-ইমাম আল্লামা হাশেমী(রাহ্.)

দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় আলেমে দ্বীন , মুনাযেরে আহলে সুন্নাত , উস্তাযুল উলামা আমার ( গ্রন্থকার ) অতীব প্রিয় ছাত্র , শেরে মিল্লাত , আল্লামা মুফতি মুহাম্মদ ওবাইদুল হক নঈমী ( রাহ্. ) চট্টগ্রাম আনােয়ারা থানাধীন চাঁপাতলী গ্রামে ১৯৪৩ ইংরেজী সনে এক সম্ভ্রান্ত বংশে জন্মগ্রহণ করেন ।

তাঁর পিতা বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী মরহুম নূর আহমদ মুনশী আল কাদেরী যিনি প্রখ্যাত অলিয়ে কামেল হযরত ভােলা শাহ্ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি এর অধস্থন পুরুষ ছিলেন ।

তাঁর পূর্বপুরুষগণ ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম আনােয়ারা আগমন করেন এবং অনেক বে – দ্বীনকে ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় দান করেন ।

শিক্ষা_জীবন : বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী আল্লামা নঈমী সাহেব গ্রামের মক্তবেই লেখাপড়া আরম্ভ করেন । পরবর্তীতে উচ্চ শিক্ষার নিমিত্তে স্বীয় পিতার সাথে এসে চট্টগ্রাম ওয়াজেদীয়া আলীয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে অত্র মাদ্রাসা হতে অত্যন্ত কৃতিত্বের সাথে দাখিল , আলিম ও ফাযিল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সরকারী বৃত্তি লাভ করেন ।

এ সময়ে তিনি সম্পূর্ণ আমার ( গ্রন্থকার ) তত্ত্বাবধানেই ছিলেন । আমার বাড়ীতে থেকেই ওয়াজেদীয়া মাদ্রাসায় সম্পূর্ণ লেখাপড়া সমাপ্ত করেন ।

অতঃপর আরাে উচ্চতর শিক্ষা লাভের উদ্দেশ্যে পশ্চিম পাকিস্তান গুজরাট গিয়ে জামেয়া নঈমীয়ায় ভর্তি হয়ে হযরত আল্লামা মুফতী আহমদ ইয়ার খান নঈমী বদায়ুনী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি এর সান্নিধ্যে থেকে বিভিন্ন বিষয়ে ব্যুৎপত্তি হাসিল করেন ।

তারপর পুনরায় দেশে ফিরে এসে চট্টগ্রাম ওয়াজেদীয়া আলীয়া মাদ্রাসা হতে ১৯৬৫ সালে কামিল হাদীস ও ১৯৬৬ সালে ঢাকা আলীয়া মাদ্রাসা হতে কামিল ফিক্হ সনদ হাসিল করে কৃতিত্বের সাথে একাডেমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন ।

কর্মজীবন : আল্লামা নঈমী সাহেব ১৯৬৬ সালে শিক্ষা জীবন সমাপ্ত করে সর্বপ্রথম চট্টগ্রাম ওয়াজেদীয়া আলীয়া মাদ্রাসায় মুদাররিস হিসেবে যােগদান করে এক বছর সুনামের সাথে পাঠদান করেন । তারপর হাটহাজারী আযীযিয়া অদুদিয়া সুন্নিয়া মাদ্রাসায় বেশ কিছুদিন পাঠদান করেন ।

অত :পর ইমামে আহলে সুন্নাত আল্লামা গাজী সৈয়্যদ আযীযুল হক শেরে বাংলা রাহমাতুল্লাহি আলাইহি ও আমার ( গ্রন্থকার ) নির্দেশে ও অধ্যক্ষ মাওলানা নসরুল্লাহ্ খান রাহমাতুল্লাহি আলাইহি এর অনুরােধে ১৯৬৮ সালে চট্টগ্রাম ষােলশহর জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলীয়া মাদ্রাসায় যােগদান করে তাফসীর , হাদীসসহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াবলীর উপর অত্যন্ত দক্ষতা ও সুনামের সাথে পাঠ দান করে হাজার হাজার যােগ্য আলেম তৈরী করে একটানা ৪৪ বছর দায়িত্ব পালন করার পর ২০০৮ সালে সরকারী ভাবে অবসর প্রাপ্ত হন।

অবসরের পূর্ব পর্যন্ত তিনি জামেয়ার শায়খুল হাদীস পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন । তাঁর অসংখ্য ছাত্ররা দেশে বিদেশে সরকারী – বেসরকারী , বিভিন্ন মাদ্রাসা বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে দায়িত্বরত আছেন । তাযকেরাতুল কেরাম

আল্লামা নঈমী সাহেব আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের খেদমতে আজীবন আমার ( গ্রন্থকার ) সাথে ছায়ার মত ছিলেন।

মাঠে ময়দানে বিশেষ করে বিভিন্ন বাতেল দল উপদলের সাথে মুনাজারা ও সুন্নিয়তের প্রয়ােজনে আল্লামা নঈমী সাহেবকে আমি সবসময় কাছে পেয়েছি ।

সুমধুর কন্ঠের অধিকারী তাঁর ওয়াজ ও নসীহত শ্রোতাগণ মন্ত্রমুগ্ধের মত শ্রবণ করত । এখনাে তার ওয়াজ নসীহতের ধারা অব্যাহত ।

লেখনীতেও তাঁর সমান দক্ষতা রয়েছে । আক্বিদা ও আমল বিষয়ে তাঁর অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ বিভিন্ন ম্যাগাজিন , সামায়িক , পত্র – পত্রিকায় নিয়মিত প্রকাশিত হয় ।

তাঁর রচনাবলীর মধ্যে উল্লেখযােগ্য হলাে , উর্দু ভাষায় “ দালায়িলুল কিয়াম লি – মীলাদ – ই খাইরিল আনাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ” ।
যা মিলাদ শরীফের বৈধতা , ফযিলত ও গুরুত্বের উপর লিখিত প্রাথমিক নির্ভরযােগ্য গ্রন্থ । বর্তমানে বাংলায় অনুদিত । অপরটি হলো : “ কাশিফুল মুগাম্মদ শরহে ইমাম মুহাম্মদ ” এটি ইমাম মুহাম্মদ শায়বালী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি এর সংকলিত মুয়াত্তার উর্দু ভাষায় ব্যাখ্যা গ্রন্থ যা প্রকাশের অপেক্ষায় ।

আমি ( গ্রন্থকার , ইমামে আহলে সুন্নাত , আল্লামা কাযী মুহাম্মদ নুরুল ইসলাম হাশেমী )ছাড়াও আল্লামা নঈমী সাহেব যাঁদের থেকে অধ্যয়ন করেছেন তাঁদের মাঝে উল্লেখযােগ্য হলেন – হযরত আল্লামা মুফতি আমিমুল এহসান মুজাদ্দেদী বরকতী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি , হযরত আল্লামা মুফতি আহমদ ইয়ার খান নঈমী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি , হযরত আল্লামা ওয়াকারুদ্দীন বেরেলভী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি , আল্লামা আতিকুল্লাহ খান রাহমাতুল্লাহি আলাইহি , আল্লামা আব্দুর রহমান কাশগরী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি , আল্লামা মুফতি মুসা মুজাদ্দেদী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি প্রমুখ ।

আমার ( গ্রন্থকার ) আব্বাজান কেবলা হযরত আল্লামা মাওলানা কাযী আহছানুজ্জামান হাশেমী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি নঈমী সাহেবকে খুবই মুহাব্বত করতেন । বিভিন্ন মাহফিলে তাঁকে সাথে নিয়ে যেতেন।

নঈমী সাহেবের ‘ না’তে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাঠ আব্বাজান কেবলা খুবই পছন্দ করতেন । সবসময় তাঁর জন্য দোয়া করতেন ।

তরিকত জীবনে আল্লামা নঈমী সাহেব আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ #তৈয়্যব শাহ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি এর হাতে বাইআত গ্রহণ করেন ।

তিনি ১৯৭১ সালে সর্বপ্রথম পবিত্র হজ্বব্রত পালন ও রাসূলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রওযা আকদসেসর পবিত্র যিয়ারত লাভে ধন্য হন ।

পরবর্তীতে অসংখ্যবার । হজ ও ওমরা পালন করেন । তাছাড়া তিনি ভারত , পাকিস্তান , আরব আমিরাত ওমান , ইরাক , যুক্তরাজ্য সহ বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্র সফর করেন ।

(শেরে মিল্লাত আল্লামা নঈমী(রাহ্.) ইন্তেকাল করেন ৬/০৭/২০২০ইং, সময় ৫ ঘটিকা)

🌑তথ্যসূত্র  🌑তাযকেরাতুল কেরাম -৩৪৮,৩৪৯ 🌑প্রকাশকাল…২০১৯ইং

এফবি সহায়ক- জাগো সুন্নী জনতা

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here