ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকার ব্যবসা করতে আসেনি। আমরা এসেছি ব্যবসায়ীদের সবরকম সহযোগিতা দিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগ সম্প্রসারিত করে জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ গড়তে।

তিনি বলেন, ‘আপনাদের কাছে আমার দাবি- এই দেশকে আপনারা আরও উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসাবে গড়ে তুলবেন। দেশের উন্নয়নের গতিটা যেন আর কখনো থেমে না যায়, স্বাধীন বাংলাদেশ যেন বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে।’

রোববার (১সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রফতানি বাণিজ্যে অবদানের জন্য সেরা রফতানিকারদের ট্রফি প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) যৌথ উদ্যোগে এই ট্রফি প্রদান অনুষ্ঠান হয়।

দেশের রপ্তানি বাণিজ্য উৎসাহিত করার পাশাপাশি সুষ্ঠু প্রতিযোগিতার পরিবেশ তৈরির লক্ষ্যে সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিবছর ব্যবসায়ীদের রফতানি ট্রফি দেওয়া হয়। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রফতানি বাণিজ্যে সেরা ৬৬ রফতানিকারককে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ট্রফি তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী। ২৮টি ক্যাটাগরিতে এই ট্রফি দেওয়া হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৭৫-এর ২১ বছর পর যখন আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে তখন থেকেই এদেশের মানুষের অগ্রযাত্রায় আমরা বিশেষভাবে ভূমিকা রাখতে শুরু করি। তবে প্রথম পাঁচ বছর খুব অল্প সময় ছিল। আমাদের যতটুকু সাধ্য ছিল আমরা ততটুকু উন্নতি করেছিলাম। কিন্তু পাঁচ বছর পরে ক্ষমতায় আসতে পারিনি। এরপর আবার আটটি বছর এই দেশ অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে থাকে। ৮বছর পর নির্বাচনে জয়ী হয়ে ২০০৯ সালে সরকার গঠন করি। এরপর থেকে আমাদের প্রচেষ্টা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং উন্নত ও সমৃদ্ধ করা। ’

যার ফলে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘গত দশ বছরে আমরা বাজেট দিয়েছি এবং উন্নয়নমূলক কাজ করছি। আজ কিন্তু আমাদের অর্থনীতি পরনির্ভরশীল না। আমরা নিজের পায়ে দাঁড়াবার মতো প্রস্তুতি নিয়ে কাজ শুরু করেছি এবং আজ আমরা নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছি। এখন আমরা যে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করি, সেটার ৯০ভাগ কিন্তু নিজস্ব অর্থায়নে করতে সক্ষম হই।’

সরকার গঠন করার পর থেকে বেসরকারি খাতকে সবচেয়ে বেশি সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রতিটি ক্ষেত্রই বেসরকারি খাতকে উন্মুক্ত করে দিয়েছিলাম। কারণ সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতও এগিয়ে আসবে এবং তারা অর্থনীতিতে অবদান রাখবে। সাথে সাথে ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে। সেই লক্ষ্যে নীতিমালা নিয়েই কাজ শুরু করি। ফলে সেই সুযোগটা যেমন ব্যবসায়ীরা পান, সেইসঙ্গে দেশের মানুষও তার সুফলটা ভোগ করতে পারে।’

আওয়ামী লীগ সরকার ব্যবসাবান্ধব সরকার দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০১৯-২০ অর্থবছরে আমরা ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯ কোটি টাকার বাজেট দিয়েছি। এই বাজেট দেওয়ার সক্ষমতা অর্জন করেছি। এখানে আমাদের কিন্তু বৈদেশিক সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল হতে হয়নি। এর অধিকাংশটাই আমাদের নিজস্ব অর্থায়নে দিতে পেরেছি। যা জিডিপির ১৮ দশমিক এক শতাংশ।

বৈশ্বিক মানদণ্ডে বাংলাদেশের জিডিপি বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন অর্থনৈতিক সূচকে এগিয়ে যাওয়া নিয়ে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর জরিপের কথা তোলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য রয়েছে ২০২৩-২৪ অর্থবছর অর্থাৎ সরকারের শেষ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ডাবল ডিজিটে নিয়ে যাওয়া। সেই আশা আমাদের আছে। সেভাবেই আমরা পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি।’

উন্নয়নশীল দেশের কাতারে পৌঁছানোর কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে আমরা যে অর্জনটা করতে পেরেছি সেটা ২০২৪ সাল পর্যন্ত আমাদের ধরে রাখতে হবে। তবে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ধরে রাখার যে সমস্ত সূচক সেটা কিন্তু আমরা এরই মধ্যে অর্জন করে ফেলেছি। তারপরও আমরা বলব, আমাদের মাথাপিছু আয় আরও বাড়াতে পারব এবং সেই লক্ষ্য নিয়ে, পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রফতানির ক্ষেত্রে আমাদের নতুন নতুন পণ্য সংযোজন করতে হবে। সেই সাথে পৃথিবীর কোন দেশে কোন পণ্যের চাহিদা বেশি সেই দিকে বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে। পাশাপাশি রফতানিযোগ্য পণ্য বিশ্ববাজারে সম্প্রসারণের জন্যও ব্যবসায়ীদের উদ্যোগ নিতে হবে।’

বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদের বাধার প্রসঙ্গ তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি জানি, আমাদের ব্যাংকে ঋণ নিতে গেলে অনেক উচ্চ হারে সুদ দিতে হয়।(ডাবল ডিজিটে)। এরই মধ্যে আমরা নির্দেশ দিয়েছি, সেটা সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনতে হবে। কিছু কিছু ব্যাংক মেনেছে, কিছু কিছু ব্যাংক মানেনি এখনও। তবে সেটা নিয়ে আলাপ-আলোচনা হচ্ছে। ’

তিনি আরও বলেন, ‘কথায় বলে- বাণিজ্য বসতের লক্ষ্মী। এটা মাথায় রেখে আমাদের বাণিজ্য বাড়াতে হবে। সে ব্যাপারেও আপনারা যথাযথ পদক্ষেপ নেবেন। আমরা নতুন পণ্য যেন নতুন দেশে রফতানি করতে পারি, আমাদের বাজারটা যাতে আরও সম্প্রসারিত হয় সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে।’

২০২০ জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ও ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা মুজিববর্ষ ঘোষণা করেছি। বাংলাদেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। আরও উন্নত করতে চাই। দারিদ্র্য ও ক্ষুধামুক্ত সোনার বাংলাদেশ গড়তে চাই। বাংলাদেশ বিশ্বে যে সম্মানটা অর্জন করেছে সেই সম্মানটা ধরে রেখে আমরা উন্নত সমৃদ্ধ দেশ গড়ে তুলতে চাই। ’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে পাস্তান থেকে আমরা দেশকে মুক্ত করেছি। ওই সময় তারা বলেছিল, ঠিক আছে, ও (বাংলাদেশ) দেশের মানুষ শুধু গরীব। ওটা একটা বোঝা ছিল; চলে গেছে, ভালো হয়েছে। আর আজ তারা বলতে বাধ্য হয়, আমাদের বাংলাদেশের মত উন্নত করে দাও।

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তৃতা করেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি তোফায়েল আহমেদ, মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. মফিজুল ইসলাম, বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান বেগম ফাতিমা ইয়াসমিন।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here