নিজস্ব প্রতিবেদক

বাধাহীন যানবাহন চলাচল ও সার্বিক নিরাপত্তায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের দুই পাশে দুটি থানা, ট্রাফিক পুলিশের অফিস ও একটি পুলিশ ইউনিট স্থাপনসহ ২৮ প্রস্তাবনা দিয়েছিল চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)। টানেলের নির্মাণ কাজ অনেকটা শেষ পর্যায়ে। ইতিমধ্যে ৯৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। উদ্বোধনের সময় ঘনিয়ে এলেও প্রস্তাবিত থানা দুটির অনুমোদন মেলেনি এখনো। বাড়তি পুলিশ দিয়ে পতেঙ্গা ও কর্ণফুলী থানা বর্তমানে টানেলের নিরাপত্তার বিষয়টি দেখভাল করছে।

তবে উদ্বোধন হয়ে গেলে টানেলের নিরাপত্তার বিষয়টি দুই থানার পক্ষে তদারকি করা অনেক কঠিন হয়ে যাবে। টানেলের দুই প্রান্তে আনোয়ারা ও নগরীর পতেঙ্গা অংশে নতুন দুই থানার প্রস্তাবনার বিষয়টি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে বলে জানিয়েছেন নগর পুলিশের উপকমিশনার (ডিসি-এস্টেট) এস এম মোস্তাইন হোসাইন। তিনি বলেন, টানেল উদ্বোধনের আগে থানার অনুমোদন হলে কার্যক্রম শুরু করা যেত।

গত বছরের নভেম্বর মাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের টোল প্লাজার এপ্রোচ রোডের দু’পাশ হতে চুরি হয়েছিল ২৫ শ মিটার তার। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে দুই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছিল কর্ণফুলী থানা পুলিশ। কর্ণফুলী থানার ওসি দুলাল মাহমুদ জানান, প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরের টানেলের নিরাপত্তা দেয়া কর্ণফুলী থানার পক্ষে অনেক কঠিন। তারপরও আমরা বাড়তি জনবল দিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। যমুনা কিংবা পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের আগেই থানার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। একইভাবে বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধনের আগেই থানার কার্যক্রম শুরু হলে নিরাপত্তার জন্য ভাল হত।

ডিসি-এস্টেট এস এম মোস্তাইন হোসাইন জানান, টানেলের দুই প্রান্তে দুটি থানার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। থানা অনুমোদনের বিষয়টি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে প্রক্রিয়াধীন। পতেঙ্গা প্রান্তে টানেলের আন্ডার পাসের পাশে এবং আনোয়ারা প্রাান্তে যে স্থান দিয়ে টানেল থেকে যানবাহন বের হবে তার পাশে নতুন থানা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। টানেলে যানবাহন চলাচলে সুষ্ঠ ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা এবং সার্বিক নিরাপত্তায় ২৮টি প্রস্তাবনার কথা জানিয়ে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের কাছে ইতিমধ্যে সিএমপির পক্ষ থেকে চিঠি দেয়া হয়েছে।

গত বছরের ৩ মার্চ সেতু কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো সিএমপির চিঠিতে বলা হয়েছে, নগরীর বাংলাদেশ নেভাল একাডেমির পাশ দিয়ে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। এ টানেলের নির্মাণকাজ শেষ হলে টানেল ব্যবহারকারী সব ধরনের যানবাহন বর্তমান নক্সায় বিদ্যমান গোলচত্ত্বর দিয়ে চলাচল করবে। এছাড়া গোল চত্ত্বরের অতি কাছের পতেঙ্গা এলাকার আঞ্চলিক যোগাযোগের সব ধরনের যানবাহনকে এ গোলচত্ত্বর ব্যবহার করতে হবে। চট্টগ্রাম সিটি আউটার রিং রোড, লালখানবাজার হতে পতেঙ্গা পর্যন্ত নির্মাণাধীন এলিভেটেট এক্সপ্রেসওয়ে, কাটগড়মুখী পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত রোড, বিমানবন্দর সড়ক এবং পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতমুখী সব ধরনের যানবাহন ও পথচারী একই গোলচত্ত্বর ব্যবহার করবে। ফলে গোলচত্ত্বর কেন্দ্রিক যানজট সৃষ্টি হবে এবং টানেলমুখী যানবাহন চলাচল বাধাগ্রস্ত হবে।

এছাড়া টানেলের পতেঙ্গা প্রান্তে রয়েছে শাহ আমানত বিমানবন্দর, চট্টগ্রাম বন্দর, সিইপিজেড, কর্ণফুলী ইপিজেড, নির্মাণাধীণ বে-টার্মিনাল ও মিরসরাই ইকোনোমিক জোন। আনোয়ারা প্রান্তে রয়েছে সিইউএফএল, কাফকো, কেইপিজেড, চায়না ইপিজেড, পার্কি সি বিচ। কক্সবাজার জেলার মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মাতারবাড়ি টার্মিনাল, কক্সবাজার, টেকনাফ ও সেন্টমার্টিনগামী যানবাহন টানেল দিয়ে চলাচল করবে। ভবিষ্যতে এ টানেল সংযোগকারী রোড মিয়ানমার হয়ে ট্রান্সএশিয়ান হাইওয়ের সাথে যুক্ত হবার সম্ভবনা রয়েছে।

ডিসি-এস্টেট মোস্তাইন বলেন, পদ্মা সেতু কিংবা যমুনা সেতুর দুই পাশে দুটি থানা রয়েছে। সেতু উদ্বোধনের আগেই থানার কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। থানাগুলো শুধুমাত্র সেতুর নিরাপত্তার বিষয়টি দেখভাল করে। কারণ সেতুর দুই পাশে কোন জনবসতি নেই। কিন্তু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের প্রবেশ মুখের দুই পাশেই জনবসতি রয়েছে। টানেলের পূর্বপ্রান্তে অর্থাৎ আনোয়ারা উপজেলার বৈরাগ, বারশত, রায়পুর ও বড় উঠান নিয়ে বঙ্গবন্ধু টানেল পূর্ব থানা আর নগরীর সিটি কর্পোরেশনের দক্ষিণ পতেঙ্গা ওয়ার্ড নিয়ে বঙ্গবন্ধু টানেল পশ্চিম থানা করার প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে বাড়তি পুলিশ দিয়ে টানেলের নিরাপত্তা দেয়া হচ্ছে।

টানেল উদ্বোধনের আগেই থানার অনুমোদনের প্রয়োজনীয়তার কথা জানিয়ে ডিসি-এস্টেট মোস্তাইন বলেন, টানেল উদ্বোধন হলে পতেঙ্গা কিংবা আনোয়ারা থানার পক্ষে নিরাপত্তার বিষয়টি দেখভাল করা কঠিন হয়ে পড়বে। প্রস্তাবিত নতুন দুই থানার অনুমোদন পাওয়া গেলে বাড়তি জনবল পাওয়া যেত। থানা ভবন পরে হলেও টানেল এলাকায় থাকা ভবনগুলোতে থানার কার্যক্রম শুরু করা যেত বলে ডিসি-এস্টেট জানান।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here