#হযরত_ফাতেমা_রাঃ_এঁর_সংক্ষিপ্ত_জীবনী

#নামঃ
ফাতিমা, সিদ্দিকা, মুবারিকাহ, তাহিরাহ, যাকিয়্যাহ, রাযিয়্যাহ, মারযিয়্যাহ, মুহাদ্দিসাহ এবং যাহরা।
‘ফাতিমা’ শব্দের অর্থ জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তকারী। হযরত আনস (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘আমি স্বীয় কন্যার নাম ফাতিমা রাখলাম এই জন্য যে, আল্লাহ তা’আলা তাঁকে এবং তাঁর আশেকদেরকে দোযখের আগুন থেকে পরিত্রাণ দিবেন।

#ডাকনামঃ
উম্মুল হাসান, উম্মুল হুসাইন, উম্মুল মুহ্সিন, উম্মুল আয়েম্মা এবং উম্মে আবিহা।

#উপাধিঃ
তাঁর সুপ্রসিদ্ধ উপাধি ‘আয্‌যাহরা’ যার অর্থ- পুষ্পিত কুসুম কলি, আলোকোজ্জ্বল, অতীব সুন্দর। তিনি অত্যন্ত সুন্দর ও সুদর্শনা ছিলেন, তাই তাকে উক্ত নামে বিভূষিত করা হয়। মুফাস্‌সিরদের একদল বলেন, হযরত ফাতেমা (রাঃ) জান্নাতি মহিলাদের ন্যায় হায়েজ-নিফাস (ঋতুস্রাব) থেকে পবিত্র ছিলেন, তাই তাঁকে যাহরা বলা হয়। তিনি যেহেতু হায়েজ-নিফাস থেকে পবিত্র ছিলেন, তাই জীবনে কোন দিন তাঁর নামাজ কাযা হয়নি। যেই সময় তাঁর পবিত্র সন্তান-সন্ততি ভুমিষ্ট হত, তিনি তৎক্ষনাৎ পবিত্র হয়ে যেতেন।
অন্যান্য উপাধিগুলো হল- আল-বতুল (সম্পর্ক ছিন্নকারী অর্থাৎ দুনিয়ার সুখ-ভোগ থেকে সম্পর্ক ছিন্নকারী), আল-আযরা (পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন), সাইয়্যদাতুন্নিসা (মহিলাদের সর্দার), আফদালুন নিসা (সর্বোত্তম রমনী), খাইরুন্নিসা (সর্বোত্তম রমনী), মরিয়ম আল-কুবরা (বড় মরিয়ম (আঃ)) আল-মুহরাকা (খোদার আশির্বাদ), আল-সাদিকা (সত্যবাদিনী), আল-মুহাদ্দিসা (বাক্যালাপকারী, যিনি তার জন্মের আগে মায়ের গর্ভ থেকে তাঁর মায়ের সাথে কথা বলেছেন)।

#জম্মঃ
আরবী ২০ শে জমাদিউস্‌সানী রোজ শুক্রবার (নবুয়াত লাভের ৫ম ববৎসরে) পবিত্র মক্কা নগরীতে জম্ম গ্রহণ করেন।

#পিতার_নামঃ
মহানবী হযরত মুহাম্মদ মুস্তাফা সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম।

#মাতার_নামঃ
ইসলাম গ্রহণকারী সর্বপ্রথম নারী, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম এর সর্বপ্রথম স্ত্রী হযরত খাদিজা বিনতে খুয়ালিদ (রাঃ)।

#বাল্যকালঃ
হযরত ফাতেমা (রাঃ) দশ বছরে উপনীত হলে তাঁর মাতা হযরত খাদিজাতুল কুবরা (রাঃ) ইন্তেকাল করেন। এতে মা ফাতেমা (রাঃ) শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়েন। রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম যখন উম্মুল মুমেনীন হযরত সাওদা (রাঃ) এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন, তখন ফাতেমা (রাঃ) এঁর দেখাশুনার দায়িত্ব তাঁকে অর্পণ করেন।

#শিক্ষাঃ
হযরত রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও খাদিজা (রাঃ) তাঁদের প্রিয় সন্তানদের শিক্ষার ব্যবস্থা সম্পূর্ন পারিবারিক পরিবেশে গড়ে তুলেন। আর নবী কন্যারাও বিশেষ করে ফাতিমা (রাঃ) এ পরিবেশে বেশ পড়াশুনা করতেন। তাঁর শিক্ষার প্রতি মন ছিল অত্যন্ত প্রখর। তিনি ছোটবেলা থেকেই প্রখর স্মৃতি-শক্তির অধিকারী ছিলেন। তিনি যা শুনতেন তাই মনে রাখতে পারতেন এবং মুখস্থ করে ফেলতেন।

#বিবাহঃ
তিনি ১৫ বছরে (মতান্তরে ২০ বছরে) উপনীত হলে হযরত আলী (রাঃ) এর সাথে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বিবাহ সম্পন্ন করেন। তখন হযরত আলী (রাঃ) এর বয়স ছিল ২১ বছর। এই সম্পর্কিত ঘটনাটি উল্লেখ করা হল-বর্ণিত আছে যে, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামে প্রিয় শাহজাদী হযরত মা ফাতেমা (রাঃ) কে বিবাহ করার জন্য হযরত আবু বকর (রাঃ) ও হযরত ওমর ফারুক (রাঃ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামের কাছে প্রস্তাব পেশ করেন। কিন্তু মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম তাঁদের এই বলে উত্তর দেন, ‘আমি এতদবিষয়ে আল্লাহর নির্দেশের অপেক্ষায় আছি’। একদিন সাইয়্যদেনা হযরত আবু বকর (রাঃ) ও সাইয়্যেদেনা হযরত ওমর (রাঃ) পরস্পর আলাপ করছিলেন। আর আলাপের বিষয়বস্তু ছিল যে, সম্মানিত ব্যক্তিবর্গ মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম এর প্রিয় শাহজাদী হযরত ফাতেমা (রাঃ) কে বিবাহ করার বাসনা প্রকাশ করলেন, কিন্তু আমাদের কেউ এই ব্যাপারে ইতিবাচক উত্তর পাননি। একমাত্র হযরত আলী (রাঃ) বাকি আছেন। কিন্তু তিনি তাঁর অভাবগ্রস্থতার কারণে নিশ্চুপ, আমরা তাঁকে গিয়ে এই ব্যাপারে উৎসাহিত করি যাতে তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম এর প্রিয় শাহজাদী হযরত ফাতেমা (রাঃ) কে বিবাহ করার বাসনা প্রকাশ করেন। অতএব, তাঁরা দুইজন সেই সময় হযরত আলী (রাঃ) এর গৃহে গমণ করেন এবং তাঁরা গৃহে তাঁকে না পেয়ে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন যে, তিনি তাঁর এক বন্ধুর বাগানে পানি দেওয়ার জন্য গিয়েছেন। যখন সাহাবীদ্বয় উক্ত স্থানে গিয়ে পৌঁছেন, তখন তাঁরা সাইয়্যেদেনা আলী (রাঃ) কে উক্ত কথাটি বলেন, যেন তিনি হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামের প্রিয় শাহজাদী হযরত ফাতেমা (রাঃ) কে বিবাহের প্রস্তাব পাঠায়। তাঁদের বিশ্বাস ছিল যে, হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম তাঁর আত্মত্যাগ এবং শরাফতের কারণে প্রিয় কন্যার সাথে বিয়ে দিতে পারেন। হযরত আলী (রাঃ) শীর্যস্থানীয় সাহাবীদ্বয়ের অনুপ্রেরণা পেয়ে হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামের খেদমতে হাযির হয়ে হযরত ফাতেমা (রাঃ) কে বিয়ে করার প্রস্তাব পেশ করেন। হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম, তাঁর প্রস্তাবে সম্মত হলেন। হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমার কাছে মোহর দেওয়ার কি আছে?’ হযরত আলী (রাঃ) উত্তর দিলেন, ‘আমার নিকট একটি বর্ম ও একটি ঘোড়া আছে’। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম হযরত আলী (রাঃ) কে বললেন, ‘তুমি যাও এবং তোমার বর্মটা বিক্রি করে যা পাবে তা আমার কাছে নিয়ে আস’। হযরত আলী (রাঃ) বর্মটি নিয়ে মদীনা শরীফের বাজারে চলে গেলেন। তিনি তাঁর বর্মটি নিয়ে বাজারে দাঁড়িয়ে ছিলেন, এমতাবস্থায় সৈয়্যদুনা হযরত ওসমান গণি (রাঃ) তাঁর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, তিনি তাঁকে দাঁড়ানোর কারণ জিজ্ঞেস করলেন, তখন হযরত আলী (রাঃ) বললেন, তিনি তাঁর বর্মটি বিক্রি করার জন্য দাঁড়িয়েছেন। অতঃপর হযরত ওসমান (রাঃ) উক্ত বর্মটি ৪০০ (চারশত) দিরহাম দিয়ে ক্রয় করে নিলেন এবং এই বর্মটি পুণরায় হযরত আলী (রাঃ) কে উপহার হিসেবে দান করলেন। হযরত আলী (রাঃ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম এর দরবারে গিয়ে সব ঘটনা বিবৃত করেন। হযরত ওসমান (রাঃ) এর এমন বদান্যতার কথা শুনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম তাঁর জন্য দোয়া করেন। এবং বর্মটির বিক্রিত টাকা হযরত আবু বকর (রাঃ) কে দিয়ে বললেন, ‘উহা দ্বারা হযরত ফাতেমা (রাঃ) এর জন্য জরুরী জিনিস পত্র খরিদ করে নিয়ে আসুন’। হযরত আবু বকর (রাঃ) প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র নিয়ে আসলে তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম হযরত আলী (রাঃ) এঁর সাথে হযরত ফাতেমা (রাঃ) এর বিবাহ সম্পন্ন করেন।

#দাম্পত্য_জীবনে_পারস্পরিক_সমঝোতাঃ
আমিরুল মু’মিনীন আলী (আ.) বলেন : “আল্লাহর শপথ,আমার দাম্পত্য জীবনে ফাতেমাকে তাঁর মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত কখনো রাগাইনি আর কোন কাজে তাকে বাধ্য করি নি। সেও আমাকে কখনো রাগান্বিত করে নি এবং কখনো আমার অবাধ্য হয় নি। যখনি তাঁর দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করতাম তখনি আমার দুঃখ কষ্ট দূর হয়ে যেত।”

#হাদিস_বর্ণনায়_অবদানঃ
তাঁর থেকে সর্বমোট ১৮টি হাদিস বর্ণিত হয়েছে।

#সন্তান_সন্ততিঃ
তাঁর তিন পুত্র ও তিন কন্যা। যথাক্রমে ইমাম হাসান মুজতাবা (রাঃ), ইমাম হুসাইন সাইয়্যেদুশ শুহাদা (রাঃ), জয়নাব আল কুবরা (রাঃ), উম্মে কুলসুম (রাঃ), হযরত রুকাইয়া (রাঃ) ও হযরত মুহসিন (রাঃ) (মহসিন (রাঃ)- গর্ভাবস্থায় মতান্তরে শিশু অবস্থায় ইন্তেকাল করেন)।

#পবিত্র_কুরআনে_হযরত_ফাতিমার_মর্যাদাঃ
ক. সূরা আহযাবের নিম্নোক্ত আয়াতে হযরত ফাতিমা (রাঃ) ও পবিত্র আহলে বায়াতের শানে অবতীর্ণ হয়েছে:
إِنَّمَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيُذْهِبَ عَنْكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرً
অনুবাদঃ হে নবী-পরিবার! আল্লাহ তো চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করতে। (সূরা আহযাব, আয়াত নং-৩৩)

খ. সূরা আলে ইমরানের ৬১ নম্বর আয়াত অনুযায়ী (আয়াতে মোবাহিলায়) হযরত ফাতিমাকে রাসূললাহ (সা.) তাঁর নবুওয়াতের সত্যতার সাক্ষী করেছেন। পবিত্র কুরআনের সেই আয়াতটি হল :
فَمَنْ حَاجَّكَ فِيهِ مِنْ بَعْدِ مَا جَاءَكَ مِنَ الْعِلْمِ فَقُلْ تَعَالَوْا نَدْعُ أَبْنَاءَنَا وَأَبْنَاءَكُمْ وَنِسَاءَنَا وَنِسَاءَكُمْ وَأَنْفُسَنَا وَأَنْفُسَكُمْ ثُمَّ نَبْتَهِلْ فَنَجْعَلْ لَعْنَتَ اللَّهِ عَلَى الْكَاذِبِينَ
‘অতঃপর আপনার নিকট যখন জ্ঞান (কুরআন) আসার পর, এরপরও যদি কেউ (খ্রিস্টান) আপনার সাথে তাঁর (ঈসার) সম্বন্ধে তর্ক-বিতর্ক করে, তবে বলুন, ‘(ময়দানে) এস, আমরা আহ্বান করি আমাদের পুত্রদের এবং তোমাদের পুত্রদের, আমাদের নারীদের এবং তোমাদের নারীদের এবং আমাদের সত্তাদের এবং তোমাদের সত্তাদের;’ অতঃপর সকলে মিলে (আল্লাহর দরবারে) নিবেদন করি এবং মিথ্যাবাদীদের ওপর আল্লাহর অভিসম্পাত বর্ষণ করি।’
আয়াত সংশ্লিষ্ট ঘটনাটি এরূপ : রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম নাজরানবাসী খ্রিস্টান প্রতিনিধি দলকে যখন তারা এই বিষয়ে তাঁর সাথে বিতর্কে লিপ্ত হয়েছিল তখন এ আহবান জানিয়েছিলেন। অতঃপর তারা বলল, বিষয়টি চিন্তা করে নেই, পরে আসব। তাদের [আল আকিব নামক] জনৈক বিচক্ষণ ব্যক্তি তাদেরকে বলল, তোমরা তাঁর নবুয়ত সম্পর্কে ভালোভাবেই জ্ঞাত রয়েছ। যে সম্প্রদায়ই নবীর সাথে এ ধরনের ‘মুবাহালা (পরস্পর অভিসম্পাত করা)’ করেছে, তারাই ধবংস হয়েছে। সুতরাং তাঁর সাথে সন্ধি করে নাও এবং বাড়ি ফিরে চল। এদিকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম হযরত হাসান (রাঃ), হযরত হুসাইন(রাঃ), হযরত ফাতিমা(রাঃ) ও হযরত আলী(রাঃ) কে নিয়ে এ মুবাহালার উদ্দেশ্যে বের হয়ে পড়েছিলেন। তিনি তাদেরকে বলেছিলেন, তোমরা আমার দোয়ার সাথে আমিন বলিও। শেষ পর্যন্ত নাজরানবাসী খ্রিস্টানগণ মুবাহালায় অবতীর্ণ হতে অস্বীকৃতি জানায় এবং জিজিয়া প্রদান করতে রাজি হয়ে তাঁর সাথে সন্ধি করে। ইমাম আহমদ (রহঃ) তাঁর প্রণীত মুসনাদে হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন যে, তিনি ইরশাদ করেন, যদি খ্রিস্টান প্রতিনিধি মুবাহালার জন্য বাহির হতো, তবে তারা বাড়ি ফিরে ধন-সম্পত্তি ও পরিবার-পরিজন কিছুই পেতনা। এভাবে হযরত ফাতিমা তাঁর পিতার নবুওয়াতের সপক্ষে সাক্ষ্য প্রদান করলেন।

#হাদিসের_আলোকে_তাঁর_মর্যাদাঃ
মহানবি হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘ফাতেমা আমার শরীরের একটি অংশ। যে তাঁকে অসন্তুষ্ট করল,সে যেন আমাকে অসন্তুষ্ট করল’।

বর্ণিত আছে যে, যে সময় হযরত ফাতেমা (রাঃ) তাঁর মাতা হযরত খাদিজা (রাঃ) এর গর্ভে ছিলেন, তখন তাঁর কাছে জান্নাতের সুগন্ধি আসত। উম্মুল উমেনীন হযরত খাদিজা (রাঃ) বিষয়টি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম কে বলেন । অতঃপর যখন হযরত ফাতেমা (রাঃ) জম্মগ্রহণ করেন, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম তাঁর (মা ফাতেমা) মাথা চুম্বন করে বললেন, ‘তাঁর মাথা থেকে আমার কাছে জান্নাতের সুগন্ধি আসে’।

রাসূললাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত ফাতিমার মর্যাদা সম্পর্কে অনেক কথা বলেছেন। যেমন : তিনি বলেন,‘চারজন নারী সমগ্র নারী জাতির মধ্যে সর্বোত্তম : মারইয়াম বিনতে ইমরান,আছিয়া বিনতে মুযাহিম,খাদীজা বিনতে খুওয়াইলিদ এবং ফাতিমা বিনতে মুহাম্মাদ। তাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হচ্ছে ফাতিমা।’

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,‘বেহেশতে সর্বপ্রথম আমার নিকট যে পৌঁছবে সে হচ্ছে ফাতিমা বিনতে মুহাম্মাদ।’
বুখারী শরীফের একটি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে,রাসূল (সা.) বলেন,‘ফাতিমা আমার অস্তিত্বের অংশ। যে তাকে রাগান্বিত করে সে আমাকে রাগান্বিত করে।’
তিনি আরও বলেন,‘ফাতিমা কোন ব্যাপারে রাগান্বিত হলে আল্লাহও রাগান্বিত হন এবং ফাতিমার আনন্দে আল্লাহও আনন্দিত হন।’
প্রাসঙ্গিকভাবে বলতে হয় যে,এ হাদীসটি আমাদের জন্য অপরিসীম গুরুত্বের অধিকারী। যেহেতু রাসূললাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ প্রবৃত্তি থেকে কোন কথা বলেন না,তাইু তাঁর প্রতিটি কথার মধ্যেই গুঢ় তাৎপর্য রয়েছে। তিনি হযরত ফাতিমার মর্যাদা উল্লেখ করার পাশাপাশি তাঁর সন্তুষ্টি-অসন্তুষ্টির প্রতি লক্ষ্য রাখা ও তাঁকে কষ্ট না দেয়ার বিষয়ে সতর্ক করেছেন। হযরত ফাতিমার সন্তুষ্টি-অসন্তুষ্টি ও তাঁকে কষ্ট দেয়ার সাথে মহান আল্লাহর ও রাসূলের সন্তুষ্টি-অসন্তুষ্টি এবং রাসূলকে কষ্ট দেয়ার বিষয়কে সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে হযরত ফাতিমার আচরণকে ধর্মের সীমায় আনা হয়েছে। রক্তের সম্পর্ক নয়,বরং বেহেশতের নারীদের নেত্রীর অসন্তুষ্টি অবশ্যই আল্লাহকে অসন্তুষ্ট করবে। কারণ,তিনি অন্যায় কোন বিষয়ে অসন্তুষ্ট হতে পারেন না। যদি এ সম্ভাবনা থাকত যে,তিনি মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির বিপরীত বিষয়ে সন্তুষ্ট হতে পারেন তবে রাসূললাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনই তাঁর সম্পর্কে এমন কথা বলতেন না। আর সেজন্যই হযরত ফাতিমার অসন্তুষ্টি ও তাঁকে কষ্ট দেয়াকে রাসূলের অসন্তুষ্টি ও তাঁকে কষ্ট দেয়ার সমান করা হয়েছে। এমন নয় যে,অন্য দশজন লোককে কষ্ট দেয়ার সাথে এর তুলনা করা হবে।
কারণ,রাসূলকে কষ্ট না দেয়ার বিষয়টি কুরআনেই এভাবে বর্ণিত হয়েছে :
إِنَّ الَّذِينَ يُؤْذُونَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ لَعَنَهُمُ اللَّهُ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ وَأَعَدَّ لَهُمْ عَذَابًا مُهِينًا

‘নিশ্চয়ই যারা আল্লাহ ও রাসূলকে পীড়া দেয়,আল্লাহ তাদের দুনিয়া ও আখেরাতে অভিশপ্ত করেন এবং তিনি তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি।’ সূরা আহযাব ৫৭

আরেকটি আয়াতে বলা হয়েছে :
وَالَّذِينَ يُؤْذُونَ رَسُولَ اللَّهِ لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ

‘…এবং যারা আল্লাহর রাসূলকে যাতনা দেয়,তাদের জন্য রয়েছে বেদনাদায়ক শাস্তি।’ সূরা তাওবা ৬১

#ইবাদত_বন্দেগী_ও_মুসলিম_উম্মাহর_জন্য_দোয়াঃ
হযরত হাসান বসরী (রহ.) বলেন : “নবী (সা.)-এর উম্মতের মধ্যে হযরত ফাতেমার ন্যায় ইবাদতকারী পৃথিবীতে আর আসেনি। তিনি নামাজ ও ইবাদতে এতবেশী দণ্ডায়মান থাকতেন যে,ফলে তাঁর পদযুগল ফুলে গিয়েছিল।”

ইমাম হাসান (আ.) বলেন : “এক বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত্রে আমার মাকে ইবাদতে দণ্ডায়মান দেখতে পেলাম। তিনি সুবহে সাদেক পর্যন্ত নামাজ ও মুনাজাতরত ছিলেন। আমি শুনতে পেলাম যে,তিনি মু’মিন ভাই-বোনদের জন্যে তাদের নাম ধরে দোয়া করলেন কিন্তু নিজের জন্যে কোন দোয়াই করলেন না। আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম,মা! আপনি যেভাবে অন্যের জন্যে দোয়া করলেন সেভাবে কেন নিজের জন্যে দোয়া করলেন না? উত্তরে তিনি বলেন : হে বৎস! প্রথমে প্রতিবেশীদের জন্যে তারপর নিজেদের জন্যে।”

#দানশীলতা_ও_বদান্যতাঃ
সূরা দাহরে হযরত ফাতিমা ও তাঁর পরিবারের প্রশংসা করা হয়েছে এভাবে :
وَيُطْعِمُونَ الطَّعَامَ عَلَى حُبِّهِ مِسْكِينًا وَيَتِيمًا وَأَسِيرًا (8)
إِنَّمَا نُطْعِمُكُمْ لِوَجْهِ اللَّهِ لَا نُرِيدُ مِنْكُمْ جَزَاءً وَلَا شُكُورًا (9)
إِنَّا نَخَافُ مِنْ رَبِّنَا يَوْمًا عَبُوسًا قَمْطَرِيرًا (10)
فَوَقَاهُمُ اللَّهُ شَرَّ ذَلِكَ الْيَوْمِ وَلَقَّاهُمْ نَضْرَةً وَسُرُورًا (11)
وَجَزَاهُمْ بِمَا صَبَرُوا جَنَّةً وَحَرِيرًا
‘তারা তাঁর (আল্লাহর) ভালবাসায় অভাবগ্রস্ত,অনাথ ও বন্দীকে আহার্য দান করে। এবং বলে,‘কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে আমরা তোমাদেরকে আহার প্রদান করি,আমরা তোমাদের নিকট হতে প্রতিদান চাই না,কৃতজ্ঞতাও নয়,আমরা আশংকা করি আমাদের প্রতিপালকের নিকট হতে এক ভীতিপ্রদ দিনের,সেদিন মুখমণ্ডল বিকৃত ও বিবর্ণ হয়ে যাবে’; পরিণামে আল্লাহ তাদের সেদিনের কঠিন পরিস্থিতি হতে রক্ষা করবেন এবং তাদের দান করবেন উৎফুলতা ও আনন্দ। আর ধৈর্যশীলতার প্রতিদানস্বরূপ তাদের প্রদান করবেন জান্নাত ও রেশমী বস্ত্র।’

এ ঘটনা প্রসঙ্গে আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস বলেন : একদিন ইমাম হাসান ও হুসাইন পীড়িত হয়ে পড়লেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁর সাহাবীদের নিয়ে তাঁদের দেখতে গেলেন এবং তাঁদের রোগমুক্তির জন্য হযরত আলীকে রোযা মানত করতে বললেন। হযরত আলী ও ফাতিমা রোযার মানত করলেন। তাঁদের রোগমুক্তির পর হযরত ফাতিমা তাঁর পরিজন নিয়ে রোযা রাখা শুরু করলেন। তাঁরা পরপর তিনদিন রোযা রাখার নিয়্যত করেছিলেন। প্রথম দিন হযরত ফাতিমা ইফতারের জন্য পাঁচটি রুটি তৈরি করলেন। যখন তাঁরা ইফতারের জন্য খাবার নিয়ে বসেছেন সে সময়ে একজন মিসকিন এসে খাবার চাইল। তাঁরা তাঁদের খাবারের পুরোটাই সেই মিসকিনকে দিয়ে দিলেন। দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিনে একইভাবে ইফতারের সময় যথাক্রমে একজন ইয়াতিম ও একজন বন্দী তাঁদের কাছে খাবার চাইল। তাঁরা পরপর এ তিনদিনই কেবল পানি দিয়ে ইফতার করলেন। এ ঘটনার প্রেক্ষিতেই সূরা দাহর বা ইনসান নাযিল হয়।

#ওফাতঃ 

তিনি রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম-এর ওফাতের ছয়মাস পর ৩ (তিন) রমজান ১১ হিজরিতে ওফাত করেন। ওফাতের সময় তাঁর বয়স হয়েছিল ২৮/২৯ বছর। তাঁকে জান্নাতুল বকীতে সমাহিত করা হয়।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here