আলোকিত প্রতিবেদক :
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে চলতি বছরের শুরু থেকেই ‘নিষ্ক্রিয়’ দলকে চাঙা করার মিশনে নামে বিএনপি। উঠোনবৈঠক, মানববন্ধন, বিক্ষোভ, সংবাদ সম্মেলন, টকশো এবং সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যাপক প্রচারণা চালায় দলটি। এসব কর্মসূচির মধ্যে খালেদা জিয়ার মুক্তি, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ বেশ কিছু দাবি থাকলেও মূলত সরকার পতনের লক্ষ্যেই ভেতরে ভেতরে কাজ করে বিএনপি।
এদিকে দলটির এসব তৎপরতার মধ্যে বিশেষ করে বিদেশে লবিং-তদবিরে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য বিএনপি ব্যর্থ চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ ক্ষমতাসীনদের। তবে বছরের শেষদিকে এসে বিভাগীয় গণসমাবেশ করে নেতাকর্মীদের চাঙা করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে দলটি।
নেতাকর্মীদের চাঙা করার ‘মিশন’ :
২০১৪ সালের পর ২০১৮ সালের নির্বাচনে হেরে যাওয়ায় বিএনপি নেতাকর্মীদের মনোবল ভেঙে যায়। মাঠেও তেমন একটা দেখা যায়নি দলটিকে। তখন অনেকের ধারণা, বিএনপির মধ্যে ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। কারণ, দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দণ্ডিত এবং তারেক রহমান দেশে না থাকায় নেতাকর্মীরা ‘নিষ্ক্রিয়’ হয়ে পড়েছে! নেতৃত্ব দেওয়ার কেউ না থাকায় যুগপৎ আন্দোলনেও ব্যর্থ দলটি। তবে, ছোটখাট নানা কর্মসূচি দিলেও কোনোটাই হালে পানি পায়নি। বরং বিএনপি নেতাদের ‘ঈদের পর’, ‘রোজার পর’ কর্মসূচি’ সংক্রান্ত বক্তব্য নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা প্রায়ই কটাক্ষ করেন। তবে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে চলতি বছরের শুরু থেকে তৃণমূল নেতাকর্মীদের চাঙা করতে বিভিন্ন কৌশল বাস্তবায়নের চেষ্টা করেন দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা। এতে কিছুটা সুফলও পেয়েছেন নেতারা।
বিবিসি বাংলা’র এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, নেতাকর্মীদের চাঙা করার পেছনে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের ভূমিকা বেশি সাঁড়া জাগিয়েছে।
বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক নাসির উদ্দিন আহমেদ অসীম বিবিসিকে জানান, কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত বিএনপির প্রতিটি স্তরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ তৈরি করেছেন তারেক রহমান, যা বিএনপিকে এই দুঃসময়েও চাঙা করে তুলেছে।
চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে বিদেশ পাঠানো ও মুক্তির দাবি :
দুর্নীতি মামলায় দীর্ঘদিন করাগারে থাকার পর ২০২০ সালে করোনা বেড়ে গেলে মানবিক বিবেচনায় শর্ত সাপেক্ষে সরকার নির্বাহী আদেশে খালেদার সাজা স্থগিত করে মুক্তি দেয়। কিন্তু মুক্তি পেলেও শর্ত থাকায় দলীয় কোনো কর্মকাণ্ডে বেগম জিয়া অংশগ্রহণ করতে পারছেন না। এমন অবস্থায় খালেদা জিয়ার স্থায়ী মুক্তি ও বিদেশে সুচিকিৎসার দাবি জানায় বিএনপি। এই দাবিতে বারবার রাজপথে নামার ঘোষণা দিলেও কার্যকর কোনো আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি দলটি।
চলতি বছরেও পরিবারের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠাতে সরকারের কাছে বাবরবার আবেদন করা হয়। তাতে ফলও আসেনি।
জোট গঠনে তৎপরতা :
জাতীয় সরকার গঠনের আশা দেখিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে যারা যুগপৎ আন্দোলন করতে ইচ্ছুক রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে চলতি বছরের ২৪ মে সংলাপ শুরু করে বিএনপি। আন্দোলনের চূড়ান্ত রূপরেখা ঠিক করতেই দলটির এই সংলাপ।
সংলাপ শেষে বিএনপি বলেছেন, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে একমত হতে পেরেছেন তারা। তবে, ছোট কিছু দল বিএনপির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করলেও সম্প্রতি জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান জানান, তারা বিএনপির সঙ্গে জোটে আর নেই। বিএনপি পক্ষ থেকে প্রথমে এ বিষয়ে কেউ মুখ না খুললেও ঢাকায় বিএনপির গণসমাবেশের আগে গত ৮ ডিসেম্বর মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের কোনো জোট নেই। আমরা বলেছি, অন্য দলগুলো গণতন্ত্রের জন্য তাদের নিজস্ব কর্মসূচি পালন করবে। এসব কর্মসূচি পালিত হবে একই সঙ্গে, যাকে আমরা যুগপৎ বলে থাকি।
তবে, রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচনের আগে বিএনপি বিভিন্ন কৌশলে চলছে। জামায়াতের সঙ্গে জোটে না থাকার কথাও কৌশল হতে পারে। নির্বাচনের আগে এমন অনেক কিছুই হয়। এখনই নিশ্চিত হয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না।
আলোচিত ১০ ডিসেম্বর :
নেতাকর্মীদের চাঙা করে গত ১২ অক্টোবর চট্টগ্রাম থেকে বিভাগীয় সমাবেশে শুরু করে বিএনপি। দলটির বিগত রাজনৈতিক কর্মসূচিগুলোর তুলনায় যা ব্যতিক্রম ছিল।
এরপর যথাক্রমে গত ২২ অক্টোবর খুলনা, ২৯ অক্টোবর রংপুর, ৫ নভেম্বর বরিশাল, ১২ নভেম্বর ফরিদপুর, ১৯ নভেম্বর সিলেট, ২৬ নভেম্বর কুমিল্লায় ও ৩ ডিসেম্বর রাজশাহীতে গণসমাবেশ করে বিএনপি। তবে, ১০ ডিসেম্বর ঢাকার মহাসমাবেশ ঘিরে ব্যাপক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে ঢাকায় সমাবেশের প্রায় দেড় মাস আগে দলটির নেতা আমানউল্লাহ আমানের এক বক্তব্যে রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে। আমান বলেন, ১০ ডিসেম্বর থেকে দেশ চলবে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নির্দেশে।
এরপর থেকে ১০ ডিসেম্বর যত ঘনিয়ে আসছিল রাজনৈতিক অঙ্গনে ততই উত্তেজনা বাড়ছিল। কেউ বুঝতে পারছিল না ১০ ডিসেম্বর আসলে কী হতে যাচ্ছে। বিএনপি কী ঢাকায় সমাবেশ করতে পারবে, ক্ষমতাসীন দলের ভূমিকা কী থাকবে, রাজধানীতে দুই দলের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে কী না, সরকার কী ক্ষমতা ছেড়ে দেবে, ইত্যাদি। এমন নানান প্রশ্ন সাধারণ মানুষের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছিল।
এ সবের মধ্যেই ঢাকায় বিএনপির সমাবেশের ভেন্যু নিয়ে সরকার ও বিএনপির মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়। বিএনপি নয়াপল্টনে সমাবেশ করতে চাইলেও সরকারের পক্ষ থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বা যেকোনো মাঠে করার কথা বলা হয়। তবে নয়াপল্টনেই সমাবেশ করতে অনড় অবস্থানে থাকে বিএনপি। এ নিয়ে বিতর্ক ও আলোচনার মধ্যেই গত ৭ ডিসেম্বর বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে একজনের মৃত্যু এবং অনেকেই আহত হন।
এরপর বিএনপি কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে বিএনপির বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতাসহ বহু নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ নিয়ে কয়েকদিন টানটান উত্তেজনা চলে। সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে সমাবেশের অনুমতি পায় বিএনপি। শেষপর্যন্ত সমাবেশ থেকে সংসদ ভেঙে দেওয়াসহ ১০ দফা দাবি জানিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ শেষে করে দলটি।
বিএনপির সংসদ সদস্যদের পদত্যাগ :
২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গড়ে ভোটে অংশ নিয়েছিল। সেই নির্বাচনে বিএনপির ৬ জন বিজয়ী হন। পরে সংরক্ষিত নারী আসনের একটি পায় দলটি। নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ তুলে শুরুতে বিএনপি জানিয়েছিল, তারা সংসদে যাবে না। পরে সিদ্ধান্ত বদলে শপথ নেন দলটির সংসদ সদস্যরা। কিন্তু দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় গত ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির সমাবেশ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন বিএনপির সংসদ সদস্যরা।
এরপর দিন (১১ ডিসেম্বর) স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর কাছে সশরীরে পদত্যাগপত্র জমা দেন বিএনপির সংসদ সদস্য মো. আমিনুল ইসলাম, মো. মোশাররফ হোসেন, গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ, জাহিদুর রহমান, রুমিন ফারহানা এবং আবদুস সাত্তার। তবে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য হারুন অর রশিদ দেশের বাহিরে থাকায় সশরীরে আসতে না পারায় তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ হয়নি। তবে, দেশে ফিরেই ২২ ডিসেম্বর স্পিকারের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন তিনি। এর মধ্য দিয়ে বিএনপির সব সংসদ সদস্য পদত্যাগ করেছেন।
পদত্যাগ করা বিএনপির এমপিরা জানান, বর্তমান সংসদ মহাজোট সরকারের দলীয় কার্যালয়ে পরিণত হয়েছে। এ সংসদকে অবিলম্বে বিলুপ্ত করতে হবে। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে।
এ দিকে পদত্যাগের দিনই বিএনপির ৬ সংসদ সদস্যের আসন শূন্য ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে সংসদ সচিবালয়। এসব আসনে আগামী ১ ফেব্রুয়ারি উপনির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতে বিএনপির ২৭ দফার রূপরেখা-
‘রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতে গত ১৯ ডিসেম্বর ২৭ রূপরেখা ঘোষণা করে বিএনপি। দ্বাদশ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির এই রূপরেখা আলোচনার জন্ম দেয়। আওয়ামী লীগ নেতা ওবায়দুল কাদের বলেন, রাষ্ট্রকে মেরামতে বিএনপির রূপরেখা হাস্যকর স্ট্যান্টবাজি। তারা ক্ষমতায় এলে রূপরেখা বাস্তবায়ন হবে না। তারা এলে এই রূপরেখা নদীতে ভেসে যাবে।
২৭ দফা রূপরেখার সংক্ষিপ্ত রূপ হলো-
১. একটি ‘সংবিধান সংস্কার কমিশন’ গঠন করে বর্তমান অবৈধ আওয়ামী লীগ সরকারের গৃহীত সব অযৌক্তিক, বিতর্কিত ও অগণতান্ত্রিক সাংবিধানিক সংশোধনী ও পরিবর্তনসমূহ রহিত ও সংশোধন করা।
২. প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধের রাজনীতির বিপরীতে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে একটি অন্তর্ভূক্তিমূলক ‘রেইনবো নেশন’ প্রতিষ্ঠা কর।
৩. ‘নির্বাচনকালীন দলনিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার’ ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হব।
৪. রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার নির্বাহী ক্ষমতায় ভারসাম্য আন।
৫. পরপর দুই টার্মের বেশি কেউ রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না।
৬. জাতীয় সংসদে ‘উচ্চ কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা’ প্রবর্তন করা হবে। সংসদ হবে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট।
৭. সংসদ সদস্যদের স্বাধীনভাবে মতামত প্রদানের সুযোগ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন করার বিষয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হবে।
৮. বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন-২০২২ সংশোধন করা হবে।
৯. সকল রাষ্ট্রীয়, সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান পুনর্গঠন করা হবে৷ শুনানির মাধ্যমে সংসদীয় কমিটির ভেটিং সাপেক্ষে এইসব প্রতিষ্ঠানের সাংবিধানিক ও গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দেওয়া হবে।
১০. বিচার বিভাগের কার্যকর স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হবে৷ বর্তমান বিচারব্যবস্থার সংস্কারের জন্য একটি ‘জুডিশিয়াল কমিশন’ গঠন করা হবে।
১১. একটি ‘প্রশাসনিক সংস্কার কমিশন’ গঠন করে প্রশাসন পুনর্গঠন করা হবে।
১২. মিডিয়ার সার্বিক সংস্কারের লক্ষ্যে একটি ‘মিডিয়া কমিশন’ গঠন করা হবে।
১৩. দুর্নীতির ক্ষেত্রে কোন আপস করা হবে না৷ অর্থ-পাচার ও দুর্নীতি অনুসন্ধান করে একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করা হবে। সংবিধান অনুযায়ী ন্যায়পাল নিয়োগ করা হবে।
১৪. সর্বস্তরে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা হবে। বিশ্বজনীন মানবাধিকার নীতি অনুযায়ী মানবাধিকার বাস্তবায়ন করা হবে।
১৫. বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি ‘অর্থনৈতিক সংস্কার কমিশন’ গঠন করা হব।
১৬. ‘ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার’ এই মূলনীতির ভিত্তিতে প্রত্যেক ধর্মাবলম্বী নিজ নিজ ধর্ম পালনের পূর্ণ অধিকার ভোগ করবে।
১৭. মুদ্রাস্ফীতির আলোকে শ্রমজীবী মানুষের ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করা হব।
১৮. বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ খাতে দায়মুক্তি আইনসহ সকল কালাকানুন বাতিল করা হব।
১৯. বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেয়া হবে। বাংলাদেশ ভূখণ্ডের মধ্যে কোনো প্রকার সন্ত্রাসী তৎপরতা বরদাশত করা হবে না এবং কোনো সন্ত্রাসবাদী তৎপরতা আশ্রয়-প্রশ্রয় পাবে না। সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অপব্যবহারের মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদকে রাজনৈতিক ঢাল বা হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে এবং সন্ত্রাসবাদের তকমা লাগিয়ে ভিন্নমতের বিরোধী শক্তি এবং রাজনৈতিক বিরোধী দল দমনের অপতৎপরতা বন্ধ করা হলে প্রকৃত সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করে এবং আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেয়া সম্ভব হবে।
২০. দেশের সার্বভৌমত্ব সুরক্ষায় প্রতিরক্ষা বাহিনীকে সর্বোচ্চ দেশপ্রেমের মন্ত্রে উজ্জীবিত করে গড়ে তোলা হবে।
২১. ক্ষমতার ব্যাপক বিকেন্দ্রীকরণের লক্ষ্যে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে অধিকতর স্বাধীন, শক্তিশালী ও ক্ষমতাবান করা হব।
২২. রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের একটি তালিকা প্রণয়ন করা হবে এবং তাদের যথাযথ রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ও স্বীকৃতি প্রদান করা হব।
২৩. যুবসমাজের ভিশন, চিন্তা ও আকাঙ্খাকে ধারণ করে আধুনিক ও যুগোপযোগী যুব-উন্নয়ন নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে। এক বছরব্যাপী অথবা কর্মসংস্থান না হওয়া পর্যন্ত, যেটাই আগে হবে, শিক্ষিত বেকারদের বেকার ভাতা দেয়া হবে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধি বিবেচনা করা হবে।
২৪. নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি গ্রহণ করা হব। জাতীয় সংসদে মনোনয়নের ক্ষেত্রে নীতিগতভাবে নারীদের প্রাধান্য দেওয়া হবে।
২৫. চাহিদা-ভিত্তিক ও জ্ঞানভিত্তিক শিক্ষাকে প্রাধান্য দেওয়া হবে।
২৬. ‘সবার জন্য স্বাস্থ্য’ এই নীতির ভিত্তিতে যুক্তরাজ্যের আদলে সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা প্রবর্তন করা হবে।
২৭. কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা হবে।
বিএনপি নেতারা বলছেন, সম্প্রতি দলটির কর্মসূচি থেকে সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি, ঐক্য দৃঢ় হওয়া, তৃণমূলের আনুগত্য প্রদর্শন ও আত্মবিশ্বাস বহুগুণ বেড়েছে। শুধু তাই নয়, এসব কর্মসূচি আগামীতে যুগপৎ আন্দোলনের রসদ জোগাবে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবেদিন ফারুক বলেন, আমরা প্রমাণ করেছি বিএনপির মধ্যে ঐক্যের ঘাটতি নেই। সরকারকেও বার্তা দিতে পেরেছি- কোনো বাধা এখন আর আমাদের জন্য বাধা নয়। সবচেয়ে বড় হলো আমাদের কর্মীরা এখন নেতৃত্ব দেওয়ার শক্তি ও সক্ষমতা অর্জন করেছে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান বলেন, এই সরকারের দুঃশাসন ও অপশাসনের বিরুদ্ধে আমরা যুদ্ধ শুরু করেছি। এই যুদ্ধে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটিয়ে আমরা রাজপথ ছাড়ব, ইনশাআল্লাহ।
তিনি বলেন, সারাদেশকে আন্দোলনের পাদপীঠে নিয়ে যেতে হবে। আর কোনো উত্তর-দক্ষিণ নয়, সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে রাজপথের আন্দোলনে নামতে হবে। বিজয় অতি সন্নিকটে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, দীর্ঘ ১৪ বছর ক্ষমতায় না থাকা দলটি (বিএনপি) আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে তৎপর হয়ে উঠেছে। প্রায় তিন মাস ধরে সাংগঠনিক বিভাগগুলোতে সমাবেশের মধ্যদিয়ে বড় ধরনের জমায়েত করে সরকারকে ক্ষমতা ছাড়তে বার্তা দিচ্ছে তারা।