বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়ম অনুযায়ী, সুস্বাস্থ্যের অধিকারী সব মানুষই স্বেচ্ছায় রক্তদান করতে পারবেন।

তবে এতে এমন কিছু শর্ত রয়েছে, যার ফলে রক্তদান নিয়ে ভুল ধারণা বা বিভ্রান্তি তৈরি হতে পারে।

এখানে এমন কিছু বিভ্রান্তি সম্পর্কে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে।

ভেজিটেরিয়ানরা স্বেচ্ছায় রক্ত দিতে পারেন না

এই শঙ্কাটা তৈরি হয়েছে রক্তে আয়রনের মাত্রার ওপর। ভেজিটেরিয়ান বা নিরামিষাশীদের খাদ্যে আয়রন কম থাকে বলে মনে করা হয়। কিন্তু আপনি যদি নিয়মিত সুষম খাদ্য গ্রহণ করেন তাহলে রক্তে আয়রন কম হওয়ার কোন কারণ থাকতে পারে না।

তবে আপনার রক্তে যদি আয়রন সত্যি কম থাকে, তাহলে নিরাপত্তার স্বার্থেই আপনাকে রক্ত দিতে দেয়া হবে না। বেশিরভাগ দেশে রক্তদানের আগে হিমোগ্লোবিন টেস্ট করে জেনে নেয়া হয় রক্তদানকারী অ্যানিমিয়ায় ভুগছেন কি না।

অসুস্থ, অন্তঃসত্ত্বা, শিশু কিংবা বয়োবৃদ্ধ হলে রক্ত দিতে পারবেন না

এই কথাটা সত্যি। যারা এইচআইভি পজিটিভ (এইডস আক্রান্ত), হেপাটাইটিস, সিফিলিস, টিবি, এবং রক্ত-বাহিত আরো কিছু রোগে যারা আক্রান্ত তারা রক্ত দান করতে পারবেন না।

ঢাকায় একটি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের রক্ত সংগ্রহ কর্মসূচি।ছবির কপিরাইটএসসিআই
Image captionঢাকায় একটি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের রক্ত সংগ্রহ কর্মসূচি।

ঠান্ডা, সর্দিজ্বর, খুশখুশে কাশি, পেট খারাপ থাকলেও রক্তদান করতে পারবেন না।

যে কোন অসুখ থেকে সম্পূর্ণভাবে সেরে ওঠার ১৪ দিন পর আপনাকে রক্তদান করতে দেয়া হবে।

আপনি যদি অ্যান্টিবায়োটিক নিয়ে থাকেন তবে কোর্স শেষ হওয়ার সাত দিন পর আপনি রক্ত দিতে পারবেন।

অন্যান্য ওষুধের ক্ষেত্রে একেক দেশে একেক রকম নিয়ম রয়েছে।

আপনি যদি অন্তঃসত্ত্বা কিংবা প্রসূতি হন, শিশুকে স্তন্যদান করেন, কিংবা আপনার যদি অ্যাবোরশন হয়ে থাকে, তাহলে রক্তে আয়রনের মাত্রা স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত আপনাকে রক্তদানের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।

রক্তদানের জন্য নূন্যতম বয়স হচ্ছে ১৬ বছর। বেশিরভাগ দেশে এই বয়সী তরুণদের রক্তদানের ক্ষেত্রে অভিভাবকের সম্মতি লাগে। রক্ত দেয়ার সময় এই বয়সী তরুণদের জ্ঞান হারানোর ঝুঁকিও বেশি থাকে।

নিয়মিত রক্তদানকারীদের কোন সর্বোচ্চ বয়সসীমা নেই। কোন কোন দেশে এটা ৬০-৭০ বছর।

যেসব দেশে গড় আয়ু কম সেখানে প্রথমবারের মতো রক্তদানকারীদের সম্পর্কেও সতর্ক হতে হয়।

‘ঝুঁকিপূর্ণ’ যেসব কাজ রক্তদানে বাধা হয়ে দাঁড়ায়

ঋতুস্রাবের সময়ও নারীরা রক্তদান করতে পারবেন।ছবির কপিরাইটGETTY IMAGES
Image captionঋতুস্রাবের সময়ও নারীরা রক্তদান করতে পারবেন।

জীবনে নানা ধরনের ঝুঁকি রয়েছে। রক্তদানের ক্ষেত্রে সেগুলো সমস্যা হতে পারে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, ‘ঝুঁকিপূর্ণ যৌনাচার’, যেমন বহুগামিতা, অর্থের বিনিময়ে যৌনসংগম, পুরুষ সমকামিতা ইত্যাদি রক্তদানে সমস্যা তৈরি করতে পারে। এক্ষেত্রে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পরই রক্তদানের অনুমতি দেয়া হয়। ইনজেকশনের মাধ্যমে যারা নেশা করেন তারাও রক্ত দিতে পারবেন না।

মশা-বাহিত ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু এবং যিকা ভাইরাসের প্রকোপ রয়েছে যেসব দেশে সেখান থেকে আসা কারও দেহ থেকে রক্ত নেয়ার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ রয়েছে।

অনেক দেশই এসব ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ কাজে নিয়োজিতদের কাছ থেকে রক্ত গ্রহণ করে না। তবে এক্ষেত্রে ব্যাপক-ভিত্তিক কোন নিষেধাজ্ঞা বৈষম্য তৈরি করতে পারে।

রক্তদান করলে কেউ মারা যায় না

দেহের ওজনের বিবেচনায় একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দেহে গড়পড়তা পাঁচ লিটার রক্ত থাকে। প্রতিবার রক্তদানের সেশনে ৫০০ মিলিলিটার করে রক্ত নেয়া হয়।

রক্তদানের পর ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নতুন রক্ত তৈরি হয়ে সেই ঘাটতি পূরণ করে।

কঠোর বিধিনিষধের কারণে সমকামী পুরুষদের জন্য স্বেচ্ছায় রক্তদান করা কঠিন।ছবির কপিরাইটGETTY IMAGES
Image captionকঠোর বিধিনিষধের কারণে সমকামী পুরুষদের জন্য স্বেচ্ছায় রক্তদান করা কঠিন।

সব মিলিয়ে যদি…

  • আপনি সুস্থ ও সবল হন
  • আপনার ওজন ৫০-১৬০ কেজি হয়
  • আপনার বয়স ১৮ থেকে ৬৬ বছর হয়
  • অন্তঃসত্ত্বা বা সন্তানকে স্তন্যদান না করেন
  • এইচআইভি সংক্রমণ না থাকে
  • গত ১২ মাসে আপনি কোন ‘ঝুঁকিপূর্ণ কাজ’ না করে থাকেন

… তাহলে স্বেচ্ছায় রক্তদানকারীর তালিকায় আপনার নামও উঠতে পারে।

সূত্র : বিবিসি নিউজ : এবি/টিআর ১৩-৬-২০১৯

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here