প্রকাশ: ১৯/০১/২০২১

মো. তাজুল ইসলাম রাজু
চট্টগ্রামসহ সারাদেশে সাহিত্য ও সংস্কৃতি অঙ্গনের প্রিয়মুখ, বাংলাদেশ পুলিশ প্রশাসনের নন্দিত একজন চৌকশ কর্মকর্তা, নজরুল গবেষক ও গীতিকার-সুরকার, বোয়ালখালীর কৃতিসন্তান মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী আর নেই (ইন্না লিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাহি রাজেউন)। তিনি ৬৮বছর বয়সে ২৯ জানুয়ারী ২০২১ তারিখ ভোরে রাজধানীর এক বেসরকারী হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি দুই ছেলে দুই মেয়ে সহ অসংখ্য গুনগ্রাহী রেখে যান।

সংগঠন ও সাহিত্য প্রেমী মানুষদের প্রিয় সজ্জন মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর মৃত্যুতে আমরা গভীর শোক প্রকাশ করছি এবং শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি জানাচ্ছি আন্তরিক সমবেদনা।

গত ১৬ আগস্ট ২০১২ তারিখে আলোকিত বোয়ালখালী পত্রিকায় মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী’র একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশ করা হয়েছিল। তাঁর স্মৃতির উদ্যেশে এই সাক্ষাৎকারটি পুণঃপ্রকাশ করা হলো- মো. তাজুল ইসলাম রাজু, সম্পাদক, আলোকিত বোয়ালখালী।

সম্পাদকের মুখোমুখি জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী
অনেক তাকানাে হলাে, আসুন এবার দেখি

… মােহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী একজন পুলিশ কর্মকর্তা। প্রায় জনের কাছে তিনি ওসি জাহাঙ্গীর হিসেবে পরিচিত। পুলিশি চাকুরীর শুরুতে ওসি পদে দায়িত্ব পেয়েছেন। বলে নতুবা নিজ থানায় ওসিগিরি করাতে এমনটি হয়েছে মর্মে ধারনা করেন তিনি। তবে কোথাও কোথাও কবি জাহাঙ্গীর নামেও পরিচিতি। এ নামে তিনি বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে একাধিক সম্মাননাও গ্রহন করেছেন। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে থানা পুলিশকে সাধারণ মানুষ খুব একটা ভালাে চোখে দেখে না। কদাচিত হামলা মামলায় জড়িয়ে গেলে পুলিশি আচরণ থেকে রক্ষা পেতে হয়তাে এমনটি হয়। এতে জাহাঙ্গীর সাহেবের মরতবা আলাদা। পুলিশি কঠিন দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তিনি দেশের এ প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তের থানায় যােগ দিয়ে সাধারণ মানুষের হয়ে, সরকারের হয়ে কাজ করেছেন। পাশাপাশি সাহিত্যচর্চা করে অন্য এক ভূবনেও নিজেকে জিইয়ে রেখেছেন। সর্বশেষ সিএমপি এডিশনাল ডেপুটি পুলিশ কমিশনার প্রসিকিউশন হিসেবে চট্টগ্রামে দায়িত্ব পাল করেছেন। কঠিন যে কাজ তিনি করে চলেছেন, তা হলাে লেখালেখি।

… অনেক মানুষ কথা বলতে পারে কিন্তু ভাষণ দিতে পারে না। আবার অনেক মানুষ অনর্গল বক্তৃতা দিতে পারে কিন্তু লিখতে পারে না। আবার অনেকে লিখতে পারে ভাল বক্তব্য দিতে পারেনা। এ ক্ষেত্রে জাহাঙ্গীর সাহেব সফল। কোথাও লেখালেখীর জন্য, কোথাও পেশাদার কাজকে জনবান্ধব করার জন্য সম্মাননা পদক, গুণীজন সম্বর্ধনা পেয়ে নিজের জীবনের স্বাদ পরিপূর্ণতার দিকে এগিয়ে ছিলেন।

… জনাব জাহাঙ্গীর চৌধুরীর জন্ম আমাদের বােয়ালখালীর কধুরখীল গ্রামে ১৯৫৩ সালের ৫ মে। বাবা হাজী শামসুল আলম চৌধুরী, মা জারিয়া খানম। শিক্ষার্জন করেছেন কধুরখীল সিকদারিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়, কধুরখীল মুসলিম হাই স্কুল, কধুরখীল হাই স্কুল, কানুনগােপাড়া কলেজে। বাবা থাকতেই সারােয়াতলীতে নিজস্ব বাড়ী স্থানান্তর করে । এখন সেখানেই বসবাস করেছেন। আলােকিত বােয়ালখালীর সাথে একান্ত সাক্ষাতে তিনি বলেছেন কিছু মর্মস্পর্ষি, মর্মভাবনা, মর্মচেতনার কথা ছাড়াও নিজের জীবনে ঘটে যাওয়া আনন্দ বেদনার কাব্যাংশ।

… দুই ছেলে দুই মেয়ের জনক জাহাঙ্গীর চৌধুরীর কথােপকথন থেকে আমাদের পাঠকদের জন্য চুম্বক অংশ তুলে ধরতে আগ্রহি হলাম।

…সাবেক এমপি মঈনু উদ্দিন খান বাদলের বাবা জনাব আহমদ উল্লাহ খানের সক্রিয় অনুপ্রেরণায় তিনি পুলিশে যােগ দেন ১৯৭২সালে ২০ ডিসেম্বর। সরাসরি এসআই পদে যােগ দিয়ে সারদা পুলিশ একাডেমির প্রশিক্ষণে মেধা তালিকায় স্থান অর্জন করে সিলেট জেলায় শিক্ষানবীশ অফিসার হিসেবে গােয়াইনঘাট থানায় যােগদান করেন। সেখান থেকে বড়লেখা, কুলাউড়ায় দায়িত্ব পালনের সময় স্থায়ী পদোন্নতি পেয়ে চট্টগ্রামে নিজ থানা বােয়ালখালীতে । ওসি হিসেবে যােগ দেন। এবার দায়িত্ব পালন। করলেন সুনামগঞ্জের তাহিরপুর, ছাতক, ধরমপাশা, কমলগঞ্জ, বাহুবল। ফেনীর পরশুরাম। খাগড়াছড়ির পানছড়ি, মাটিরাঙা। চট্টগ্রামের হলিশহর। নােয়াখালীর চাটখিল, হাতিয়া, কোম্পানিগঞ্জ। চাঁদপুরের হাইমচর ও উত্তর মতলব থানায়। পদোন্নতি পেয়ে ফেনী সদর জেলা বিশেষ শাখার ডিআইওয়ান, নেত্রকোনা সিনিয়র এএসপি সার্কেল, সিএমপি গােয়েন্দা শাখা, সিআইডি খাগড়াছড়ি, । এএসপি খুলনা, এএসপি ডিএসবি কক্সবাজার শেষে বর্তমান চট্টগ্রামে। ..চাকুরি ক্ষেত্রে উল্লেযােগ্য ঘটনা হলাে- নিজ থানায়ওসি হিসেবে দায়িত্ব পালন। নিজ দায়িত্ব নিয়ে দুইটি নতুন থানার উদ্বোধন যথাক্রমে চট্টগ্রামের হালিশহর ও চাঁদপুরের উত্তর মতলব। চাকরি জীবনে চট্টগ্রামে – বিভিন্ন পদে চারবার পােষ্টিং পাওয়া বাংলাদেশে সর্বপ্রথম কোন পুলিশ কর্মকর্তা। একাধিক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পদক পাওয়া, তিনবার পরপর পার্বত্য এলাকায় পােষ্টিং। তিনবার জাতিসংঘ মিশনে গমন ১৯৯৩ সালে কম্বােডিয়া, ২০০৭ সালে পূর্ব তিমুর ও ২০১১ সালে হাইতি।

…তিনি ব্যক্তি ও কর্ম জীবনে প্রশাসনিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও শিক্ষা ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য একাধিকবার একাধিক সংগঠনের পক্ষ থেকে অসংখ্যবার বিভিন্ন পদকে ভূষিত হয়েছেন। তন্মধ্যে উল্লেখযােগ্য হলাে- মাদার তেরেসা এ্যাওয়ার্ড, । জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী পদক, স্বাধীনতা পদক ২০০৯, ‘৭১এর স্মৃতি পদক ২০০৯, এশিয়ান জার্ণালিস্ট এ্যাওয়ার্ড ২০০৮, বাংলাদেশ মানবাধিকার ফোরাম সম্মাননা ০৯, শের-এ বাংলা ফজলুল হক স্মৃতি পদক, হােসেন শহীদ সােহরাওয়ার্দী পদক, বেগম রােকেয়া স্মৃতি পদক, স্বাধীন বাংলা সংসদ সম্মাননা, শেরে বাংলা এ্যাওয়ার্ড, পদ্মকুঁড়ি এ্যাওয়ার্ড ও খুলনা । সাহিত্য একাডেমী কতৃক সাহিত্য এ্যাওয়ার্ড । ইত্যাদি।

… আমি ছাত্রজীবন থেকে সাহিত্যানুরাগী ছিলাম। নিজের তাগিদেই লেখালেখি করি। পুলিশের চাকরি, সময়ের যে ব্যস্থতা, তাতেও যেন আমার কলম থেমে নেই। এ প্রতিকুল পরিবেশে মাঝরাতেও আমি সাহিত্যচর্চা করি। আমার যত আড্ডা সব সাহিত্য আর ধর্ম নিয়ে। এটি আমার মনে দাগ কেটেছে এই ভেবে যে, জীবনকে প্রাণ ছাড়াও বাঁচিয়ে রাখা যায় এ লেখালেখির মাধ্যমে। ধর্মীয় ও সাহিত্য চর্চার মাধ্যমে।

…পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে অনেক খ্যাত-বিখ্যাত ব্যক্তিদের পেয়েছি। তা থেকে এটা অবশ্য ভিন্ন যে, লেখালেখির কারনে বিখ্যাত কারাে না কারাের কাছাকাছি বসার সুযােগ হয়েছে, মতবিনিময় হয়েছে, সেটাও কম কিসে।

…আমার লেখা নিয়ে ১৯৯৩ সালে প্রথম যে বইটি প্রকাশিত হয় সেটির নাম “জয় পরাজয়”। পরে আরাে ৪টি বই প্রকাশিত হয়। নাম “অগ্নিশিখা” (১৯৯৪), “দ্বীপশিখা” (১৯৯৫), “বিজয়ের নেশা” (২০০৬), “আমি সৃজন করি” (২০০৭)। এখন প্রকাশের অপেক্ষায় আছে “নবী শ্রেষ্ঠ মােহাম্মদ (সঃ)” (জীবনী), “আমি ও.সি বলছি” (আত্ম জীবনী), “সাম্পানের মাঝি” (গীতি কাব্য) “দেখে এলাম ঘুরে এলাম” (ভ্রমন কাহিনী)। মুলত নিজের আত্মার তাগিতেই এ কাজটি করা। সমাজের এমন এক স্থানে আমাদের মতাে পুলিশ কর্মকর্তাদের অবস্থান, তাতাে বর্ণনা করা সম্ভব তাে নয়ই বরং তা হতে মানুষকে মনের কথা বলতেই এটুকু চর্চা মাত্র। …সংবাদ মাধ্যম আমার খুব পছন্দ। কারন সংবাদ মাধ্যমের কারনে আজ আমার এত পরিচিতি। আমার অনেক সাংবাদিক বন্ধু আছেন যারা আমাকে এ বিষয়ে অনুপ্রেরণা দেয় এবং নিজের সুন্দর ও পাঠক গ্রহণযােগ্য লেখাগুলাে প্রকাশের ব্যবস্থা করেন। আমি তাদের প্রতি অসীম কৃতজ্ঞ।

…পুরস্কার তাকে দেয়া হয় যে প্রতিযােগিতায় অংশগ্রহণ করে বিজয় হয়। সংবর্ধনা আর পদক তাঁকে দেয়া হয় যে স্ব-স্ব ক্ষেত্রে সমাজের-রাষ্ট্রের জন্য বিশেষ কিছু অবদান রেখে থাকেন। আমি জানি, আমি কিছুই করিনি। তবুও আমি মনে করি আয়ােজকরা আমরা কর্মপরিধিকে খুব কাছ থেকে দেখেছে, অনুধাবন করেছে,হৃদয়াঙ্গম করেছে। আয়ােজকদের যে ক্যাটাগরি তাতে হয়তাে আমি ছিলাম, আমার কাজ ছিল, সে কারনে মনােনীত হতে পারি। আমি তাদের (শ্রদ্ধা রেখে বলছি) প্রতিও কৃতজ্ঞ। তারা আমার কর্মপরিধিকে মূল্যায়ন করেছেন। বলে।

…১৯৬৬ থেকে ছাত্র ইউনিয়নের সাথে যুক্ত হয়ে জীবনে ঘটে অনেক ঘটনা। এতে উল্লেখযােগ্য হলােমুক্তিযুদ্ধে পতাকাসহ ডেমি রাইফেল নিয়ে বােয়ালখালীর ইকবাল পার্ক মাঠে প্রথম আয়ুব ঘোষিত কারফিউর বিরুদ্ধে মিছিলে অংশগ্রহণ। নেতৃত্ব দেন এস এম হাসান। সাক্ষাত ঘটে বহু বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গের সাথে। তৎমধ্যে ১৯৭২ সালে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ঢাকা বাসভবনে একান্ত সান্নিধ্যে যাওয়া আমার জীবনের পরম পাওয়া। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাষানী, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, স্বাধীন বাংলার পরিচালক আবুল কাশেম সন্দিপী, জাতি সংঘের প্রধান মাহবুব মােরশেদ, সেক্টর কমান্ডার রফিকুল ইসলাম বীর বিক্রম, অধ্যাপক আসহাব উদ্দিন, ব্যারিস্টার সলিমুল হক মিল্কি, পুর্ণেন্দু দস্তিদার প্রমুখ ব্যক্তিদের সাথে। বিভিন্ন সময় নানা অনুষ্ঠানে পদক ও সম্মাননা নেয়া এবং আলােচনায় অংশ নেয়া খ্যাতনামা ব্যক্তিগণ হলেন- ড. এমাজ উদ্দিন, বেদুইন সামাদ, কবি নির্মলেন্দু গুণ, কবি আল মাহমুদ, অধ্যাপক মােজাফফর আহমেদ, চলচ্চিত্রকার সুভাষ দত্ত, কবি নুরুল হুদা সহ আরাে অনেকে। সরাসরি জড়িত ছিলেন- রিমিঝিমি সাহিত্য পরিষদ, আলােছায়া ফাউন্ডেশান, মদিনা মিশন, খুলনা গাঙচিল সাহিত্য পরিষদ, মােহনা সাহিত্য ও শিল্পী গােষ্ঠি, খুলনা সাহিত্য একাডিমি, আনােয়ারা ডায়াবেটিক হাসপাতাল প্রমুখ সংগঠনের উপদেষ্ঠা পদে। এছাড়াও আজীবন সদস্য চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল এবং পরিচালক পদে দি সিটি ল্যাবরেটরি স্কুল এন্ড কলেজে।

…আমরা যারা ১৯৭১-এ তরুণ ছিলাম তারা ভেবেছিলাম যে, বাংলাদেশের জন্মের মধ্য দিয়ে রাজনীতির সঙ্গে সংস্কৃতির কোনাে ব্যবধান থাকবে না। রাজনীতি ও সংস্কৃতি পরস্পরের কাছে দেবে আর নেবে, মিলিবে মেলাবে এবং উভয়েই পরস্পরের দ্বারা ঋদ্ধ হবে। কিন্তু চল্লিশ- বিয়াচল্লিশ বছর পরে দেখছি, তা তাে হয়নি, উল্টো উভয়ই পরস্পর পরস্পর থেকে দূরে সরে গেছে এবং তাদের মধ্যে কেবল ব্যবধান বেড়েছে। রাজনীতির সঙ্গে সংস্কৃতির যেমন কোনাে যােগ নেই, তেমনি সংস্কৃতি ও রাজনীতির অনাত্মীয় হয়ে গেছে। একইভাবে সাধারণত কিছু কিছু রাজনীতিকরা হয়ে পড়েছেন সংস্কৃতিবােধশূন্য এবং সাহিত্য ও সংস্কৃতির যারা চর্চা করছেন তারা রাজনীতিকে অনাকাঙ্খিত ভাবছেন। সে সঙ্গে বিদেশী সংস্কৃতির আগ্রাসনে দেশীয় সংস্কৃতি গ্রাস করে চলেছে উপেক্ষাকৃত ভাবে। এই বাস্তবতায় রাজনীতিই শুধু ব্যবসা হয়ে ওঠেনি, সংস্কৃতিও নানা ক্ষেত্র ও মাত্রায় পণ্য হয়ে উঠেছে।

…পুলিশের চাকরি! এমন একটা দায়িত্ব যেখানে সকল পেশার মানুষ সম্পৃক্ত থাকে। ফলে আমাদের । দেশে সামাজিক চিত্র যে কত ভয়াবহ তা একজন । পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে অনেক ধারণার পাশপাশি। অভিজ্ঞতাও অর্জিত হয়েছে বেশ। মুলতঃ আইনের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধাবােধ যত বেশী থাকবে, তত বেশী অপরাধ কমবে। একটা জিনিষ খেয়াল করবেন- এক সময় এদেশে কেউ লাইনে দাঁড়িয়ে বাসে উঠতাে না। এখন দেখবেন, মানুষ সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করে। তার মানে আইন মানার মানসিকতা সাধারণ মানুষের মধ্যে আছে। এদেশে আইন আছে, তৈরিও হচ্ছে। কিন্তু ব্যবহার হচ্ছে। ক্ষমতাসীনদের স্বার্থভেদে।

… বাংলাদেশে পুলিশ চাকুরীর দৈনিক কোন সময়সীমা নেই। যখনই ডাক আসে চলে যেতে হয়, কাজ করতে হয়। কিন্তু মিশনে দৈনিক আট ঘন্টার বেশী কাজ করতে হয়না। এ এক পার্থক্য আর। মিশনে গেলেতাে ঝুঁকি নিতে হয় বেশী। যে কোন সময় আক্রমন, আঘাতের জন্য প্রস্তুত থাকতে হয়। এতে অঙ্গহানিসহ মুত্যুও হতে পারে। এটা বিচিত্র নয়। তবে আমাদের দেশের চৌকশ পুলিশ যারা । মিশনে গেছেন তারা অবশ্যই ভাল করেছে শুনেছি। । সে কারনে বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে পাশ করতে । পারলে জাতিসংঘও আগ্রহবােধ করে বাংলাদেশের পুলিশের জন্য।

…আমাদের সমাজে সচেতন মানুষদের মধ্যে যারা। রাজনীতিকর্মী, সাহিত্য ও সংস্কৃতিকর্মী এবং সমাজকর্মী তারা সমাজ আর দেশের মানুষের জন্য । কিছু না কিছু করে কিন্তু সাধারণ মানুষের একটি অংশ আছে যারা শুধু তাকিয়ে থাকে। তারা দর্শকের ভূমিকা পালন করে। তাদের উদ্দেশে বলছি- অনেক। তাকানাে হলাে, আসুন এবার দেখি। দেখি জনসমস্যাগুলাে কিভাবে জনবান্ধব করা যায়। দেখি। আগামী প্রজন্ম কিভাবে ধর্মীয় অনুশাসনে চলাফেরার অবাধ সুযােগ পাই। দেখি- আমার দেশ, আমার বাঙালীয়ানা, আমার সংস্কৃতিকে আরাে কিভাবে সাজানাে যায়।

… অবসরের বাকি আছে আর মাত্র এক বছর। অবসরের পর ধর্মীয় অনুশাসনে থেকে সমাজের অভ্যন্তরে অবহেলিত ও নিপিড়িত মানুষের হয়ে কাজ করার আগ্রহ আছে। কারন কিছু ভালাে অভ্যাস রয়েছে যা আমাদের নিজেদের চর্চা করতে হবে এবং আশপাশের সবাইকে বিশেষ করে শিশুদের চর্চা করতে বলতে হবে। শিশুরাতাে আগামীর বিশ্ব। আবার কিছু কাজ করা থেকে নিজেদেরও । আশপাশের সবাইকে বিরত রাখার চেষ্টা করতে হবে। নিজে খারাপ কাজ করা থেকে বিরত থাকি। এবং অন্যকেও বিরত রাখার চেষ্টা করি। আশা করা যায় এতে আল্লাহ খুশি হবেন। নিজের খাবার থেকে দরিদ্র ও ক্ষুধার্থকে কিছু দিই-কারণ আমাদের সবার। একটু একটু সাহায্যই গড়তে সাহায্য করবে ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত পৃথিবী। আর এটা আমাদের ভালাে কাজের সংখ্যা বাড়াবে এবং আল্লাহর সামনে আমাদের ভালাে মানুষ হিসেবে উপস্থাপন করবে। কাউকে কষ্ট দেওয়া বা কাউকে নিয়ে ঠাট্টা-তামাশা আর কুৎসা করা উচিৎ নয়, কারণ এসব শয়তানের কাজ। বরং সবার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখতে হবে এবং সবাইকে সম্মান করতে হবে। এগুলাে করে মহান আল্লাহর নেয়ামতের প্রশংসা করে জীবনকে ধন্য করতে চাই।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here