রাজধানীর কুর্মিটোলা এলাকায় সড়কের পাশের ঝোপের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতকে শনাক্ত ও তাকে ধরতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার সুদিপ্ত কুমার চক্রবর্তী।

সোমবার (৬ জানুয়ারি) দুপুরে কুর্মিটোলা গলফ ক্লাবের পাশের রাস্তায় সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন। ধর্ষককে শনাক্ত করতে পুলিশ মাঠে নেমেছে বলেও জানান তিনি।

সুদিপ্ত কুমার চক্রবর্তী বলেন, ‘আমরা ঘটনার জন্য আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি। ঘটনাটি নিবিড়ভাবে তদন্ত করা হচ্ছে। অপরাধীকে খুঁজে বের করার জন্য আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছি। আলামত হিসেবে ভিকটিমের বস্ত্র পাওয়া গেছে, একটি ঘড়ি, দুটি ইনহেলার, একজোড়া জুতা, বইসহ আরও কিছু আলামত সিআইডি সংগ্রহ করেছে। তারা পরীক্ষা করার পর বিস্তারিত বলা যাবে।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ভিকটিমের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে অভিযুক্ত একজন। এই এলাকাটি অনেক ব্যস্ত। এখানে সাধারণত সবাই রানিংয়ে থাকেন। জায়গাটা নির্জন হওয়ায় এ ঘটনা ঘটাতে সাহস পেয়েছে অপরাধী। এই এলাকায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া আছে।’

এই ঘটনায় ভিকটিমের বাবা ক্যান্টনমেন্ট থানায় মামলা করেছেন বলেও জানান এই উপ-কমিশনার।

অন্যদিকে, সিআইডি ক্রাইম সিনের পুলিশ পরিদর্শক আমিনুল ইসলাম আলামত সংগ্রহের পর বলেন, ‘ঝোপের মধ্যে ইউনিভার্সিটির বই, চাবির রিংসহ চাবি, ইনহেলার, গ্যাস লাইটার, কালো প্যান্ট, টুপি, জুতা, ঘড়িসহ কিছু আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। এগুলো ল্যাবে পাঠানো হবে।’

অন্যদিকে, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশেরও একটি দলও ঘটনাস্থল পর্যবেক্ষণ করেছেন।

‘চারদফা ধর্ষণের শিকার মেয়েটি, টিপে ধরা হয়েছিল গলা’

‘একটা বাচ্চা মেয়ে, তার ছোট্ট শরীরে অনেকগুলো মারাত্মক জখমের চিহ্ন। গলা টিপে ধরা হয়েছিল। সেখানেও কালশিটে দাগ । আমাদের মেয়েটা এখন মানসিকভাবে ভীষণ বিপর্যস্ত–ওর পাশে বেশিক্ষণ দাঁড়াতে পারিনি। ও অনেক কিছু বলতে চাচ্ছিল।’

সোমবার (৬ জানুয়ারি) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার (ওসিসি) থেকে বেরিয়ে যাবার সময় কথাগুলো বলছিলেন মেয়েটির বিভাগের শিক্ষিকা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি আবাসিক হলের হাউজ টিউটর।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই শিক্ষিকা বলেন, ‘মেয়েটাকে চারদফায় ধর্ষণ করা হয়েছে। কি বলব, কি করব বুঝতে পারছি না। অসহায় লাগছে। ওর বাবা-মা আছেন এখন ভেতরে। তাদেরই বা কি বলে সান্ত্বনা দেব? ’

এই শিক্ষিকা বেরিয়ে যাবার পরপরই ওসিসির তালবদ্ধ কলাপসেবল গেটের ওপারে কাঁচের দরজা একটু ফাঁকা হলো। সেখানে এসে দাঁড়ালেন একজন মধ্যবয়সী নারী। দরজার এপাশে আইনজীবী পরিচয়ে দাঁড়িয়ে থাকা একজনের সঙ্গে দেখা করলেন। ৩০ সেকেন্ডের মতো কথা হলো। নিরাপত্তাকর্মী এসে দরজা বন্ধ করে দিলেন।

পরে সেই আইনজীবীর পরিচয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মেয়েটি আমার ভাগ্নি। আর যার সঙ্গে কথা বললাম তিনি আমার বোন। আমার বোন ও দুলাভাই ঢাকার বাইরে থাকেন। কাল রাতেই মেয়ের খবর শুনে এসেছেন।’

ভাগ্নি কেমন আছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ও তো ভেতরে, আমাদের যাওয়া নিষেধ, একটু আগে শুনলাম ঘুমাচ্ছে। লাইফ থ্রেট নেই। কিন্তু ট্রমাটাইজড। আমার বোন আর দুলাভাই কিভাবে এতো শক্ত আছেন জানিনা। আমরা সবাই শক্ত থাকার চেষ্টা করছি। প্লিজ খবরে আমাদের নাম ঠিকানা দেবেন না।’

গতকাল রাত থেকে মেয়েটির সঙ্গে ওসিসিতে থাকা এক সহপাঠির বড়বোন বলেন, ‘ওর শরীরে অনেক আঘাত, প্রচণ্ড ব্যথাও আছে। গলাসহ সারা শরীরে আঘাতের চিহ্ন। ওকে অনেক মারপিট করা হয়েছে । মানসিকভাবে শক্ত রাখার চেষ্টা করছি।’

ওসিসির থেকে বেরিয়ে আসা একজন সিনিয়র নার্সও জানালেন, ‘মেয়েটার শরীরে অনেক জখমের চিহ্ন। সব ধরণের পরীক্ষা নিরীক্ষা চলছে। মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। ভেতরে ডাক্তার-কাউন্সিলর সবাই আছেন। তাকে কোনো ধরনের প্রশ্ন করছি না আমরা। নিজে থেকে কিছু বললে শুনছি।’

সোমবার সকাল থেকেই ওসিসির সামনের গেটে নিরাপত্তাকর্মীরা হিমশিম খাচ্ছেন ভিড় সামলাতে। বিশ্ববিদ্যালিয়ের শিক্ষক, পুলিশের বিভিন্ন টিম, আইনজীবীরা আসছেন একের পর এক দল বেধে। বাইরে থাকা গণমাধ্যমকর্মীদের ব্রিফ করছেন দফায় দফায়। কখনও দল বেধে আসছেন বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।

ভিড় সামলাতে দুুপুরে ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের সামনের দরজায় নিরাপত্তাকর্মীর সংখ্যা বাড়িয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল( ডিএমসি) কর্তৃপক্ষ।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here