আলোকিত ডেস্ক: সুপার ওভারের রোমাঞ্চে প্রথমবার ওয়ানডে বিশ্বকাপের শিরোপা ঘরে তুললো ইংল্যান্ড। চরম নাটকীয়তায় ভরা এই ম্যাচটি টাই হলে পরে সুপার ওভারে গড়ায়। সেখানেও টাই হওয়ায় দু’দলের বাউন্ডারি হিসেব করে ট্রফির উদযাপনে মাতে ইংলিশরা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
নিউজিল্যান্ড-২৪১/৮
ইংল্যান্ড-২৪১ (অলআউট),
সুপার ওভার দু’দল ১৫ করে রান তোলে।
এর আগে ২৪২ রানের টার্গেটে শেষ ওভারের নাটকীয়তায় সুপার ওভারে যায় ইংল্যান্ড বনাম নিউজিল্যান্ডের ফাইনাল। এর ফলে ওয়ানডে বিশ্বকাপ ইতিহাসে প্রথমবার এমন ঘটনার সাক্ষী হলো বিশ্ব ক্রিকেট।
শেষ ওভারে ইংল্যান্ডের জয়ের জন্য ১৫ রান দরকার ছিল। ট্রেন্ট বোল্টের করা ওভারের প্রথম দুটি বল স্ট্রাইকের থাকা বেন স্টোকস ডট দেন। তৃতীয় বলে তিনি ছক্কা হাঁকান ও চতুর্থ বলে দৌড়ে দুই রান নেওয়ার পর মার্টিন গাপটিল থ্রো করলে স্টোকসের গায়ে লেগে বাউন্ডারি হয়। যোগ হয় ছয় রান।
পঞ্চম বলে এক রান নেওয়ার পর নন স্ট্রাইকে থাকা আদিল রশিদ রান আউটের শিকার হন। শেষ বলে জয়ের জন্য দুই রান দরকার হলে স্টোকস দুই রান নিতে গেলে, এবার মার্ক উড রান আউট হন। ম্যাচ টাই হয়। গড়ায় সুপার ওভার
সুপার ওভারে নিয়ম অনুযায়ী দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করা ইংল্যান্ডই প্রথমে ব্যাটিংয়ে আসে। যেখানে ৬ বলে যথাক্রমে ব্যাটিংয়ে নামা স্টোকস ও বাটলার তোলেন, ৩, ১, ৪, ১, ২ ও ৪। বোলিংয়ে ছিলেন কিউই পেসার ট্রেন্ট বোল্ট। আর নিউজিল্যান্ডের হয়ে ব্যাটিংয়ে নামা মার্টিন গাপটিল ও জেমস নিশাম জোফরা আর্চারের বলে তোলেন যথাক্রমে ওয়াইড, ২, ৬, ২, ২, ১, শেষ বলে দুই দরকার হলে এক রান করে রান আউট হন গাপটিল।
রোববার (১৪ জুলাই) ঐতিহাসিক লর্ডসে ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে মুখোমুখি হয় ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ড। যেখানে টসে জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন কিউই অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন।
কিউইদের দেওয়া ২৪২ রানের টার্গেটে ৮৪ রানে অপরাজিত থেকেই ইংলিশদের ইনিংস সুপার ওভারে নিয়ে যান স্টোকস। ৯৮ বলে ৫টি চার ও দুটি ছক্কা হাঁকান তিনি।
এর আগে বিপর্যয় কাটিয়ে ইংল্যান্ডকে শিরোপা জয়ের পথে নিয়ে যাচ্ছিলেন বেন স্টোকস ও জস বাটলার। পঞ্চম উইকেট জুটিতে তারা ১১০ রান তোলেন। তবে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ২০তম হাফসেঞ্চুরির তুলে লকি ফার্গুসনের দ্বিতীয় শিকারে মাঠ ছাড়েন বাটলার (৫৯)। ৬০ বলে ৬টি চারের সাহায্যে নিজের ইনিংস সাজান তিনি।
ইয়ন মরগানের বাজে শট, লকি ফার্গুসনের দুর্দান্ত ক্যাচ। আর এতেই ম্যাচের লাগাম নিজেদের দিকে টেনে নেয় নিউজিল্যান্ড। দলীয় ৮৬ রানে জেমস নিশামের বলে তুলে মারতে গিয়ে ফার্গুসনের তালুবন্দি হন ইংলিশ অধিনায়ক। ২২ বলে ৯ রান করেন তিনি।
ইংল্যান্ডের টপঅর্ডারের তিন ব্যাটসম্যানকে বিদায় করে ম্যাচে ফেরে নিউজিল্যান্ড। ওপেনার জনি বেয়ারস্টো লকি ফার্গুসনের শিকারে পরিণত হন। ৫৫ বলে ৭টি চারে ৩৬ করে তিনি বোল্ড হন। এর আগে দারুণ ফর্মে থাকা জো রুট (৭) কলিন ডি গ্র্যান্ডহোমর বলে আউট হন।
হাফসেঞ্চুরি করতে পারলেই চলমান আসরে সাকিব আল হাসান ও বিরাট কোহলির সমান সর্বোচ্চ পাঁচটি ফিফটির রেকর্ড গড়তে পারতেন জেসন রয়। তবে ফাইনালে মাত্র ১৭ রানে বিদায়ে তা আর হলো না। ম্যাট হেনরির বলে বিধ্বংসী এই ব্যাটসম্যান উইকেটরক্ষক টম ল্যাথামের কাছে ক্যাচ দেন।
নিউজিল্যান্ড বোলারদের মধ্যে তিনটি করে উইকেট পান লকি ফার্গুসন ও জেমস নিশাম। এছাড়া হেনরি ও কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম একটি করে উইকেট দখল করেন।
এর আগে প্রথমে ব্যাট করা নিউজিল্যান্ড নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে ৮ উইকেট হারিয়ে ২৪১ রান করে। দলের হয়ে একমাত্র হাফসেঞ্চুরিটি আসে ওপেনার হেনরি নিকোলসের ব্যাট থেকে। তবে দারুণ বল করা ক্রিস ওকস ও লিয়াম প্ল্যাঙ্কেট কিউইদের স্কোর খুব বড় করতে দেননি।
কিউই ইনিংসের শুরুতে মাত্র ১৯ রানেই মাঠ ছাড়েন ডানহাতি ব্যাটসম্যান মার্টিন গাপটিল। প্রথম পর্বে কেবল মাত্র শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৭৩ রান ছাড়া পুরো বিশ্বকাপে বলার মতো রান আসেনি নিউজিল্যান্ড ওপেনার মার্টিন গাপটিলের ব্যাটে। সে ব্যর্থতার ধারাই ধরে রাখলেন ফাইনালেও।
কেন উইলিয়ামসন ফেরেন প্ল্যাঙ্কেটের বলে। দলীয় শতকের পর তার খেলা বল আলতো ছুঁয়ে ইংল্যান্ড উইকেটরক্ষকের হাতে যায়। আম্পায়ার নট আউট দিলেও শেষ পর্যন্ত রিভিউ নিয়ে উইকেটটি নিজেদের করে নেয় ইংল্যান্ড। উইলিয়ামসন ফেরেন ব্যক্তিগত ৩০ রানে। ৫৩ বলে এই ইনিংস খেলতে দুটি চার হাঁকান।
দলীয় সর্বোচ্চ রান করেন হেনরি নিকোলস। এই ওপেনার ৭৭ বলে ৪টি চারে ৫৫ করে প্ল্যাঙ্কেটের বলে বোল্ড হন। এটি তার ওয়ানডে ক্যারিয়ারের নবম হাফসেঞ্চুরি। পরে আরেক ভরসার ব্যাটসম্যান রস টেইলরকে ব্যক্তিগত ১৫ রানে এলবির ফাঁদে ফেলেন মার্ক উড।
লিয়াম প্ল্যাঙ্কেটের তৃতীয় শিকার হয়ে মাঠ ছাড়েন জেমস নিশাম। জো রুটের কাছে ক্যাচ দেওয়ার আগে ২৫ বলে ৩টি চারে ১৯ রান করেন তিনি।
নিউজিল্যান্ডের দলীয় দু’শ রান পার করতে সাহায্য করেন টম ল্যাথাম। ৫৬ বলে ৪৭ করে তিনি ওকসে শিকারে পরিণত হন। দুটি চার ও একটি ছক্কা হাঁকান তিনি।
ইংলিশ বোলারদের মধ্যে ওকস ও প্ল্যাঙ্কেট তিনটি করে উইকেট ভাগাভাগি করে নেন। এছাড়া আর্চার ও উড একটি করে উইকেট পান।