দীর্ঘ ১১ মাসের প্রতীক্ষার পর রহমত,বরকত ও মাগফিরাতের সওগাত নিয়া বিশ্ব মুমিন-মুসলমানের দ্বারে আবারও সমাগত সাম্য, সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি, ভ্রাতৃত্ব, মানবিকতা, ত্যাগ, সংযম ও আত্মশুদ্ধির মাস মাহে রমজান। গতকাল সন্ধ্যায় পশ্চিম আকাশে পবিত্র এই মাসের চাঁদ দেখা দেওয়ার পর আমাদের দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মধ্যে আনন্দের জোয়ার বইতে শুরু করে। গত রাত হতেই এশার নামাজের পর মসজিদে মসজিদে শুরু হয়েছে মাহে রমজানের অন্যতম অনুষজ্ঞ খতমে তারাবিহর জামাত। এরপর শেষ রাত্রে সেহরি খেয়ে রোজা শুরু করেছেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। এখন প্রতীক্ষা কখন ইফতারের সময় হবে। আমরা পূণ্যময় রমজানের এই শুভাগমনকে স্বাগত জানাই। খোশ আমদেদ মাহে রমজান, আহলান সাহলান মাহে রমজান।
আরবি ‘রামাদান’ শব্দটি ‘রামদ’ শব্দমূল হতে উদ্গত। এর আভিধানিক অর্থ দহন, জ্বালানো তথা পুড়িয়ে ভস্ম করা। রমজানের রোজা মানুষের কুপ্রবৃত্তি ও নফসের দাসত্ব জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দেয় বলে এই মাসের নাম হয়েছে রমজান। রমজানের এই রোজা পালনের ফলে দৈহিক ও আত্মিক উভয় দিক দিয়ে পরিশুদ্ধ হন একজন রোজাদার। অর্জন করেন বহু কাঙ্ক্ষিত তাকওয়া বা খোদাভীতি। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআন শরীফের সূরা বাকারার ১৮৩ নং আয়াতে রমজানের রোজার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য যে তাকওয়া অর্জন তা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় উল্লেখ করেছেন। এই তাকওয়া অর্জনের মাধ্যমে রোজাদারগণ বাকি এগারো মাস জীবন-যাপনে সুশৃঙ্খল হয়ে ওঠেন। এজন্য এই রমজানকে মুমিনের সাংবাত্সরিক প্রশিক্ষণের মাস হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
মুসলমানদের জীবনে রমজান মাস আল্লাহ তায়ালার দয়া, ক্ষমা ও পাপমুক্তির এক সুবর্ণ সুযোগ সৃষ্টি করে। এই মাসের শবে কদরে নাজিল হয়েছে মহাগ্রন্থ আল-কুরআন যা সহস্র মাস হতে উত্তম। এই কারণেও এই মাসের মর্যাদা ও তাৎপর্য অপরিসীম। এই মাসে বেহেশতের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়, দোযখের দরজাসমূহ বন্ধ করা হয় এবং শয়তানকে বন্দি করা হয় জিঞ্জিরে (তিরমিযি, নাসাঈ ও ইবনে মাজা)। তারপরও যারা অন্যায়-অপকর্ম করেন, তা অভ্যাসগত কারণেই করেন। সাধারণত রোজা রেখে পাপকর্মের কোনো অবকাশ নেই। কেননা রোজাকে বলা হয় ‘জুন্নাতুন’ বা ঢাল স্বরূপ। এটি পরনিন্দা, ঝগড়া-বিবাদ, দুর্নীতি-অনিয়ম, অশ্লীলতা, ব্যাভিচার, বেহায়াপনা, অন্যায়-অত্যাচার ইত্যাদি পাপকাজ হতে বিরত রাখে। যে ব্যক্তি রোজা রেখেও এইসব পাপাচারে লিপ্ত হয়, রাসূলুল্লাহ (স) আল্লাহর নিকট তার রোজার কোনো দরকার নেই বলে উল্লেখ করেছেন। এতে তার উপবাস করা হবে মাত্র, রোজার প্রকৃত লক্ষ্য অর্জিত হবে না।
রমজানের রোজা অনুভব করায় ক্ষুধার্ত ও বঞ্চিত মানুষের কষ্ট। শিক্ষা দেয় মিতব্যয়িতার। ভোগ নহে, ত্যাগের আদর্শে আমাদের উদ্দীপ্ত করে। এ মাসে রাব্বুল আলামিন রোজাদারদের জন্য নেক আমলের সওয়াব ১০ হতে ৭০ গুণ পর্যন্ত বর্ধিত করেন। আবার রোজা শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই রাখা হয় বলে এর প্রতিদান দিবেন স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা। তিনি মাফ করে দিবেন রোজাদারের অতীতের সকল গুনাহ-খাতা। অতএব এই মাসে বেশি বেশি ইবাদত-বন্দেগি করা উচিত। আল্লাহ তায়ালা সঠিকভাবে আমাদের রমজানের রোজা এবং যাবতীয় সুন্নাত ও নফল ইবাদত পালনের তাওফিক দিন। আমিন।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here