মাহবুব-উল আলম
জন্ম ১ মে ১৮৯৮

মৃত্যু ৭ আগস্ট ১৯৮১ (বয়স ৮৩)

মাহবুব-উল আলম (১ মে ১৮৯৮ – ৭ আগস্ট ১৯৮১) একজন বাংলাদেশী লেখক, কথা সাহিত্যিক এবং ইতিহাসবিদ।

জীবনী

মাহবুব-উল আলম চট্টগ্রামের ফাতেহপুর গ্রামে ১ মে ১৮৯৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মৌলভী নাসির উদ্দিন, মাতা আজিমুন্নেসা বেগম। তিনি তার পিতা মাতার দ্বিতীয় সন্তান। মাহবুব-উল আলম সরকারি নিবন্ধন বিভাগে চাকরি করতেন এবং ১৯৫৫ সালে অবসর গ্রহন করেন।

কর্মজীবন

১৯১৭ সালে তিনি ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীর ৪৯ তম বাঙালি পল্টনে যোগ দেন, তিনি সিগন্যাল কর্পসে দায়িত্ব পালন করেন এবং মেসোপটেমিয়া (বর্তমানে ইরাক)-এর বিভিন্ন স্টেশনগুলিতে প্রায় তিন বছর দায়িত্ব পালন করেন, পরে ১৯২০ সালে পল্টন ভেঙ্গে গেলে তিনি দেশে ফিরে আসেন।

সাহিত্য কর্ম

তিনি বাংলা গদ্য ও কল্পকাহীনি এবং গল্প লিখতেন। তাঁর সাহিত্য কর্মগুলি বিদ্যালয় স্তরের পাঠ্যক্রম, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতকোত্তর স্তরের বাংলা সাহিত্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল।

উপন্যাস

  • মফিজন (১৯৪৬) মাহবুব উল আলম মফিজন নামে এক উপন্যাস লিখেন
  • মোমেনের জবানবন্দী (১৯৪৬) – আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ, এতে সমাজ ও বাস্তবজীবনের নিখুঁত চিত্র প্রকাশ পায়। উপন্যাসটি ইংরেজি ও উর্দু ভাষায় অনূদিত হয়। ইংরেজীতে অনুবাদ করেন অন্নদাশঙ্কর রায়ের স্ত্রী শ্রীমতি লীলা রায়। এই বইটি তৎকালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও পেশোয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যতালিকায়ও অন্তর্ভূক্ত হয়।

ছোট গল্প

  • তাজিয়া (১৯৪৬) – ছোট গল্পগুলির একটি সংগ্রহ, যা প্রধানত ধর্মীয় কুসংস্কারের সাথে সম্পর্কিত।
  • পঞ্চ অন্ন (১৯৫৩) – আরেকটি ভলিউম, যার মধ্যে অতিপ্রাকৃতবাদ, দুর্ভিক্ষ, গার্হস্থ্য বিষয় এবং বিবাহ সম্পর্কিত ছোট গল্প রয়েছে।

তাঁর মৃত্যুর পর, চারটি মজাদার হাস্যরসাত্মক গল্প প্রকাশ করা হয় যা হল: রঙবেরঙ (১৯৯৮), পল্টনে (১৯৯৮), প্রধান অতিথি ও তাজা শিঙ্গি মাছের ঝোল (২০০২) এবং সাত সতেরো

অন্য কর্ম

  • পল্টন জীবনের স্মৃতি – বইটি ১৯৩৫ সালে প্রকাশিত হয়। এর মাধ্যমে লেখক হিসেবে মাহবুব-উল আলমের আত্মপ্রকাশ ঘটে। বইটি কলকাতা থেকে প্রকাশিত মাসিক মোহাম্মাদীতে প্রথম ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়, এবং এর মাধ্যমে তিনি পাঠকদের মনোযোগ আকর্ষণ করেন।
  • গোফসন্দেশ (১৯৫৩) – রম্যরচনা
  • চট্টগ্রামের ইতিহাস (১৯৫২)
  • বাঙ্গালি মুক্তিযুদ্ধের ইতিবৃত্ত – বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ওপর ভিত্তি করে চার খন্ডে রচিত একটি দালিলিক বই। বইটির জন্য তথ্য সংগ্রহ শুরু করেন বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পরপরই। তিনি বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সশরীরে উপস্থিত হয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী লােকজনের সাক্ষাৎকার নিয়ে তথ্য ও উপাত্ত সংগ্রহ করেন।

এছাড়া, ইউনেস্কো প্রকল্পের অধীনে, তিনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের উদ্ভিদ ও প্রাণীর বর্ণনা ও আবাসস্থল সম্বলিত অসংখ্য বই প্রকাশ করেছিলেন।

ব্যক্তিগত জীবন

চট্টগ্রাম কলেজে পড়াশোনা করার সময় আলম তার দূরবর্তী আত্মীয় জুলেখাকে বিয়ে করেছিলেন, যিনি সাত সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন এবং মারা যান (যার মধ্যে তিনজন শিশু কালে মারা যান)। মাহবুব-উল আলম পরে রাহেলা খাতুনকে বিয়ে করেন, যিনি ১১ সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন এবং ২৬ বছর ধরে বেঁচে ছিলেন। অবসর গ্রহণে পর, তিনি সামাজিক কর্মে আগ্রহী হন এবং ১৯৫৩ সালে ‘জমানা’ নামে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা বের করেন। পরবর্তীতে ১৯৫৬ সালে তা ‘দৈনিক জমানা’য় রূপান্তর ও প্রতিষ্ঠিত করেন। মাহবুব-উল আলম ১৯৮১ সালের ৭ আগস্ট চট্টগ্রামের কাজির দেউরীতে তাঁর নিজ বাড়িতে মারা যান। তাঁর মার্কিন লেখক-বন্ধু রবার্ট সি হ্যামক তার বই বেলো দ্য ললানো এস্তাকাদোতে তাঁকে নিয়ে একটি অধ্যায় লিখেন।

পুরস্কার

  • আদমজী সাহিত্য পুরস্কার (১৯৬৩)
  • বাংলা একাডেমী পুরস্কার (১৯৬৪)
  • প্রধানমন্ত্রী সম্মানন  পদক (১৯৬৫)
  • একুশে পদক (১৯৭৮)
Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here