বিভাগের সম্পাদক
প্রখ্যাত সাহিত্যিক কালীপ্রসন্ন সিংহের জন্ম জোড়াসাঁকো, কলকাতায় ১৮৪০ সালে। জমিদার বংশে নন্দলাল সিংহের একমাত্র সন্তান। হিন্দু কলেজে (১৮১৭) ভর্তি হলেও ১৮৫৭-তে কলেজ ত্যাগ করেন। গৃহপণ্ডিত রেখে সংস্কৃত ও বাংলা ভাষা শিক্ষালাভ এবং উইলিয়াম ক্লার্ক প্যাট্রিকের কাছে ইংরেজি অধ্যয়ন করেন। বঙ্গ ভাষার অনুশীলনের জন্য মাত্র ১৩ বছর বয়সে ‘বিদ্যোৎসাহিনী সভা’ (১৮৫৩) প্রতিষ্ঠা করে এর মুখপত্রস্বরূপ বিদ্যোৎসাহিনী পত্রিকা (১৮৫৫) প্রকাশ করেন। নাট্যাভিনয় ও নাট্যসাহিত্যের উন্নতিকল্পে ‘বিদ্যোৎসাহিনী রঙ্গমঞ্চ’ (১৮৫৬) স্থাপন করে এই রঙ্গমঞ্চে রামনারায়ণ তর্করতœ অনূদিত বেণীসংহার নাটকের অভিনয়ে অংশগ্রহণ। তার অনূদিত বিক্রমোর্বশী নাটকও এই রঙ্গমঞ্চে অভিনীত (১৮৫৭)। নিজে এতে অভিনয় করেন। মধুসূদনের মেঘনাদবধ কাব্য (১৮৬১) প্রকাশিত হলে কালীপ্রসন্ন কর্তৃক সর্বাগ্রে বিদ্যোৎসাহিনী সভার পক্ষ থেকে কবিকে সংবর্ধনা জ্ঞাপন (১২ ফেব্রুয়ারি ১৮৬১)। দীনবন্ধু মিত্রের নীলদর্পণ (১৮৬০) নাটকের ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশ করার দায়ে রেভারেন্ড লং নামের এক ইংরেজ পাদরিকে আদালত এক হাজার টাকা জরিমানা করলে (২৪ জুলাই ১৮৬১) কালীপ্রসন্ন সিংহ আদালতে উপস্থিত হয়ে সে টাকা পরিশোধ করে লং সাহেবকে মুক্ত করেন। মাসিক বিবিধার্থ সংগ্রহের (১৮৫১) সপ্তম পর্ব সম্পাদন (১৮৬০)। ১৮৬২ সালের ১৪ নভেম্বর দৈনিক পরিদর্শক (১৮৬১) পত্রিকার সম্পাদক নিযুক্ত। বিধবা বিবাহকে উৎসাহ দানকল্পে পুরস্কার ঘোষণা করে সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন প্রচার করেছিলেন : ‘যিনি বিধবা বিবাহ করিবেন, তাহাকে কালীপ্রসন্ন বাবু এক হাজার টাকা পুরস্কার প্রদান করিবেন।’ বহু বিবাহরোধ আন্দোলনে অংশগ্রহণ। ১৮৬৩ সালে অবৈতনিক ম্যাজিস্ট্রেট ও ‘জাস্টিস অব দি পিস’ নিযুক্ত। বাংলা গদ্যের বিশিষ্ট শিল্পী, অনুবাদক ও নাট্যকার। হুতোম প্যাঁচার নকশা (১৮৬২) ও সংস্কৃত মহাভারতের গদ্য-অনুবাদ (১৮৬৬) তার অবদান। কলকাতার বাবুসমাজের ব্যঙ্গচিত্র হিসেবে হুতোম প্যাঁচার নকশা এক অসাধারণ রচনা।
কালীপ্রসন্ন সিংহের একটি বড় অবদান সংস্কৃতবহুল পণ্ডিতি ভাষার বিরুদ্ধে কথ্য ভাষাকে বাংলা সাহিত্যে স্থাপন। হুতোম প্যাঁচার নকশায় এ ভাষা প্রয়োগ করেন। প্যারীচাঁদ মিত্র সাধু ও কথ্য উভয় বাক্যরীতির মিশ্র প্রয়োগ করে যে ‘আলালী ভাষা’ সৃষ্টি করেন, কালীপ্রসন্ন সিংহ একে আরো সুন্দর ও মসৃণ করে তোলেন। তার ব্যবহৃত রীতিতে কথ্য ও সাধু ক্রিয়াপদের মিশ্রণ নেই।
কলকাতা ও পাশের অঞ্চলের মৌখিক ভাষার সুষ্ঠু প্রয়োগের প্রথম কৃতিত্ব তারই। তার ব্যবহৃত ভাষা ‘হুতোমী বাংলা’ নামে পরিচিত। অন্যান্য গ্রন্থ : বাবু (প্রহসন ১৮৫৪), বিক্রমোর্বশী (অনুবাদ নাটক, ১৮৫৭), সাবিত্রী সত্যবান (নাটক, ১৮৫৮), মালতীমাধব (অনুবাদ নাটক, ১৮৫৯)। মৃত্যু, কলকাতা, ২৪ জুলাই ১৮৭০।
এবি/টিআর ২৪ জুলাই ২০১৯