আজ ১ ডিসেম্বর। আজ থেকে শুরু হলো বাঙালি জাতির গৌরবোজ্জ্বল বিজয়ের মাস । ১৯৭১ সালের এই মাসটি বাঙালি জাতির-জীবনে নিয়ে এসেছিল এক মহান অর্জনের আনন্দ,স্বাধীনতার আনন্দ। দীর্ঘ ৯ মাস সশস্ত্র সংগ্রামের পর ওই বছরের ১৬ ডিসেম্বর পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হয় প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ। বিশ্বের বুকে রচিত হয় এক নতুন ইতিহাস। জন্ম নেয় বাংলাদেশ নামে এক স্বাধীন সার্বভৌম দেশ।
১৯৭১ সালের ৭ মার্চ স্বাধীনতার স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে স্বাধীনতার ডাক দিয়ে বলেন- ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। একই বছরের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানী সেনা বাহিনী বাংলার নিরস্ত্র জনগণের উপর সশস্ত্র আক্রমণ চালায়, হত্যা করে হাজার হাজার নিরীহ মানুষকে। সেই রাতেই গ্রেফতার করা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। গ্রেফতার হওয়ার আগে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যান তিনি এবং তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে বাঙালি জাতি ঐক্যবদ্ধভাবে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ২৫ মার্চ রাতেই রাজারবাগ পুলিশ লাইনে সশস্ত্র প্রতিরোধের সম্মুখীন হয় পাকিস্তান সেনা বাহিনী।
১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসের শুরু থেকেই মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা আক্রমণ আর ভারতীয় মিত্রবাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত যৌথবাহিনীর জল,স্থল আর আকাশপথে সাঁড়াশি আক্রমণের মুখে বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর পরাজয়ের খবর চারদিক থেকে ভেসে আসতে থাকে। এ বছরের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। দীর্ঘ ৯ মাসের সশস্ত্র জনযুদ্ধে ৩০ লক্ষ শহীদ এবং ২ লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমহানির বিনিময়ে ১৬ ডিসেম্বর জাতির চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়।
বিশ্ব মানচিত্রে স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশের বিজয় পতাকা উড়তে থাকে। সেই ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানেই পরাজয়ের দলিলে স্বাক্ষর করেন পাকিস্তানি জেনারেল নিয়াজী। আর জাতি অর্জন করে হাজার বছরের স্বপ্নের স্বাধীনতা। স্বাধীন জাতি হিসেবে সমগ্র বিশ্বে আত্মপরিচয় লাভ করে বাঙালিরা। অর্জন করে নিজস্ব ভূ-খন্ড। আর সবুজের বুকে লাল সূর্য খচিত নিজস্ব জাতীয় পতাকা।
ত্রিশ লক্ষ শহীদ আর দু’লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানির বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা। হাজার বছরের স্বপ্নপূরণ হবার পাশাপাশি বহু তরতাজা প্রাণ বিসর্জন আর মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে এই অর্জন হওয়ায় বেদনাবিঁধূর এক শোকগাঁথার মাসও এই ডিসেম্বর।
এ মাসেই স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকার-আলবদর আল শামসদের সহযোগিতায় দেশের মেধা, শ্রেষ্ঠ সন্তান-বুদ্ধিজীবী হত্যার নৃশংস হত্যাযজ্ঞে মেতে ওঠে। সমগ্র জাতিকে মেধাহীন করে দেয়ার এধরনের ঘৃণ্য হত্যাযজ্ঞের দ্বিতীয় কোন নজির বিশ্বে নেই।
মহান এ বিজয়ের মাস উদযাপনে জাতীয় কর্মসূচির পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের পক্ষ থেকে বিস্তারিত কর্মসূচি নেয়া হয়েছে।