রোযার প্রকার

ডক্টর মুহাম্মদ মাহবুবুর রহমান

রোযা দুই প্রকার। ফরয ও নফল। ফরয রোযা তিন প্রকার। ১. রামাযানের রোযা, ২. কাফ্‌ফারার রোযা, ও ৩. মানতের রোযা। (ফিক্‌হুস্‌ সুন্নাহ্‌, ১ম খণ্ড, পৃ. ৫৭৫)।

ফাতাওয়া ও মাসাইল গ্রন্থে রোযার প্রকারভেদ এভাবে বিভক্ত করা হয়েছে, ‘রোযা সাধারণত তিন প্রকার। ১. ফরয রোযা, ২. ওয়াজিব রোযা ও ৩. নফল রোযা।’

১. ফরয রোযা: এই প্রকার রোযা দুই প্রকার।
ক. নির্দিষ্ট ফরয। যেমন, রামাযানের রোযা।
খ. অনির্দিষ্ট ফরয। রামাযানের কাযা রোযা এবং সকল প্রকার
কাফ্‌ফারার রোযা।

২. ওয়াজিব রোযা। যে কোনো মানতের রোযা ওয়াজিব রোযা হিসাবে গণ্য। এ রোযা দুই প্রকার।
ক. নির্দিষ্ট দিনের মানতের রোযা। খ. অনির্দিষ্ট দিনের মানতের রোযা।

৩. নফল রোযা। (ফাতাওয়া ও মাসাইল, ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ১৬-১৭)।

আমরা রোযার প্রকারসমূহ নিম্নোক্তভাগে ভাগ করতে পারি। যেমন: ১. নির্দিষ্ট ও ফরয রোযা: নির্দিষ্ট ও বিশেষ সময়ে এ রোযা আদায় করা। যেমন, প্রতি বছর রামাযানের এক মাসের রোযা। এটি নির্দিষ্ট ও ফরয।

২. অনির্দিষ্ট ফরয: অনির্দিষ্ট ফরয রোযা হলো, রামাযানের কাযা রোযা এবং সর্বপ্রকার কাফ্‌ফারার রোযা। কারণ এসব রোযা কোনো বিশেষ সময়ের সাথে নির্দিষ্ট নয়। কাফ্‌ফারার রোযা আমল হিসাবে ফরয। এমনভাবে বিশ্বাস করার প্রয়োজনীয়তা প্রমাণিত হয়নি যে, তার ফরযিয়াত অস্বীকার করলে কাফির হবে; যেভাবে অন্যান্য ফরয সমূহের বেলায় প্রমাণিত আছে, যেমন, রামাযান দি। অতএব কাযা ও কাফ্‌ফারার রোযাকে ওয়াজিব রোযার শ্রেণিভুক্ত করা অধিকতর গ্রহণযোগ্য।

৩. নির্দিষ্ট ওয়াজিব রোযা: নির্ধারিত দিনে রোযা রাখার মানত করলে সেটি নির্দিষ্ট ওয়াজিব রোযা। যেমন কেউ বৃহস্পতিবার রোযা রাখার মানত করলো। দিন অথবা তারিখ নির্দিষ্ট করে রোযা রাখার কসম করলেও সে রোযা নির্দিষ্ট ওয়াজিব। কোনো ব্যক্তি একাকী রামাযানের চাঁদ স্বচক্ষে দেখল; কিন্তু তার সাক্ষ্য গ্রহণ করা হলো না, তবে সে দিনের রোযা রাখা তার উপর ওয়াজিব।
৪. অনির্দিষ্ট ওয়াজিব রোযা: যেমন নির্দিষ্ট দিনের উল্লেখ না করে রোযা রাখার মানত করা। নফল রোযা রেখে ভেঙে ফেলার পর তা কাযা করা এবং মানত ইতিকাফের রোযা রাখাও ওয়াজিব রোযার অন্তর্ভুক্ত।

৫. সুন্নাত রোযা: যেমন আশূরার রোযা। তবে শুধু আশূরার দিন রোযা না রেখে এর সাথে পূর্বে বা পরে অর্থাৎ নয় অথবা এগার রোযা রাখা উত্তম।

৬. মুস্তাহাব রোযা: যেমন প্রতি মাসের আইয়্যামে বীযের রোযা অর্থাৎ প্রতি মাসের তের, চৌদ্দ ও পনের তারিখের রোযা, জুুমু‘আর দিনের রোযা এবং আরাফার দিনের রোযা ইত্যাদি।

৭. মাকরূহ্‌ তাহ্‌রিরী বা কার্যত হারাম রোযা: দুই ঈদের দিন ও আইয়্যামে তাশরীকের (যিলহজ্জের এগার, বার, তের তারিখে) রোযা রাখা।

মাকরূহে তানযীহী রোযা: কেবলমাত্র আশূরার দিন রোযা রাখা। কারণ এতে ইয়াহূদীদের সাথে সামঞ্জস্য হয়। শুধুমাত্র শনিবার রোযা রাখা। কারণ এতেও ইয়াহূদীদের সাথে মিল হয়ে যায়। শুধুমাত্র সৌরবর্ষের প্রথম দিনে (নওরোয) রোযা রাখা। পারিসকগণের উৎসবের দিন রোযা রাখা ইত্যাদি। (দৈনন্দিন জীবনে ইসলাম, পৃ. ৩০৬-৩০৭)।

লেখক: প্রফেসর, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ,
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here