৭-‘লাকি সেভেন’ যেভাবে
আবদুর রহিম
গবেষকেরা লক্ষ করেছেন যে, ১-১০ এর মধ্যে সবচেয়ে সহজে যে সংখ্যাটি মনে রাখা যায়, সেটি হলো ৭। শুধু একজন নয়, একসঙ্গে অনেক মানুষকে ১-১০ এর মধ্যে একটি সংখ্যা বলতে বললে বেশির ভাগ মানুষ ৭–এর কথাই বলে।
গবেষকেরা জানান, ৭ এমন একটি সংখ্যা, যেটিকে মানুষ প্রাকৃতিকভাবেই মনে রাখে বা রাখতে পারে। কোনো কোনো গবেষক এবং গণিতজ্ঞ বিশ্বাস করেন যে ৭ সংখ্যাটির মধ্যে এমন কোনো প্রাকৃতিক ব্যাপার রয়েছে, যে কারণে এটি নিজেই নিজেকে শুভ ইচ্ছা ও আকাঙ্ক্ষার জন্য বিশেষভাবে আকর্ষণীয় করে তুলেছে।
সৌভাগ্যের প্রতীক সংখ্যা ৭—পৃথিবীর বিভিন্ন সংস্কৃতিতে এই ধারণাটির রয়েছে সুদীর্ঘ ইতিহাস। মানুষ খেয়াল করে দেখেছে যে প্রকৃতিতে ৭ সংখ্যাটির একটি গুরুত্ব রয়েছে। যেমন ৭ দিনে এক সপ্তাহ, রংধনুতে ৭টি রং; এশিয়া, আফ্রিকা, উত্তর আমেরিকা, দক্ষিণ আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপ এবং অ্যান্টার্কটিকা এই ৭টি মহাদেশ রয়েছে পৃথিবীতে। এ ছাড়াও রয়েছে প্রাচীন ও মধ্যযুগের ৭টি করে বিস্ময়।
বিভিন্ন ধর্মের সঙ্গে ৭ সংখ্যাটির রয়েছে এক শক্তিশালী যোগাযোগ। যেমন- খ্রিষ্টান ধর্মে রয়েছে গর্ব, ক্ষুধা, রিরংসা, দ্বেষ, অতিভোজন, ক্রোধ, আলস্য এই ৭টি মহাপাপ। এই ৭টি মহাপাপ থেকে মুক্ত হতে পারলে তিনি সৌভাগ্যবান। এ ছাড়া খ্রিষ্টধর্মে পৃথিবী সৃষ্টির গল্পে বলা হয়েছে, ঈশ্বর ছয় দিনে পৃথিবী সৃষ্টি করে সপ্তম দিনে বিশ্রাম নিয়েছিলেন। অর্থাৎ মোট ৭ দিনে পৃথিবী সৃষ্টি হয়েছে। ইহুদি ধর্মমতে, বলা হয়েছে স্বর্গ ৭টি। এ ছাড়া সনাতন ধর্মে বিয়ের সময় পবিত্র আগুনকে কেন্দ্র করে ৭ পাক ঘোরার নিয়ম রয়েছে। জাপানিজ সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধি, স্বাস্থ্য, দীর্ঘ জীবন এবং সৌভাগ্যের জন্য ৭ জন ‘লাকি গড’ রয়েছে।
গাণিতিকভাবে ৭ সংখ্যাটির রয়েছে বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য, যে কারণে এটি কিছু মানুষের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। যেমন এটি বেজোড় সংখ্যা। জোড় সংখ্যাকে সহজেই দুই দিয়ে ভাগ করা যায়। কিন্তু বেজোড় সংখ্যাকে যায় না। এ জন্য এটি ‘প্রাইম নাম্বার’। অর্থাৎ ৭ সংখ্যাটিকে শুধু ৭ এবং ১ দিয়ে ভাগ করা যায়। এটি ১-১০ এর মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রাইম নাম্বার। এ কারণে কিছু মানুষ ৭ সংখ্যাটিকে পছন্দ করেন। এ রকম বিভিন্ন কারণে সারা পৃথিবীর মানুষ ৭ সংখ্যাটিকে সৌভাগ্যের সংখ্যা মনে করে। বাঙালি সংস্কৃতিতেও ৭ সংখ্যাটিকে সৌভাগ্যের সংখ্যা হিসেবে ধরা হয়।