দেবাশীষ বড়ুয়া রাজু,

বোয়ালখালীতে এ বছর অন্তত ১৬শ হেক্টর জমিতে আমন চাষাবাদ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে কৃষকের অনিহা ও জলাবদ্ধতায় এ পরিমাণ জমি অনাবাদী থাকার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সারাবছর চাষাবাদের এসব জমিতে গলা থেকে কোমড় সমান পানিতে ডুবে থাকায় কচুরিপানা ও আগাছা জম্মানোয় অনাবাদী হয়ে পড়ছে কৃষি জমি। কৃষকরা স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড, কৃষি অফিস, উপজেলা প্রশাসনসহ সর্বত্র ধর্ণা দিয়েছেন। কিন্তু কেউ তাদের এ সমস্যা লাঘবে কোন ধরনের পদক্ষেপ নেয়নি এবং নূন্যতম আন্তরিকতা দেখায়নি বলে জানান ভুক্তভোগী কৃষকরা।

পশ্চিম গোমদন্ডী ইউনিয়নের কৃষক মফিজুর রহমান ও আহম্মদ নবী জানান, বাপ-দাদার আমল থেকে আমরা কৃষির উপর নির্ভরশীল। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না করে অপরিকল্পিত কালভার্ট নির্মাণ ও পানি চলাচলের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিগত কয়েক বছর ধরে এ সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। এ ব্যাপারে মৌখিক ও লিখিতভাবে বলার পরও কোন প্রতিকার পাইনি। একই কথা বললেন পৌরসভাসহ শাকপুরা, সারোয়াতলি, চরণদ্বীপ ও কধুরখীল ইউনিয়নের কয়েকজন কৃষক।

কধুরখীল ইউনিয়নের কৃষক সুনীল দে বলেন, কধুরখীল কৃষ্ণ দিঘীর পাড় সংলগ্ন হদর বিল ও মুরাদ মুন্সীর হাট বিলে দীর্ঘ দিন ধরে কোন চাষবাদ না হচ্ছে না, ফলে স্থায়ী জলাবদ্ধতা, ইঁদুরের অত্যাচার ও জোঁকের উপদ্রপ বেড়ে গেছে।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, বোয়ালখালীতে মোট ফসলি জমির পরিমাণ ৬ হাজার ৩ শত ২৫ হেক্টর। এবার আমনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ হাজার ৬শত ৫০হেক্টর। ৬৫ হেক্টর জমিতে আগাম শাক-সবজি করার সম্ভাবনা থাকলেও অনাবাদী রয়েছে ১৬শ হেক্টর ।

অনাবাদী জমির পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার কারণ উল্লেখ করে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. আতিক উল্লাহ বলেন, জলাবদ্ধতার পাশাপাশি কৃষকদের অনিহাও রয়েছে। এ উপজেলাটি চট্টগ্রাম শহরের অতি নিকটবর্তী হওয়ায় অধিকাংশ মানুষ বসবাস করে শহরে। নিজেদের কৃষি জমি আছে, চাষাবাদ করেনা এবং অন্যকে দিয়েও করায় না।

এছাড়া কিছু কিছু ক্ষেত্রে খাল-নালা খনন ও পুনঃ খনন না করা, পানি নিষ্কাশনের মুখ বন্ধ করে অপরিকল্পিতভাবে যত্রতত্র স্থাপনা ও ঘরবাড়ি নির্মাণের ফলে সারাবছর জলাবদ্ধতা থেকে যায়।

তিনি বলেন, কোন কোন জায়গায় বেড়িবাঁধ ভাঙনের ফলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে অধিকাংশ জমি অনাবাদী হয়ে গেছে। এসব বেড়িবাঁধ তৈরী কিংবা মেরামতের উদ্যোগ নাই। যার ফলে পৌরসভা, কধুরখীল, পশ্চিম গোমদন্ডী, শাকপুরা, সারোয়াতলি, চরণদ্বীপ ও পোপাদিয়া ইউনিয়নে অনাবাদী জমির পরিমাণ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আবার কোন কোন এলাকায় কিছু স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় কালভার্ট বন্ধ করে জলাবদ্ধতার সৃষ্টির অভিযোগও রয়েছে। অনাবাদী জমিগুলো চাষের আওতায় আনতে প্রকল্পের মাধ্যমে স্লুইস গেট ও বেড়িবাঁধ নির্মাণসহ দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here