আশাফা সেলিম
লেখালেখির ক্ষেত্রে চৌর্যবৃত্তি বা একজনের লেখা আরেকজনের নামে হুবহু প্রকাশ করার নির্লজ্জ প্রবণতা কোনোক্রমেই বন্ধ হচ্ছে না। বরং ইন্টারনেটের যুগে অনেকের মধ্যে এ হীন পন্থায় নিজেকে ‘লেখক‘ বানানোর প্রবণতা যেন কয়েকগুণ বেড়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় এবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত অনলাইন পেজ শিক্ষক বাতায়নে‘ মিলল হবহু কপি–পেস্ট করা একটি লেখা। লেখাটি প্রকাশিত হয়েছে শিক্ষিকা জামিলা খাতুনের নামে। ‘শিক্ষক বাতায়ন‘ পাতায় প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী জামিলা খাতুনের বাড়ি সাতক্ষীরা সদর উপজেলার মাগুরা গ্রামে। তিনি ওই পাতার ‘সেরা কন্টেন্ট নির্মাতা‘ এবং ‘অ্যাম্বাসেডরের খেতাবপ্রাপ্ত আলিম পাস একজন শিক্ষিকা। উল্লেখ্য, ফেসবুক ব্যবহারের ভালো–মন্দ দিক নিয়ে বিশদ আলোচনা– পর্যালোচনাসমৃদ্ধ আমার এ লেখা যুগান্তরে প্রকাশিত হয় ২০২২ সালের ৮ সেপ্টেম্বর, ‘ফেসবুকের অপব্যবহার আর নয়‘ শিরোনামে। লেখাটি চুরি করে ‘শিক্ষক বাতায়ন‘ অনলাইন পাতায় প্রকাশ করা হয়েছে একই দিনে যুগান্তর অনলাইনে প্রকাশের ৬ ঘণ্টা পর https://www.teachers.gov.bd/blog/details/ 655252? page-3407&fesbuker-opbzbhar-ar-ny-fesbuker-valo-diki-besi-eti-shj-sfl-jnpriy- samajik zogazogmadhzm। তবে প্রকাশের পর লেখাটি হয়তো সেসময় হাইড করে রাখা ছিল; সম্প্রতি গুগল কর্তৃক প্রদর্শিত হচ্ছে। সম্ভবত লেখিকা লেখা চুরিতে খুবই দুর্বল, তাই লেখাটির শেষাংশে প্রকৃত লেখকের পরিচিতিটাও রয়ে গেছে। আলোচ্য লেখাটি এখন পর্যন্ত যুগান্তরের অনলাইনে পেইজ থেকে ৩৪৪টি শেয়ার হয়েছে। উল্লেখ্য, এ লেখা প্রথমবার চুরি করেন একটি অনলাইন পত্রিকার ‘সম্পাদক‘! চুরি করে তিনি ১০ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখে প্রকাশ করেন ‘জনতার খবর‘ নামক ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালে। পোর্টালের সম্পাদক জাকারিয়া জাকিরের নামে তার ছবিসহ লেখাটি প্রকাশ করা হয়। ঘটনাটি গোচরে আসার পর ‘লেখা চুরির কুপ্রবৃত্তি বন্ধ হোক‘ শিরোনামে এ বিষয়ে আমার একটি প্রতিবাদমূলক লেখা যুগান্তরের সম্পাদকীয় পাতায় প্রকাশিত হয় ২ নভেম্বর ২০২২ তারিখে। সেই লেখায় আমি ঘটনাটির সুষ্ঠু তদন্তসাপেক্ষে অপরাধী ও নিউজ পোর্টালটির বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেছিলাম—’কর্তৃপক্ষ শুধু সুপ্রতিষ্ঠিত দৈনিক পত্রিকাগুলোতেই নয়; বরং ফেসবুক, ইউটিউব, টুইটার ও অনলাইন নিউজ পোর্টালে প্রকাশিত যে কোনো মৌলিক লেখা সুরক্ষার ব্যবস্থা নিন। আশা করছি, যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে লেখাচোররা শাস্তি পাবে এবং লেখাচুরির মতো কুপ্রবৃত্তিগুলো বন্ধ হবে।‘ আমার সেই অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষের দিক থেকে কোনো সাড়া লক্ষ করিনি। এদিকে একই লেখা আবারও চুরি হলো! এবার চুরি করলেন একজন শিক্ষিকা! সংশ্লিষ্ট মহল থেকে যদি এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হতো, তাহলে হয়তো লেখালেখিতে চৌর্যবৃত্তি কিছুটা কমলেও কমতে পারত। এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ জানানো হয়েছে। আবারও আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ (সরকার ও ফেসবুক) বরাবর একই অনুরোধ জানাচ্ছি—অনুগ্রহ করে অন্যের লেখা নিজের নামে প্রকাশের এ ধরনের হীন প্রবৃত্তি বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। তা না হলে এ প্রবণতা বৃদ্ধি পেতেই থাকবে।
আশাফা সেলিম : ছড়াকার ও সংস্কৃতিকর্মী ashafa.salim@gmail.com