নিজস্ব প্রতিবেদক ;
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ড.শিরীণ আখতার ম্যাম এর স্বামী ৭১’র রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর (অবঃ) লতিফুল আলম চৌধুরী ২৮ জুলাই ২০২০ দিবাগত রাত ১.২০ মিনিটে চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ফুসফুসের সংক্রমণজনিত ও বার্ধক্যজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না…….রাজিউন)। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭০ বছর। তিনি স্ত্রী, ১ ছেলে, ১ মেয়ে, নাতি- নাতনী ও আত্মীয়-স্বজনসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। ২৯ জুলাই বেলা ১১ টায় চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্টে প্রথম নামাজে জানাযা এবং বাদ জোহর হযরত গরীব উল্লাহ শাহ (রঃ) মাজার জামে মসজিদ প্রাঙ্গনে দ্বিতীয় নামাজে জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। বাদ জোহর হযরত গরীব উল্লাহ শাহ (রঃ) মাজার জামে মসজিদ প্রাঙ্গনে নামাজে জানাজা শেষে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও পুলিশের দুটি পৃথক চৌকস দল তাকে গার্ড অব অনার প্রদান করে। এসময় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের পক্ষে, চট্টগ্রামের মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে ও পুলিশ বাহিনীর নেতৃত্বে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় গার্ড অব অনার ও ফুল দিয়ে তাঁকে শ্রদ্ধা জানান। পরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় গার্ড অব অর্নার ও ফুল দিয়ে তাঁকে শ্রদ্ধা জানানো শেষে রাষ্টীয় মর্যাদায় তাঁকে হযরত গরীব উল্লাহ শাহ (রঃ) মাজারস্থ কবরস্থানে দাফন করা হয়।
প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর (অবঃ) লতিফুল আলম চৌধুরী চট্টগ্রাম শহরের ২৫ নং রামপুর ওয়ার্ড নিবাসী মৃত আলহাজ্ব মোহাম্মদ মোস্তাফা চৌধুরীর ছেলে। ব্যক্তিজীবনে এ বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন নির্লোভ, নিরঅহংকারী, সদালাপী, বন্ধুবৎসল, অমায়িক সর্বোপরি একজন নিখাদ দেশপ্রেমিক। বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী এ সেনা কর্মকর্তা ১৯৭১ সালে দেশকে হানাদার মুক্ত করতে মৃত্যুঞ্জয়ী মহানায়ক, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহবানে মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে জীবন বাজি রেখে যে বীর মুক্তিযোদ্ধারা স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন, তাদের প্রতি সমগ্র জাতি আজীবন কৃতজ্ঞ। দেশটাকে মায়ের মত পবিত্র মনে করে লাখ লাখ জনতার মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়া। যেকোনো মুহূর্তে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করার সাহস, লোভ-লালসা ভুলে, অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হয়ে এমনকি পরিবার পরিজনের মায়া ত্যাগ করে যুদ্ধে যাওয়া। বজ্র কঠিন শপথে নয় মাস রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া লাখো বীর- তাদের পরিচয় তারা বীর বাঙ্গালি, তারা বীর মুক্তিযোদ্ধা। সর্বকালের, সর্বযুগের সূর্য সন্তান এরা। দেশ-জাতিকে রক্ষা করতে এ সেনা কর্মকর্তা যে ত্যাগ স্বীকার করে মুক্তিসংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে দেশকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন জাতি তা চিরদিন কৃতজ্ঞ চিত্তে স্মরণ রাখবে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড.শিরীণ আখতার মহোদয় এক বিবৃতিতে তাঁর প্রয়াত স্বামী মেজর (অবঃ) লতিফুল আলম চৌধুরীর বিদেহী আত্মার মাগফেরাতের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারসহ সকল শুভানুধ্যায়ীদের কাছে দোয়া কামনা করেছেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর (অবঃ) লতিফুল আলম চৌধুরীর মৃত্যুতে চবি রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর এস এম মনিরুল হাসান চবি প্রশাসনের পক্ষ হতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। সম্মানিত রেজিস্ট্রার, শিক্ষক সমিতি, অফিসার সমিতি, কর্মচারী সমিতি এবং কর্মচারী ইউনিয়ন মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং মরহুমের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। চবি প্রশাসনের পক্ষ থেকে সম্মানিত রেজিস্ট্রার, চবি শিক্ষক সমিতি, হলসমূহের প্রভোস্টবৃন্দ, প্রক্টরিয়্যাল বডির সদস্যবৃন্দ, উপাচার্য দপ্তর এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এ বীর মুক্তিযোদ্ধার কবরে পুস্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, সহ-সভাপতি নইম উদ্দিন চৌধুরী, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মাননীয় মেয়র আলহাজ আ.জ.ম নাছির উদ্দিন, বীর মুক্তিযোদ্ধাবৃন্দ, জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, চবি সিন্ডিকেট সদস্যবৃন্দ, সিনেট সদস্যবৃন্দ, এলামনাই এসোসিয়েশনের সদস্যবৃন্দ, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অফিস প্রধানবৃন্দ, সাবেক ও বর্তমান শিক্ষারথীবৃন্দ, বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সর্বস্তরের সদস্যবৃন্দসহ বিশেষ করে শিক্ষক সমিতি, অফিসার সমিতি, কর্মচারী সমিতি এবং কর্মচারী ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দ, বাংলাদেশ ছাত্রলীগসহ অন্যান্য প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক ও বর্তমান নেতৃবৃন্দ, তাঁর দীর্ঘদিনের প্রতিবেশী, শুভানুধ্যায়ী ও আত্মীয়স্বজনরা শেষ শ্রদ্ধা ও নামাজে জানাজায় অংশ নেন।
প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর (অবঃ) লতিফুল আলম চৌধুরী দলমত ও জাতিধর্ম নির্বিশেষে গণমানুষের সেবা করে গেছেন, এটাই ছিল তার আদর্শ।