প্রবীণ, নবীন আর শিশুদের প্রকৃতির সান্নিধ্যে গিয়ে গভীরভাবে প্রকৃতিকে উপলব্ধি করার একমাত্র আশ্রয়স্থলের নাম, সিআরবি। আর সিআরবি হলো চট্টগ্রামের একটি হেরিটেইজ যেটি পুরো বাংলাদেশের মধ্যে অন্যতম এক নান্দনিক স্থান। এখন বাংলাদেশ রেলওয়ে সেখানে একটি হাসপাতাল নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু করে এই ‘ফুসফুস’ ধ্বংসের উদ্যোগ নিয়েছে।
সিআরবিতে পিপিপির আওতায় প্রস্তাবিত ১০০ আসনের একটি মেডিকেল কলেজ, ৫০ আসনের নার্সিং ইনস্টিটিউট এবং ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে নিঃসন্দেহে সেখানকার প্রাকৃতিক, সাংস্কৃতিক এবং ঐতিহাসিক স্থাপনা মারাত্মক হুমকির মধ্যে পড়বে। এখানে হাসপাতাল হলেই শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের নামে সড়কটি বিলীন হবে। পাশে থাকা সরকারি হাসপাতাল বন্ধ হবে। ভূ-গর্ভস্থ পানি উত্তোলনের কারণে ভূ-প্রকৃতি নষ্ট হবে এবং আশে পাশের পাহাড়ধস হবে। বর্তমানে সংরক্ষিত শতবর্ষি বৃক্ষগুলো নিধন হবে। সর্বপরি চিকিৎসা বান্ধব পরিবেশ তুলতে গিয়ে শিরীষতলার সাংস্কৃতিক আয়োজন বন্ধ হবে।
এখন প্রশ্ন হলো চট্টগ্রাম মানুষ কি হাসপাতালের বিরুদ্ধে? না! চট্টগ্রামের মানুষ হাসপাতালের বিরুদ্ধে নয় আবার রেলওয়ের বিরুদ্ধেও নয়। চট্টগ্রাম মানুষ নিজেদের ইতিহাস ও সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে সিআরবি অক্ষুন্ন থাকুক সে প্রাণের দাবি নিয়ে সোচ্চার হয়েছে। তাই এ লড়াই ব্যক্তির বিরুদ্ধে নয়, ব্যবস্থার বিরুদ্ধে। যারা সবুজ অরণ্য ধ্বংস করে হাসাপাতাল তৈরির ব্যবস্থা নিয়েছে তাদের বিরূদ্ধে এ আন্দোলন। চট্টগ্রামবাসী বীরের দল। এ দলকে পিছু হঠানো সহজ নয়। সুতরাং হাসপাতাল তৈরির ব্যবস্থা থেকে সরে আসায় হবে একটি উত্তম কাজ। এখানে আছে শত বছরের অধিক প্রাচীন রেইনট্রি, গর্জনসহ অনেক বৃক্ষ। হাসপাতাল নির্মিত হলে শতবর্ষী বৃক্ষসহ অনেক গাছ কাটা পড়বে।
প্রকৃতির এমন নৈসর্গিক স্থানে হাসপাতালের বিষাক্ত বজ্যের স্ত‚প তৈরি হবে। প্রকৃতি এবং ঐতিহ্য ধ্বংস করে বাণিজ্যিক স্থাপনা তৈরি করার এমন পরিকল্পনা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। আমাদের সবার মনে রাখা উচিত যে সিআরবি হলো চট্টগ্রামের ফুসফুস। জীবন ও প্রকৃতিতে পরিপূর্ণ এমন একটি সামাজিক, প্রাকৃতিক এবং ঐতিহাসিক জায়গায় কংক্রিটের স্থাপনা নির্মাণ করার পরিকল্পনা অত্যন্ত দুঃখজনক। ঐতিহ্য আর প্রকৃতি ঘেরা নান্দনিক সৌন্দর্যমÐিত সিআরবি ধ্বংসের পরিকল্পনাকারীদের শুভ চিন্তার উদয় হোক।