শেখ শরফুদ্দীন বু-আলী শাহ কালন্দর
ভারতের পানিপথে শেখ শরফুদ্দীন বু-আলী শাহ কালন্দর (রহ.) এর মাজার

 

বিভাগের সম্পাদক
১৩ রমজান শেখ শরফুদ্দীন বু-আলী শাহ কালন্দর (রঃ)’র পবিত্র ওফাত দিবস!

(তিনি এমন এক মহান সাধক যিনি পানিতে দাঁড়িয়ে একাধারে রিয়াজত করেছিলেন ১২ বছর)

শেখ শরফুদ্দিন বু আলী শাহ কালন্দর পানিপতি (রঃ)। (১২০৯-১৩২৪ খ্রিস্টাব্দ বা ৬০৬ হিজরি)

#তিনি চিশতিয়া তরিকার একজন সূফি সাধক যিনি ভারতে বাস করতেন। ভারতের পানিপথের শহরে ওনার পবিত্র দরগাহ (মাজার) অবস্থিত যা একটি ধর্মীয় তীর্থস্থান। তাঁর আসল নাম ছিল শেখ শরফুদ্দিন কিন্তু তিনি বু আলী শাহ নামেই অধিক পরিচিত। তাঁর পিতার নাম শেখ ফখর উদ্দিন, যিনি তাঁর সময়ে মহান পণ্ডিত এবং দরবেশ ছিলেন। মাতা বিবি হাফিজা, মৌলানা সৈয়দ নিমাত উল্লাহ হামদানির কন্যা। তিনি খুব অল্প বয়সে তার পড়াশোনা শেষ করেন এবং পরবর্তীকালে প্রায় বিশ বছর দিল্লির কুতুব মিনারের নিকটে পড়াশোনা শিখেন। দিওয়ানে হযরত শরফুদ্দিন বু আলী কালান্দার নামে তিনি ফার্সি কবিতার একটি সংকলন প্রকাশিত করেন যা পরবর্তীকালে খাজা শাহাউদ্দিন কর্তৃক পাঞ্জাবী ভাষায় অনূদিত হয়। ফার্সি ভাষায় এটি একটি মহান সূফি কাজ।

#জন্মস্থানঃ
একটি সূত্রে জানা যায় তিনি ১৪০০ খ্রিস্টাব্দের প্রথম দিকে ভারতের পানিপথে জন্ম গ্রহণ করেন। তার দরগাহের সমাধিফলকে ফার্সি ভাষায় লেখা আছে, তার জন্মস্থান গাঞ্জায় যা বর্তমানে আজারবাইজান। ৬০০ হিজরীতে তাঁর পিতা ইরাক থেকে ভারতে আসেন এবং পানিপথে বসতি স্থাপন করেন।তিনি ঈমামুল মুসলেমীন,সিরাজুল উম্মাহ, ঈমামে আজম আবু হানিফা (রহ:) এর ৭ম অধস্তন বংশধর।

#কাশফ_ক্ষমতাঃ
ওনার কাশফ ক্ষমতা এতটাই প্রখর ছিল যে যখন চিশতীয়া তরিকার আধ্যাত্নিক সাধক শেখ ফরিদউদ্দীন গঞ্জেশাকর (রহঃ) ওনার হাতে বাইয়াত গ্রহণ করার জন্য গিয়েছিলেন তখন শেখ ফরিদ (রহঃ) এর দিকে দৃষ্টি পড়তেই বলেছিলেন, আপনাকে বাইয়াত করার মত যোগ্যতা আমার নেই, আপনি দিল্লীর কুতুবউদ্দীন বখতিয়ারের (খাজা গরীব নাওয়াজ রাঃ ওনার প্রধান খলিফা) কাছে যান, ওনারই একমাত্র যোগ্যতা আছে আপনাকে বাইয়াত করানোর।

#রিয়াজতঃ
ওনার পীর হযরত খাজা নিজামউদ্দীন আওলিয়া (রহঃ) নদীর তীরে একটি ইবাদতখানা নির্মাণ করে এতে জিকির করতেন, শেখ শরফুদ্দীন (রহঃ) সেই ইবাদতখানার সোজাসুজি নীচে, পানিতে দাড়িয়ে আল্লাহর জিকির আরম্ভ করলেন।. দীর্ঘ ১২ বছর পানিতে দাড়িয়ে ইবাদতে মশগুল থাকার কারণে তার শরীরের নিম্নাংশের গোশত পচঁন ধরে এবং মাছে তা খেতে থাকে। এমন অবস্থায় তিনি খাজা খিজির (আঃ) এর দর্শন লাভ করেন। এরুপ অবস্থায় একদিন তিনি আসমান হতে গায়েবী আওয়াজ শুনতে পেলেন,-শরফুদ্দীন! তোমার রিয়াজত ও কঠোর সাধনা আমি কবুল করেছি এবং তোমার প্রতি আমি সন্তুষ্ট। তোমাকে আমার দোস্তগণের অন্তর্ভুক্ত করে নিলাম। তোমার কি চাইবার আছে বলো? আমি তোমার বাসনা পূর্ণ করবো শেখ শরফুদ্দীন (রহঃ) বললেন, মাবুদ! আপনি আলিমুল গায়েব! আপনি জানেন, আপনাকে পাওয়া ছাড়া ভিন্ন কোন বাসনা আমার নেই। আপনি আমার একমাত্র কাম্য। আমার অন্তরের বাসনা এভাবে পানিতে দাড়িয়ে আপনার রাস্তায় জীবন শেষ করে দেই । তখন আবার গায়েব হতে আওয়াজ আসল! পানি হতে ওঠে এসো এখানেই তোমার কাজ শেষ নয়। তোমার জন্য করণীয় আরও অনেক কাজ রয়েছে। উত্তরে তিনি বললেন:- আপনি নিজ হাতে আমাকে এখান থেকে না ওঠানো পর্যন্ত আমি ওঠব না। এই কথা বলেই তিনি বেহুশ হয়ে গেলেন।।এমন সময়ে একজন বুযুর্গ ব্যাক্তি এসে ওনাকে কোলে করে নদী হতে তীরে ওঠালেন। শেখ শরফুদ্দীন (রহঃ) চোখ খুলেই সেই ব্যাক্তিকে বললেন: কে তুমি ভাই..?? তুমি তো আমার দীর্ঘকালের রিয়াজত নষ্ট করে দিলে!। একটু পরেই আমি আমার লক্ষে পৌছে যেতাম কেন তুমি আমাকে বাধা দিলে..? কেন তুমি আমার সর্বনাশ করলে..? বুযুর্গ ব্যাক্তি তার এই অবস্থা দেখে বলল:-বৎস,তুমি আমাকে চিনতে পারনি? আমি আলী ইবনে আবী তালেব। তুমি কি জানো না! যে আমাকে আল্লাহর হাত বলা হয়। তুমি শান্ত হও, স্থির হও, তোমার সাধনা পুর্ণ হয়েছে। একথা শুনেই শেখ শরফুদ্দীন (রহঃ) সিজদায় পরে আল্লাহর শোকরিয়া আদায় করলেন এবং ভক্তিভরে হযরত আলী (রাদ্বীয়াল্লাহু তা’আলা আনহু) কে কদমবুচি করলেন। হযরত আলী (রাদ্বীয়াল্লাহু তা’আলা আনহু) ওনাকে কয়েকটি উপদেশ দিয়ে অদৃশ্য হয়ে গেলেন। এই ঘটনার পর থেকে ওনার কাছে হযরত আলী (রাঃ)’র সুগন্ধি পাওয়া যেত বলে, তিনি বু-আলী (আলির সুগন্ধি) কালন্দর নামে প্রসিদ্ধ হয়ে যান।

#দিওয়ানে_আজিজে_শেখ_শরফুদ্দিনের_প্রশংসাঃ

গাজীয়ে দ্বিনে মিল্লাত ইমাম শেরে বাংলা (রহঃ)’র লিখিত ” দিওওয়ানে আজিজ”-এ বু আলী কলন্দর (রহঃ) সম্পর্কে বলেন,

শত স্বাগতম, শত ধন্যবাদ, শত মোবারকবাদ, স্বাগতম।
শাহে কলন্দর হযরত শরফুদ্দিন বু-আলী (রহঃ) কে স্বাগতম।

তাসাউওফে তিনি অমূল্য কাব্যগ্রন্থ রচনা করেছেন।
ওই অলী-ই কামেল মানুষকে জান্নাতের দিকে পথ দেখিয়েছেন।

সন্দেহাতীতভাবে তাঁকে একজন শীর্ষস্থানীয় অলী বলে জানো।
তিনি কাশফ ও কারামতের ধারক ছিলেন, যুগের প্রসিদ্ধ ব্যক্তিত্ব ছিলেন।

দীর্ঘ বার বছর যাবৎ তিনি সমুদ্রের পানিতে ছিলেন।
মাছগুলো তখন তাঁর গোশ্ত খেয়ে ফেলেছিলো।

হযরত খিজির (আঃ) এসে তাঁকে বললেন, “শোন, হে মর্দর খোদা! তুমি ঐ রিয়াজত করেছো যার ফলে আল্লাহর মাক্ববূল বান্দায় পরিণত হয়েছো।”

একদা ওই হযরত আলী তাঁকে সমুদ্রের তীরে নিয়ে আসলেন।
তিনি আরয করলেন, “আপনি কে?” তিনি বললেন, আমি প্রসিদ্ধ আলী মুরতাজা।

ওখানেই তাঁর দেহে হযরত আলী (রাঃ)’র খুশবু প্রাপ্ত হলেন।
এরপর থেকে তিনি বু-আলী (হযরত আলীর খুশবু) উপধীতে ভূষিত হন।

ঐ শিহাব উদ্দিন ঘুরী তাঁর এ মুর্শিদের মুরীদ ও আশিক্ব ছালেন, এ কথা জেনে রেখো।
তাঁর কামালাত এত বেশি প্রকাশ পেয়েছিলো যে, সেগুলো লিখে ও বলে শেষ করা যায় না।

তাঁর নুরানী রওযা শরীফ পানিপথে অবস্থিত।
তাঁর বরকতময় সত্তা থেকে মানুষ সর্বক্ষণ ফয়যপ্রাপ্ত হচ্ছে।

হে বিশ্ব প্রতিপালক! তার কবর শরীফকে জান্নাতের বাগানে পরিণত করুন!
আমার এ ফরিয়াদ নবীকুল সর্দার ﷺ’র ওসিলায় কবুল করুন।

#তথ্য_সূত্রঃ দিওয়ানে আযীয, ইউকিপিডিয়াসহ বিভিন্ন ব্লগ থেকে সংগৃহীত।

#আল্লাহ তা’আলা যেন আমাদেরকে তাঁর প্রিয় বান্দাগনের ফয়ুজাত দ্বারা আলোকিত করেন…

#আমিন….

এবি/টিআর

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here