রণজিৎ রক্ষিত শুধু একটি নাম নয়, একটি নিরবচ্ছিন্ন শিল্পের অনন্য প্রতিষ্ঠান। সর্বমহলে জনপ্রিয় এ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব গত বছরের ৩০ অক্টোবর পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন। আজ বুধবার তার প্রথম প্রয়াণ দিবস।
বরেণ্য এ ব্যক্তিত্বকে স্মরণে বোধন দুইদিনের স্মরণানুষ্ঠান আয়োজন করেছে। মঙলবার (২৯ অক্টোবর) নগরের থিয়েটার ইন্সটিটিউট মিলনায়তনে কাকুর ডায়েরি থেকে আবৃত্তি ও কবিতার বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
সৌহার্দ্যের সম্মিলনের এ মানুষটি বোধন আবৃত্তি পরিষদ চট্টগ্রাম এর রূপকার, প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক। তিনি ছিলেন বোধন আবৃত্তি স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা উপাধ্যক্ষ ও আমৃত্যু অধ্যক্ষ।
বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য, আবৃত্তিশিল্পী ও প্রশিক্ষক ড. ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়, কবি ও সাংবাদিক আবুল মোমেন, সরকারি চারুকলা কলেজ, চট্টগ্রাম এর সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর রীতা দত্ত, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড এর প্রধান প্রকৌশলী প্রবীর সেন সহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন ও সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
বোধন আবৃত্তি পরিষদের সভাপতি সোহেল আনোয়ারের সঞ্চালনায় মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন কবি আনন্দমোহন রক্ষিত ও বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক রাশেদ হাসান।
কথামালা পর্বে ড. ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ১৯৮৭ সাল থেকে বোধনের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছি। তখন চট্টগ্রামের মুসলিম হলের সম্মুখে স্বৈরাচারবিরোধী অনুষ্ঠানে তাকে আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি। রণজিৎ দা বয়সে বড় হলেও সবসময় আমাকে বড় পরিসরে দেখতে চাইতেন। তিনি বোধনকে প্রাণ দিয়ে ভালোবাসতেন। মানুষ হিসেবে বিনয়ী তার সান্নিধ্যই যে অনন্য। তার বিকল্প তো আমি কাউকে দেখি নাই। তিনি এ সংস্কৃতি অঙ্গনকে আরও কিছু দিতে পারতেন।
কবি আবুল মোমেন বলেন, আমাদের ছাত্রজীবনের নবীনবরণ অনুষ্ঠানে সবার মধ্যে ভালো করার ভেতরকার প্রতিযোগিতা চলতো। তখন আবৃত্তি নিয়ে তেমন আলোচনা হতো না। রণজিৎ দা একটি আবৃত্তি করেন। তাকে আমি সেই আগাগোড়া মানুষ হিসেবে দেখেছি। আজকাল মানুষগুলোকে অনেক চালাক-চতুরভাবে দেখছি। এ চতুর মানুষগুলো সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব করে। কিন্তু রণজিৎ দা’র মতো সরলমনা মানুষগুলো ভেতরে ভেতরে কষ্ট পেতেন। তিনি বোধনকে আবৃত্তিতে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছেন।
এ পর্বে বক্তব্য দেন বোধন আবৃত্তি পরিষদ চট্টগ্রাম সাধারণ সম্পাদক এস এম আবদুল আজিজ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বোধন আবৃত্তি পরিষদ চট্টগ্রাম এর সহ-সভাপতি সুবর্ণা চৌধুরী।
কাকুর ডায়েরি থেকে একক আবৃত্তি পরিবেশনায় অংশ নেন আবৃত্তিশিল্পী সঞ্জীব বড়ুয়া, শুভ্রা বিশ্বাস, রাশেদ হাসান, রেখা নাজনীন, কংকন দাশ, নিশাত হাসিনা শিরিন, দেবাশীষ রুদ্র, হাসান জাহাঙ্গীর, সুমন বিশ্বাস, মুবিদুর রহমান সুজাত, সেলিম রেজা সাগর, লুবাবা ফেরদৌসী সায়কা, আল ইমরান, এহতেশামুল হক, উমেসিং মারমা, মেজবাহ চৌধুরী ও নাহিদ নেওয়াজ। এছাড়া বোধনের আবৃত্তিশিল্পী ইসমাইল চৌধূরী সোহেল, সঞ্জয় পাল ও মৃন্ময় বিশ্বাস। বৃন্দ আবৃত্তি করেন প্রমা আবৃত্তি সংগঠনের শিশু শিল্পীরা।