।। জহির উদ্দিন বাবর ।।

আমাদের দেশে সাধারণত তিন ধরনের দিন-তারিখের হিসাব প্রচলিত- ঈসায়ী, বঙ্গাব্দ ও হিজরি। এর মধ্যে হিজরি হলো ইসলামি সন। এর সঙ্গে মুসলমানদের বেশ কিছু ইবাদত, উৎসব ও উপলক্ষের যোগসূত্র রয়েছে। এজন্য মুসলমানদের কাছে হিজরি সনের গুরুত্ব বেশি। সারাবছর তেমন হিসাব-নিকাশ না হলেও দুই ঈদসহ কয়েকটি উপলক্ষে হিজরি সনের হিসাব গুরুত্বের সঙ্গে করা হয়। হিজরি সনের সম্পর্ক চাঁদের সঙ্গে। এজন্য এটাকে চন্দ্রবর্ষও বলা হয়।

যেহেতু চাঁদ দেখার সঙ্গে হিজরি মাসের সম্পর্ক, এজন্য গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি ইবাদতের সময় সরকারিভাবে চাঁদ দেখার ঘোষণা দেয় নির্দিষ্ট কমিটি। এই কমিটির ঘোষণা অনুযায়ী, মঙ্গলবার (১১ সেপ্টেম্বর) ছিল চন্দ্রবর্ষের শেষ দিন। আজ থেকে শুরু হবে ১৪৪০ হিজরির মহররম মাস।

৬২২ খ্রিস্টাব্দের ১২ সেপ্টেম্বর আল্লাহর নির্দেশে মহানবী (সা.) মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেন। হিজরতের সেই ঘটনার স্মরণে প্রণীত দিন-তারিখকেই হিজরি সন বলা হয়। মুসলিম জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা ৬২২ খ্রিস্টাব্দের ১৪ বা ১৫ জুলাইয়ের সূর্যাস্তের সময়কে হিজরি সন শুরুর সময় হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হজরত উমর (রা.)-এর শাসনামলে হিজরি সন গণনা শুরু হয়।

চন্দ্রমাসের প্রভাব মুসলমানদের জীবনে ব্যাপক। বিশেষত ইবাদতের তারিখ, ক্ষণ ও মৌসুম নির্ধারণের ক্ষেত্রে হিজরি সনের প্রভাব ও গুরুত্ব অপরিসীম। যেমন- রমজানের রোজা, দুই ঈদ, হজ, জাকাত ইত্যাদি ক্ষেত্রগুলোতে হিজরি সন ধরেই আমল করতে হয়। একারণে হিজরি সনের হিসাব স্মরণ রাখা মুসলমানদের জন্য জরুরি।

হিজরি সনের গণনা মুসলিম সংস্কৃতির সঙ্গেও ওতপ্রোতভাবে জড়িত। প্রয়োজনের তাগিদে আমরা ইংরেজি ও বাংলা সন অবশ্যই গণনা করব। কিন্তু স্বাতন্ত্র্য ও ঐতিহ্যের প্রতীক হিজরি সনের কথা আমাদের ভুলে থাকলে চলবে না। বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমরা এই সনটি গণনার প্রচলন ঘটাতে পারলে এর সঙ্গে বিস্তৃতি ঘটবে মুসলিম সংস্কৃতির। স্মরণ করিয়ে দেবে হিজরতের গুরুত্ব ও তাৎপর্যের কথা। হিজরতের শিক্ষা হতে পারে আমাদের জীবনের অনন্য পাথেয়।

কুরআনের ভাষায় মহররমকে ‘হারাম মাস’ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। কারণ আরবে যে চারটি মাসে যুদ্ধ-বিগ্রহ নিষিদ্ধ ছিল, তার একটি মহররম। প্রাচীনকাল থেকেই এই মাসকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ইসলাম এই মাসের গুরুত্ব আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

মহররমের ১০ তারিখ ‘আশুরা’ হিসেবে পরিচিত। এ দিনের ফজিলত অনেক বেশি। আমাদের দেশেও দিনটি বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে ধর্মীয় আবহ ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে পালিত হয়। এ দিন সরকারি ছুটি থাকে। এবার ২১ সেপ্টেম্বর পালিত হবে পবিত্র আশুরা। রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার আগে আশুরার রোজাই ছিল মুসলমানদের ওপর ফরজ। পরবর্তী সময়ে এই দিনের রোজাকে নফল করা হয়েছে। রাসুল (সা.) বলেছেন, এ দিন রোজা রাখলে আল্লাহর অনুগ্রহে পেছনের যাবতীয় পাপ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।

আশুরার দিনটি এমনভাবে কাটানো উচিত যেভাবে কাটানোর কথা রাসুলের (সা.) হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। সুন্নত হিসেবে এ দিনে শুধু রোজা রাখার কথা বলা হয়েছে। এক হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, এ দিন রোজা রাখলে সারাবছরের গোনাহের প্রতিদান হয়ে যায়। আশুরার দিন রোজা ছাড়া অন্য কোনো আমলের কথা জোরালোভাবে প্রমাণিত না। শিয়া সম্প্রদায় এই দিনে তাজিয়া মিছিলসহ যেসব আনুষ্ঠানিকতা পালন করে, এর সঙ্গে ইসলামের কোনো যোগসূত্র নেই। প্রকৃত মুসলমান কারও জন্য এ ধরনের অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া সমীচীন নয়।

লেখক: সভাপতি, বাংলাদেশ ইসলামী লেখক ফোরাম

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here