বেলায়তে মোতলাকা গ্রন্থ হতে- সংগ্রাহক: মো. তাজুল ইসলাম রাজু 

প্রকাশ-২২ /০১/২০২১

পবিত্র কোরআন পাকের অনুবাদকারী মওলানা আয়ুব আলী তাঁর রচিত কবিতায় লিখেছেনঃ
হজ্বব্রত নিরাপদ নগরে যেমন ।
মাঘের দশে তব দ্বারে মহাসম্মিলন।।
১০ই মাঘ পবিত্র ওরস শরীফ বা গাউছুল আজমের ওফাত স্মৃতি বার্ষিকী পৃথিবী বিখ্যাত ধর্মীয় সমাবেশ। আশেক প্রেমিক সম্মেলন সম্বন্ধে “পূর্বাণী” নামক পত্রিকায় ২৬শে ফাল্গুন ১৩৭২ বাংলা সংখ্যায় (১৯৬৬ খ্রীষ্টাব্দ) জনাব মঈন-উল-আলম নামক একজন দর্শকের লিখা-
“লােক সঙ্গীতে মাইজভাণ্ডারের অবদান” নামক প্রবন্ধের কিয়দংশ এখানে উদ্ধৃত করলাম।

“মাইজভাণ্ডারের ওরশ দেখে এর একটা নতুন দিক উপলদ্ধি করলাম। ধর্মীয় দিক বাদ দিলেও মাইজভাণ্ডারের ওরশের আর একটি মূল্য রয়েছে, পূর্ব পাকিস্তানের লােক সঙ্গীতের এক বিরাট মিলন ক্ষেত্র রূপ। ওরশের সব অনুষ্ঠানের মধ্যে সঙ্গীত অনুষ্ঠান মাথা উঁচু করে থাকে। এক জায়গায় দেখলাম, “আমার দূখে দূখে জনম গেল, আমি এক জনম দূখি” গানটি হৃদয় নিংড়ানাে সুরে গেয়ে চলেছে, মতলব থানার অশীতিপর বৃদ্ধ কালাচান ফকীর। তার সাথে দোতারা বাজাচ্ছে কুমিল্লার প্রৌঢ় গায়ক মুহাম্মদ আবদুল জব্বার, আর মঞ্জুরীতে তাল সঙ্গত করছে সম্ভ্রান্ত ঘরের কিশাের মাহবুবুর রহমান চৌধুরী, ফেঞ্চুগঞ্জের জনাব মফজল আলী চৌধুরীর পুত্র। এরা কেউ কারাে সাথে পরিচিত নয়। ওরশের কয়দিন সামাজিক পদ-মর্যাদা, বয়সের তারতম্য ও জীবন যাত্রার পার্থক্য ভুলে গিয়ে এক হয়ে সঙ্গীত পরিবেশন করছে। ওরশের পরে যে যার জীবনে ফিরে যাবে। কালাচান ফকীর নিজ বৃত্তি শুরু করবে, আবদুল জব্বার নিজস্ব ব্যবসায়ে মন দেবে, আর কিশাের মাহবুব, স্কুল ফাইনাল পরীক্ষা দেওয়ার জন্য পড়াশুনায় মন দেবে।
কিন্তু মাইজভাণ্ডারের কয়দিনের মহামিলনে এরা লােক সঙ্গীত গায়কেরা পরস্পরের সাথে জানাজানিতে পেল নতুন উদ্যম। দেশের লােকসঙ্গীত পেল নতুন জীবনী শক্তি।”

মওলানা মছনবীতে বলেনঃ
আলস্তের দিনে যাহা ছিল গােপনেতে
বিকাশ পাইল তাহা আহমদী নূরেতে।।
গ্রন্থকার-
“আহ্বান আসিল মােরে মর্তুজা হইতে
নূরে চেরাগে আহমদ মােস্তফা হইতে।।
পুরাতন দিনগুলির সাজসজ্জা তুমি।
আমার ডাক আমার ঢােল আমার বােল তুমি ।।
আনন্দে নৃত্য কর আপন জন মনে
গােলাব আম্বর গন্ধ দাও সর্বজনে।।
সামনে আছে কা’বা আমার পেশ কদমে চলেছি।
দেমাগেতে ছুন্নার “ছানা” সূক্ষ্ম মাথা গড়েছি।।
পরণেতে অলীর পরণ পন্থা নির্দেশ দিতেছি।
অনর্থেরী পরিহারে তাওয়ার ঝলক দেখেছি।।
ধৃতি স্নায়ী দুখ বেদনায় কতই ভাবে দেখেছি।
তুমি আমার প্রাণের সখা বহুরূপে পেয়েছি ।।
ধন ধ্যানে প্রাণে রূপে কতই ভাবে বুঝেছি।
সর্বস্থানে তােমার রূপ আমার ভালে দেখেছি।।
তুমি আমার আমি তােমার সর্বস্থানে জেনেছি।
তাই বুঝি তুমি ছাড়া অন্য হাস্তি বিনাসী।।
হােসাইন তােমার পাগল পারা সর্বস্থানে বিরাজমান।
এ’দিক ও’দিক দু’দিক ছেড়ে জোড় কদমে আগুয়ান।।”

পীরানে পীর দস্তগীর বাগদাদী (কঃ) বলেছেনঃ- (ফতহুর রব্বানী ৪০পৃঃ) চার প্রকার লােক হেদায়ত পাবে না, চির মূর্খ থাকবে।

যেমন, যে সমস্ত লােকে-
১। যা জানে তা করে না।
২। যা জানে না তা করে ।
৩। কেহ জানতে চাইলে তাকে জানতে দেয় না।
৪। যা জানে না তা জানতে চেষ্টা করে না; কাজেই মূর্খ থাকে।
এর সমর্থনে কোরআন পাকের সূরায়ে ছাফফার ২/৩ আয়াতে বর্ণিত আছে –
“হে বিশ্বাসীগণ! যাহা তােমরা করনা, তাহা বল কেন? যাহা করনা তাহা বলা, খােদার নিকট নিশ্চয় মহাপাপ।”

হে বারে খােদা! তুমি আমাকে এদের মধ্যে গণ্য করিও না। আমার মধ্যে আমাকে জানতে শক্তি দাও। আমাকে ভ্রান্ত সাব্যস্ত করিও না। আমাকে খাটি রাখ এবং খাঁটি থাকতে শক্তি দাও। আমীন। এয়া রাব্বাল আলামীন।

-বেলায়তে মোতলাকা (পৃষ্ঠা ১৫৭-১৫৯) পুণ প্রকাশ ২৪মে ২০১৪ : খাদেমুল ফোকরা সৈয়দ দেলাওর হোসাইন মাইজভাণ্ডারী

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here