর্য্যটাই সবাইকে বিমোহিত করে। এছাড়া রয়েছে প্রকৃতির নির্মল বিশুদ্ধ বায়ু আর পরিবেশ। দর্শণার্থীদের নিরাপত্তায় স্থানীয়দের নিয়ে নিরাপত্তা কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে পৌর প্যানেল মেয়র শাহজাদা এসএম মিজানুর রহমান সংবাদকে জানান, পৌরসভার পক্ষ হতে ইতিমধ্যে কিছু কাজ করা হয়েছে। আরও দু’একটি স্থানীয় বেসরকারী সংস্থার মাধ্যমে কিছু উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেয়া হচ্ছে। তাছাড়াও যেহেতু মুক্তিযোদ্ধা রিভার ভিউ পর্যটন স্পটটি আমার এলাকায়, আমাদের হাত ধরে গড়ে উঠা, এটির উন্নয়নে পৌরসভার পক্ষ থেকে যা যা করণীয় তা করা হবে।

ছবি : ছাদেকুর রহমান সবুজ

এবি/আরডি/ডিবি/সবুজ

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here