চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গানের সম্রাজ্ঞী অমর শিল্পী শেফালী ঘোষের জন্ম ১৯৪১ সালের ১১ জানুয়ারী চট্টগ্রাম জেলার বোয়ালখালী উপজেলার কানুনগোপাড়া গ্রামে। পিতা : শ্রী কৃষ্ণ গোপাল ঘোষ ও মাতা: শ্রীমতি আষা লতা ঘোষ। শৈশব কৈশোরের স্থানীয় বিভূতিভূষণ (বিবি) হাই স্কুলে শিক্ষা লাভ করেন। গ্রামে তখন জেলা থেকে বসত জমজমাট গানের আসর। তাঁর উৎসাহ দেখে বাবা মা তাঁকে সমর্পণ করেন ওস্তাদ তেজেন সেনের কাছে। ১৯৬৩ সালে তিনি শাস্ত্রীয় সংগীত শেখা শুরু করেন চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী সংগীত পরিষদের অধ্যক্ষ ওস্তাদ শিব শংকর মিত্রের কাছে। তিনি তালিম নেন ওস্তাদ জগদানন্দ বড়ুয়া, নীরদ বরণ বড়ুয়া, মিহির নন্দী, গোপাল কৃষ্ণ চৌধুরী প্রমুখের কাছে। ১৯৬৪ সালে অডিশন দিয়ে পাশ করে তৎকালীন রেডিও পাকিস্তান চট্টগ্রাম কেন্দ্রের শিল্পী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন শেফালী ঘোষ। বেতারে পরিবেশিত তাঁর প্রথম আঞ্চলিক গান “সূর্য উডের লে ভাই লাল মারি”।
১৯৭০ সালে যুক্ত হন টেলিভিশনের সাথে। ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে শেফালী ঘোষ শিল্পী হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। তিনি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের নিয়মিত শিল্পী হিসেবে বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে এবং মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ শিবিরে গান গেয়ে নির্যাতিত মানুষের পাশে দাঁড়ান। প্রায় ২০০০ গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। সংগীত শিল্পী হিসেবে তিনি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান, সিঙ্গাপুর, মালেয়শিয়া, কাতার, ভারত প্রভৃতি দেশ ভ্রমণ করেন। প্রায় শ’দুয়েক এ্যালবাম প্রকাশিত হয়েছে তাঁর গান নিয়ে। শুধু সংগীত শিল্পী হিসেবেই নন, সংগঠক হিসেবেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। ২০০৬ সালের শেষ দিন ৩১ ডিসেম্বর বিকাল পৌনে ৬ টায় তিন শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এই আঞ্চলিক গানের সম্রাজ্ঞীকে বাংলাদেশ সরকার ২০০৮ সালে ২১শে পদক দিয়ে ভূষিত করেন। –
সূত্র : পাক্ষিক আলোকিত বোয়ালখালী