রুপা খানম

এক মাস সিয়াম সাধনার মধ্যেই চলে ঈদের কেনা-কাটা। পাড়া প্রতিবেশীর বাসা থেকে দেওয়া-নেওয়া হয় নানা রকম ইফতার। পুরো রোজার মাস কাটে সংযম ও উৎসবমুখর পরিবেশে। ভোর রাতে পাড়ায় পাড়ায় তরুণেরা গান গেয়ে বা ডেকে মানুষকে সাহরিতে ঘুম থেকে ওঠার জন্য সাহায্য করে। এভাবে একরকম চোখের পলকেই কেটে যায় একটি মাস। তারপরও মাসের শেষদিকে বাড়তে থাকে ঈদের চাঁদের প্রতীক্ষা।

রোজা ২৯ হবে নাকি ৩০, তা নিয়ে চলতে   থাকে নানা ভাবনা। বিশেষত শিশু-কিশোরদের মধ্যে থাকে দারুণ উত্তেজনা। সন্ধ্যার আকাশে চাঁদ দেখার সে কী আনন্দ, বলে বোঝানো যাবে না। বাড়ির ছাদে, মাঠে-ঘাটে সবাই ঈদের বাঁকা চাঁদ দেখার জন্য মশগুল হয়ে পড়ে। চাঁদের দেখা মিলল তো শুরু হয়ে গেল ঈদের উৎসব–আমেজ। লুকিয়ে রাখা নতুন কাপড় ঈদের দিন কখন বের করে পরবে, তা নিয়ে উদ্‌গ্রীব হয়ে পড়ে শিশুরা। মেয়েরা হাতে মেহেদি লাগানো শুরু করে দেয়। আর ছেলেদের ব্যস্ততা থাকে কোন সময়ের জামাতে নামাজ পড়বে, তা নিয়ে। বাড়ির মা-খালারা তখন ব্যস্ত ঈদের দিনে অতিথি আপ্যায়নের জন্য খাবারের আয়োজন নিয়ে। গরিব–দুঃখীরাও কম যায় না। এই ঈদের সময়ই তারা  সদকা, জাকাত, ফিতরার টাকা পায়। অনেকে নতুন কাপড়ও পায়।

আমার মনে আছে, যারা রাস্তা পরিষ্কার করত, ঈদের আগে আগে তারাও বাড়ি বাড়ি গিয়ে বকশিশ চাইত। এই যে গরিব–দুঃখী সবাই মিলে আনন্দ করা—এর নামই ঈদ। বাচ্চাদের মধ্যে থাকে আরেক উত্তেজনা; সালামি। বন্ধু-প্রতিবেশী আত্মীয় কার বাসায় কখন যাবে, নতুন কাপড় পরে সালাম করে কে–কত সালামি পাবে—এ নিয়ে জল্পনা ছিল নির্মল আনন্দের অংশ। আর কোলাকুলি তো আছেই। সবাই যেন উৎসব আনন্দে মুখরিত। সারা দিন পর বাড়ি ফিরলে তখন খুব কষ্ট হতো এই ভেবে যে, ঈদের দিন কেন শেষ হয়। আর টেলিভিশনের বিশেষ অনুষ্ঠান বাড়তি রসদ জোগাত, এখনো জোগায়।

দেশে ঈদের আনন্দই আলাদা। বিশেষত শৈশবের ঈদ-স্মৃতি খুব মনে পড়ে। এখন কেমন যেন সব আনন্দেই ভাটার টান। আগের মতো করে আর আনন্দ হয় না ঈদে। বাস্তবতার চাপে সবই যেন হারিয়ে যাচ্ছে। মনে হয়, বড় ভালো ছিল আমাদের ছোটবেলা! এখন আর ছোটবেলার মতো আবেগ নেই। সবকিছুই মনে হয় যান্ত্রিক, আবেগহীন ও অনুভূতিশূন্য।

এখানে অনেক সময় ঈদের দিনেও কাজে যেতে হয়। ব্যস্ততা ও কাজের ফাঁকে সময় বের করে ঈদের নতুন কাপড় কেনা হলেও তা কখনো কখনো ঈদের দিন পরাই হয় না। নিজেদের মতো করে বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা আর খাওয়া—এটুকুতেই সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে ঈদের আনন্দ। তারপরও ঈদ মানে আনন্দ। আসছে ঈদ সবার জীবনে অনাবিল আনন্দ বয়ে আনুক—এটাই প্রত্যাশা। সবাইকে ঈদের প্রাণঢালা শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here