শামসুল আরেফীন : খ্রিস্টীয় অষ্টম শতকে এদেশে ইসলামের প্রচলন হয় বলে ধারণা করা হয়। বস্তুত অষ্টম শতকে বা তার আগে অথবা তার পরে মধ্যপ্রাচ্য থেকে ছুফিরা এসেই এদেশে ইসলামের প্রচলন করেন।
তাঁরা ইসলামে নবদীক্ষিত মুসলমানদের শুধু শরিয়ত নয়, তরিকত অনুসরণেরও নির্দেশনা দেন এবং বিভিন্ন তরিকারও প্রচার-প্রসার ঘটান।
পাক-ভারতে এসব তরিকা কালে কালে মুসলমানদেরকে হিংসা, প্রতিহিংসা, অহংকার, নিষ্ঠুরতা ও লোভমুক্ত আল্লাহ-প্রেমিক, উদার, মানবতাবাদী হতে সাহায্য করেছিল।
এসব তরিকা ছাড়াও আরও অনেক তরিকা আজ পর্যন্ত এদেশে ও পাক-ভারতে প্রচারিত হয়েছে।
খ্রিস্টীয় অষ্টম শতক থেকে আজ পর্যন্ত প্রচারিত সকল তরিকার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, কাদেরিয়া, চিশতিয়া, সোহরাওয়ার্দিয়া ও নকশবন্দিয়া।
গবেষকদের মতে, এই চারটিই হলো মূলত তরিকা এবং অন্যান্য তরিকাগুলো এই চার তরিকার উপ-তরিকা বিশেষ।
আলোচ্য রাহে ভান্ডার দরবারের গান রাহে ভাণ্ডার তরিকাভিত্তিক। সাধক হযরত মৌলানা ছৈয়দ আহমদ উল্লাহ্ (ক.) চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার মাইজভান্ডার গ্রামে মাইজভান্ডারী নামে একটি তরিকার প্রবর্তন করেন ঊনিশ শতকের প্রায় মাঝামাঝি।
এসময় থেকে তরিকাটি সঙ্গীতাশ্রয়ীও হয়ে উঠে এবং এ তরিকার অনেক শাখাও বিস্তার লাভ করতে থাকে।
রাহে ভান্ডার মূলত মাইজভান্ডারী তরিকার একটি শাখা, যা মৌলানা ছৈয়দ ছালেকুর রহমান শাহ্ (ক.)’র মাধ্যমে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার দক্ষিণ রাজানগর গ্রামে প্রতিষ্ঠিত হয়। মাইজভান্ডারী তরিকার সকল শাখাও এই তরিকার মতোই সঙ্গীতাশ্রয়ী ।
পাক-ভারতে অনেক তরিকা প্রচারিত হলেও একমাত্র চিশতিয়া তরিকাই সঙ্গীতাশ্রয়ী ছিল। কাদেরিয়া তরিকা থেকে মাইজভান্ডারী তরিকা উদ্ভূত হলেও তাতে চিশতিয়া তরিকার যোগ রয়েছে।
আর এ কারণেই মাইজভান্ডারী তরিকা এবং এর সকল শাখাও সঙ্গীতাশ্রয়ী হয়ে উঠে।
মাইজভান্ডারী তরিকার শাখা রাহে ভান্ডার রাজানগর গ্রামে প্রতিষ্ঠিত হলেও সঙ্গীতাশ্রয়ী তরিকা হিসেবে তার প্রচার-প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার কধুরখীল গ্রামের হযরত মৌলানা ছৈয়দ মোহাম্মদ আব্দুল মালেক শাহ্ (ক.)‘চট্টগ্রাম দরবার শরীফ’ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে।
এখানে উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম দরবারটি দরবার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পূর্বে তা রাহে ভান্ডার তরিকার প্রতিষ্ঠাতা মৌলানা ছৈয়দ ছালেকুর রহমান শাহ্ (ক.)র ‘আসন’ হিসেবে পরিচিত ছিল।
যা হোক, মৌলানা ছৈয়দ মোহাম্মদ আব্দুল মালেক শাহ্ (ক.)’র পরে তাঁর পুত্র ও খলিফা আল্লামা ছৈয়দ জাফর ছাদেক শাহ্ রাহে ভান্ডার তরিকার প্রচার–প্রসারে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন, এখনও রেখে চলেছেন।
বলতে গেলে, এই তরিকার প্রচার-প্রসারে তাঁর অবদানই সবচেয়ে বেশি। এ ক্ষেত্রে একদিকে সঙ্গীত রচয়িতা, অন্যদিকে মানবতাবাদী রূপে তিনি প্রতিভাত হন।
তিনি রাহে ভান্ডার আশেকান পরিষদ, রাহে ভান্ডার ওলামা পরিষদ, রাহে ভান্ডার তরুণ আশেকান পরিষদ, রাহে ভান্ডার ছুফি শিল্পী পরিষদ, রাহে ভান্ডার প্রকাশনা পরিষদ, রাহে ভান্ডার মাল্টিমিডিয়া নামে বিভিন্ন সংগঠন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এসব সংগঠন দ্বারা সুফিতাত্ত্বিক নানা অনুষ্ঠান ও কর্মসূচি পালন ছাড়াও রেডক্রিসেন্টের সহায়তায় রক্তদান, বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা, বিনামূল্যে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, মুক্তিযুদ্ধ-ছুফিসঙ্গীত-শিক্ষা-চিকিৎসা-গবেষণাসহ নানা বিষয়ে গুণীজন সংবর্ধনা, ইন্টারনেট প্রটোকল ব্যবহার, অডিও ভিজ্যুয়াল প্রেজেন্টেশন, ক্যালেন্ডার প্রকাশনা, জাতীয় দিবসসমূহ উদযাপন এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সেমিনার প্রভৃতি কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
গুণীজন সংবর্ধনা কার্যক্রমের ক্ষেত্রে বলা দরকার, ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সমাজবিজ্ঞানী ড. অনুপম সেন, তথ্য ও প্রযুক্তিবিদ মোস্তাফা জব্বার, মুক্তিযোদ্ধা ও প্রখ্যাত অভিনেতা রাইসুল ইসলাম আসাদ, মুক্তিযোদ্ধা এস এম মর্তুজা হোসাইন, মুক্তিযোদ্ধা মো. আবুল বশর (বোয়ালখালী), গীতিকার আব্দুল গফুর হালী, কণ্ঠশিল্পী জানে আলম, গীতিকার শাহ আলম সরকার, গীতিকার হাসান মতিউর রহমান, গীতিকার সৈয়দ মহিউদ্দিন (মহি-আল-ভান্ডারী), জাতীয় কিডনী ও ইউরোলজি হাসপাতালের বিভাগীয় প্রধান ডা. মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন, গবেষক ড. সেলিম জাহাঙ্গীর, ডা. শেখ শফিউল আজম ও কাওয়াল আহমদ নবী আমিরী প্রমুখকে এই সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে।
পূর্বে বলেছি, প্রচারিত তরিকাগুলো কালে কালে এসবের অনুসারীদের অর্থাৎ ছুফি মুসলমানদের উদার, মানবতাবাদী হতে সাহায্য করেছিল। আল্লামা ছৈয়দ জাফর ছাদেক শাহ্’র মানবতাবাদী রূপের কারণ এখানেই।
এখানে উল্লেখ্যনীয়, যেহেতু সঙ্গীত মানব–মনকে প্রশস্ত করে, সুতরাং রাহে ভাণ্ডার তরিকার সঙ্গীতাশ্রয়ী হওয়াও তাঁর মানবতাবাদী রূপের অন্যতম কারণ বটে।
দুই.
রাহে ভান্ডার তরিকার প্রচার–প্রসারে ছৈয়দ জাফর ছাদেক শাহ্ সঙ্গীত রচয়িতা হিসেবেও প্রতিভাত হন, একথা বলা হয়েছে। তাঁর গান পাঠান্তে প্রতীয়মান হয়, তা রাহে ভান্ডার তরিকার দর্শন ধারণেও হয়েছে সহায়ক।
অনেক গানে রাহে ভান্ডার তরিকা মাইজভান্ডারী তরিকার শাখা হওয়ায় ছুফি-জগতে মাইজভান্ডারী তরিকার প্রবর্তক হযরত মৌলানা ছৈয়দ আহমদ উল্লাহ্ (ক.) ও এই তরিকার আরেক মুুর্শিদ বাবা ভান্ডারী গোলামুর রহমান (ক.)’র প্রভাব ও অবস্থান চিহ্নিত করা হয়েছে।
‘মোহন বাঁশি মধুর সুরে তান ধরিল’ গানে বলা হয়েছে, ‘আহমদ উল্লাহ্ মাইজভান্ডারী জগৎ’ ভুলিয়েছেন, তিনি ‘দাসগণের ক্বেবলা কাবা’, ‘জাহেরি বাতেনির মূল, মাইজভাণ্ডারী নায়েবে রাসুল’।
মোহন বাঁশি মধুর সুরে তান ধরিল
আহমদ উল্লাহ্ মাইজভান্ডারী জগৎ ভুলাইল।হামদ আল্লাহর আহমদ উল্লাহ্,
দাসগণের ক্বেবলা কাবা
মদনী নবীর ছিফত দাসে দেখিল।
মম ঈমান মম একিন
আহমদ উল্লাহ তিরপিনের ছাকিন
দরদবন্তের ক্বলবে যেজন জজব দিল।
জাহেরি বাতেনির মূল,
মাইজভাণ্ডারী নায়েবে রাসূল
ফয়েজে এত্তেহাদী যিনি উম্মতকে দিল।
রউফ রহমান রহিম
আহমদ উল্লাহ সসীমে অসীম
ছাদেক অষ্টাঙ্গে যার কৃপাতে খোদা পাইল।
‘মোহরে নবুওতের ভেদ’ গানে উল্লেখ রয়েছে, ‘মোহরে নবুয়তের ভেদ হযরত ক্বেবলা [আহমদ উল্লাহ্] মাইজভান্ডারী’। ‘মোহনীয় ছবি মাইজভান্ডারী’ গানে বাবা ভাণ্ডারী গোলামুর রহমানকে নবীর হাকিকত প্রচারক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
মোহনীয় ছবি মাইজভাণ্ডারী মওলা আহমদ উল্লাহ্,
হাকিকত নবীর করিলেন জারী বাবা রহমান মওলা।
রাহে ভান্ডার তরিকার প্রতিষ্ঠাতা মৌলানা ছৈয়দ ছালেকুর রহমান শাহ্ (ক.) কে এক গানে ‘হযরত ক্বেবলার [আহমদ উল্লাহ্] রূপক’ অভিহিত করে বলা হয়েছে, তাঁর কাছে ‘প্রেম বাসুরী’ [প্রেমের বাঁশরি], ‘অযুদী কোরআন’ ও ‘আহাদ তরী’ রয়েছে। তাঁকে ‘পার কাণ্ডারী নওজোয়ান’ হিসেবেও সাব্যস্ত করা হয়েছে।
সখি যারে দিলাম মন প্রাণ তিনি মওলা ছালেকুর রহমান,
যার নাম শুনিলে নফছ শয়তান সদা রহে কম্পমান।
হযরত ক্বেবলার রূপক হয়ে আসিয়াছে রাজনগরে,
হাতে প্রেম বাসুরী, তাহার সাথে অযুদী কোরআন।
আহমদ উল্লাহ্র আহাদ তরী সঙ্গে নিয়ে রাজনগরী
পার করাতে ভবের পারি পার কাণ্ডারী নওজোয়ান।
ওহে দয়াল রাজনগরী ছাদেক কান্দে পায়ে পরি
খতা আতা ক্ষমা কর গফুর রহমান।
‘ছালেক নামেতে খেলিয়ে বেড়াও’ গানে দেখা যায়, ছৈয়দ ছালেকুর রহমান শাহ্ হলেন রাজানগরে ‘হযরত ক্বেবলার দুলহা’, আবার তিনিই ‘ছালেক [ছৈয়দ ছালেকুর রহমান শাহ্] নামেতে’ আহমদ উল্লাহ্ মাইজভান্ডারী।
ছালেক নামেতে খেলিয়ে বেড়াও মাইজভাণ্ডারী আহমদ উল্লাহ্,
আহমদ উল্লাহ্, আহমদ উল্লাহ্, মাইজভাণ্ডারী আহমদ উল্লাহ্।
মক্কা মদিনা তোমারিই শান দয়াল বোগদাদ আজমীর তোমারিই শান,
মাইজভাণ্ডারে তুমিই মহিয়ান ছোবহান আল্লাহ।
হযরত ক্বেবলার দুলহা সেজে রাজনগরে আসন নিয়ে
অযুদুল কোরআন প্রকাশিলে, আলহামদুলিল্লাহ।
মহিমা তোমার অসীম অপার, সর্ব কর্মে জিকির করিবার
ছাদেককে তুমি আতা করিলা অযুদে নবী মওজুদে আল্লাহ।
‘খেলিল খেলিল খেলিলরে আমার রাহে ভান্ডারী’ গানে বলা হয়েছে, ছৈয়দ ছালেকুর রহমান শাহ্ খেলেছেন ‘বহুরঙ্গে’। একই গানে বলা হয়েছে, ‘একাকিত্বে একেশ্বরে’র মধ্যে প্রেমভাব সৃষ্টি হলে তিনি মোস্তফা, আদম-হাওয়া, সকল নবী-রাসূল, কাদেরি [আবদুল কাদের জিলানি], আহমদ উল্লাহ্ ও ছালেক শাহ্ [ছৈয়দ ছালেকুর রহমান শাহ্] রঙে খেলেছেন।
খেলিল খেলিল খেলিলরে আমার রাহে ভাণ্ডারী
বহুরঙ্গে খেলিলরে।
একাকিত্বে একেশ্বরে প্রেমভাব সৃষ্টি হলে
নূরে খোদা মোস্তফা রঙ্গে খেলিলরে।
আপন রূপের জ্যোতি দেখে প্রকাশিতে সাধ জাগিলে
ভবে আদম হাওয়া রূপে আসিলরে।
নিজ রূপ প্রকাশনে আম্বিয়া রাছুল ছলে
শেষকালে মুহাম্মদ রাছুল হইলেরে।
নবুওত খতম করিল বেলায়ত রূপ দিল
কাদেরি নামে মুর্দা জিন্দা করিলরে।
খাতেমুল অলদ শুনি আহমদ উল্লাহ মাইজভাণ্ডারী
রাজনগরে ছালেক শাহা বনিলরে।
জাফর ছাদেক অধম ছেলে তোমার ছলে কলা কৌশলে
তোমায় চিনার বোধ শক্তি হারাইলরে।
‘আমার মন বাগানের গোলাপ গো’ গানে বলা হয়েছে, ছৈয়দ ছালেকুর রহমান শাহ্ হলেন মাইজভাণ্ডারী তরিকার দর্শনশাস্ত্র।
মঞ্জিল খোদার নবীর দিদার দেখাইতে এপার ওপার
দর্শনশাস্ত্র মাইজভাণ্ডারীর রাহে ভাণ্ডারী রাজে দুলা।
চট্টগ্রাম দরবার শরীফের প্রতিষ্ঠাতা হযরত মৌলানা ছৈয়দ মোহাম্মদ আব্দুল মালেক শাহ্ (ক.) সম্পর্কে আল্লামা ছৈয়দ জাফর ছাদেক শাহ্ তাঁর বিভিন্ন গানে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কথা বয়ান করেছেন। এক গানে তিনি মালেক শাহকে ‘হাফিজ হাকিম’ ও ‘সর্বগুণে গুণী’ উল্লেখ করে তাঁর কদমে নিজের সমর্পিত হবার চিত্র অঙ্কন করেছেন। এই চিত্র মালেক শাহ ছৈয়দ জাফর ছাদেক শাহ্’র স্বীয় মুর্শিদ হওয়ার কারণে।
মুরশিদ অ-পরাণের মওলারে দাসেরে চরণে রাখবানি,
হাফিজ হাকিম তুমি সর্বগুণে গুণী
মম আর্জি শিরে রাখি চরণ দু’খানিরে।
মওলা তোমার চরণ শিরে ধরি ঘুরি দিন যামিনী
দম্ভ করে ঝম্প দিয়ে হয়ে আনন্দিনি রে।
জাহের বাতেনে তুমি আউয়াল আখেরে
ফা’য়নামা তাওয়াল্লু সম পাই যেন সামনেরে।
রহিব ক্রীতদাস হইয়া আজীবনের তরে
ছাড়িব না রাঙা চরণ যদিও যমে ধরি টানেরে।
দেখিতে পারি যদি ঐ চরণ কমল জ্যোতি
কমবখতের এই হৃদ-মাঝে রাখি সামালিরে।
তিন.
রাহে ভান্ডার তরিকার প্রচার-প্রসারে ছৈয়দ জাফর ছাদেক শাহ্ কেবল নিজেই গান রচনা করেছেন তা নয়, আরও অনেককেও সঙ্গীত রচনায় প্রেরণা জুগিয়েছেন। এ–ক্ষেত্রে মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান কাওয়াল, মোহাম্মদ সোলেমান আলী হায়দার ও সরোয়ার আলম মিডু প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য। ছৈয়দ জাফর ছাদেক শাহ্ প্রেরণা জুগিয়ে তাঁদেরকে দিয়ে একদিকে গান রচনা করিয়েছেন, অন্যদিকে তাঁদের গানের গ্রন্থের প্রকাশকের ভূমিকায়ও অবতীর্ণ হয়েছেন। তাঁর প্রকাশিত মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান কাওয়ালের একটি গ্রন্থের নাম ‘প্রেম উচ্ছ্বাস’ (২০০২), মোহাম্মদ সোলেমান আলী হায়দারের একটি গ্রন্থের নাম ‘দিওয়ানে সোলেমান’ (২০০২)। গ্রন্থদ্বয়ের অধিকাংশ গান ছৈয়দ ছালেকুর রহমান শাহ্ ও ছৈয়দ মোহাম্মদ আবদুল মালেক শাহ্–র শানে। রাহে ভাণ্ডার তথা মাইজভাণ্ডারী তরিকাভিত্তিক গানে একটি বড়ো ব্যাপার হলো গুরুপ্রশস্তি। তা তরিকাদ্বয়ের দর্শনেরও অঙ্গ। ‘দিওয়ানে সোলেমান’ থেকে একটি গানের অংশবিশেষ:
‘বেলায়েত জারি করি ছালেক বাবা মাওলানা
বসে রইল পাক আসনে নজরে করে দিওয়ানা।
কেমন ছুরত বদন, দেখি আজি নিজের নয়ন,
মত্ত আজি প্রেমিক জনে করে নাচনা।
‘প্রেম উচ্ছ্বাস’ থেকে একটি গানের অংশবিশেষ:
সময় থাকতে উঠ আশেক মালেক বাবার প্রেম–তরীতে,
প্রেম ভক্তি বিশ্বাস দিয়ে পার হব পলকেতে।
কিস্তির মেশিন হযরত কেবলা, মেশিন চালক ছালক মাওলা.
ধরেছে হাল মালেক মওলা, আহাদ ঘাটে নিয়ে যেতে।
আমাদের বিশ্বাস, রাহে ভান্ডার তরিকার প্রচার-প্রসারে অদূরে ভবিষ্যতে আরও অনেক গান রচিত হবে এবং এই তরিকার দরবারগুলো অগণিত গানের ভান্ডারে পরিণত হয়ে বাংলা লোকসাহিত্যকে সমৃদ্ধ করবে। বরাত: চট্টগ্রাম দরবার শরীফের বর্তমান সাজ্জাদানশীন, আল্লামা ছৈয়দ জাফর ছাদেক শাহ্’র সাথে আলোচনা ও তাঁর কাছ থেকে উপাদান সংগ্রহ।
(রাহে ভান্ডার দরবারের গান নিয়ে কবি ও লোকগবেষক শামসুল আরেফীনের বিশেষ গবেষণামূলক লেখা)