স্বাস্থ্যবিধির চাপে ‘নিষ্প্রাণ’ এবারের শারদীয় দুর্গাপূজা। যদিও এবার শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে হেমন্তে।
‘অকালকালের এ পূজাকে ঘিরে মন্দিরে, মণ্ডপে প্রস্তুতি থাকলেও, সেখানে নেই প্রাণের উচ্ছ্বাস। মহাকারি করোনা মোকাবিলায় পূজা আয়োজন হবে সীমিত পরিসরে। উৎসব-সংশ্লিষ্টতা বাদ দিয়ে সাত্ত্বিক পূজায় সন্তুষ্ট থাকতে হবে দশভূজা দেবী দুর্গার ভক্তদের।
খবর বাংলানিউজের
বুধবার (২১ অক্টোবর) বোধনের মধ্য দিয়ে শারদীয় দুর্গাপূজার ঢাকে পড়বে কাঠি।
দক্ষিণায়নের নিদ্রিত দেবী দুর্গার নিদ্রা ভাঙার জন্য বন্দনাপূজার মধ্য দিয়ে দেবীর বোধন হবে। বুধবার পঞ্চমী তিথিতে সায়ংকালে অর্থাৎ সন্ধ্যায় এই বন্দনাপূজা অনুষ্ঠিত হবে।
তবে পূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে বৃহস্পতিবার (২২ অক্টোবর) মহাষষ্ঠী থেকে। দেবী দুর্গার আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে শুরু হবে পূজার আনুষ্ঠানিকতা। ২৩ অক্টোবর মহাসপ্তমী, ২৪ অক্টোবর মহাষ্টমী, ২৫ অক্টোবর মহানবমী এবং ২৬ অক্টোবর বিজয়া দশমী ও প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে পাঁচ দিনের দুর্গাপূজা।
এর আগে গত ১৭ সেপ্টেম্বর মহালয়ার মধ্য দিয়ে সূচনা হয়েছিল দেবীপক্ষের। প্রতি বছর দেবীপক্ষের শুরুর সপ্তাহবাদে দুর্গাপূজা শুরু হলেও ‘মল মাস’ বা অশুভ মাসের কারণে এবার দুর্গাপূজা শুরু হচ্ছে মহালয়ার ৩৫ দিন পার করে।
সনাতন পঞ্জিকা মতে, এবার দেবী দুর্গা এবার দোলায় (পালকি) চেপে স্বর্গালোক থেকে মর্ত্যলোকে (পৃথিবী) আসবেন। এর ফল হচ্ছে মড়ক। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, রোগ ও মহামারির বেড়ে যাওয়ার লক্ষণ। দেবী বিদায় নেবেন গজে (হাতি) চড়ে। এর ফল হিসেবে শস্যপূর্ণা হয়ে উঠবে বসুন্ধরা।
কে কে কতগুলো ঠাকুর দেখেছে এ প্রতিযোগিতা এগিয়ে থাকতে রাজধানীর পুরান ঢাকায় যাওয়ার বিকল্প নেই। তাঁতিবাজার, শাঁখারীবাজার, সূত্রাপুর, কোতোয়ালি রোড, বাংলাবাজারসহ হিন্দু অধ্যুষিত পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকার মণ্ডপ-মন্দিরগুলোতে প্রতি বছর পূজার মাসখানেক আগে থেকেই লেগে যায় উৎসবের রঙ। কিন্তু এবার সেই পুরান ঢাকা অনেকটাই নীরব।
ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা মেনে পূজার প্রস্তুতি চললেও, সেখানে নেই উৎসবের ছোঁয়া। আলোকসজ্জা আর সাজসজ্জার কোনো চাকচিক্যের দেখা মেলেনি কোথাও।
মহাষ্টমীর দিন সকাল মানেই রামকৃষ্ণ মিশন আর সেখানকার কুমারী পূজা। কিন্তু ভিড়ের কারণে করোনার প্রার্দুভাব বাড়তে পারে, সেই আশঙ্কায় বাতিল করা হয়েছে কুমারী পূজাও।
রামকৃষ্ণ মিশনের মহারাজ স্বামী হরিপ্রেমানন্দ এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, প্রতিবছরই মহাষ্টমীর সকালে কুমারীপূজা অনুষ্ঠিত৷ যাতে ভক্তদের উপস্থিতি থাকে সবচেয়ে বেশি৷ এ ভিড় এড়াতেই এবার আগেভাগেই কুমারীপূজা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে কুমারীপূজা বাতিল হলেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে দুর্গাপূজা হবে।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ জানিয়েছে, এ বছর সারাদেশে ৩০ হাজার ২৩১টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা হবে। গত বছর এ সংখ্যা ছিলো ৩১ হাজার ৩৯১টি। করোনার কারণে এবার এক হাজার ১৮৫টি পূজা কম হচ্ছে। ঢাকা মহানগরীতে গতবারের ২৩৭টি থেকে ৬টি কমে এবার ২৩১টি মণ্ডপে দুর্গাপূজার আয়োজন থাকছে।
পূজার সার্বিক প্রস্তুতির বিষয়ে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি মিলন কান্তি দত্ত বলেন, এবারে পূজামণ্ডপে ভক্তদের মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে৷ সেসঙ্গে শারীরিক নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে তবেই পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করতে হবে৷ সেসঙ্গে বরাবরের মতো এবার বিজয়া দশমীতে শোভাযাত্রা করে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া যাবে না৷ সেসঙ্গে ভক্তদের মধ্যে প্রতিদিনের পূজা শেষে প্রসাদ বিতরণ করা যাবে না৷
তিনি জানান, সপ্তমী তিথিতে দুপুর ১২টা ১মিনিটে সব মন্দিরে করোনামুক্তি ও সবার আরোগ্য কামনা করে বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে।